টানা ৯দিনে বানের পানিতে ক্ষত-বিক্ষত কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া। পাহাড়ি ঢল ও জলোচ্ছ¡াসের তোড়ে দু’উপজেলায় ৫০ হাজার ৪০টি বসতঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। রবিবার ভোররাত থেকে বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে পানি। যেখানেই পানি কমছে সেখানেই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। সড়ক-বাঁধ কোথাও ভেঙ্গেছে আবার কোথাও খানা-খন্দক হয়েছে। একেবারেই মিশে গেছে কয়েকশত মাটির রাস্তা। এমনকি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়াস্থ ৩৯ কিলোমিটার সড়কের সিংহভাগ স্থানে ছোট-বড় গর্ত হয়ে যান চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম বলেন, রেকর্ড সৃষ্টি করা প্লাবনে বসতঘর বিধ্বস্তেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এখনও বেশীরভাগ এলাকা পানির নিচে থাকায় ক্ষতির বিশদ বিবরণ দেয়া যাচ্ছে না। সরজমিন ঘুরে প্রাথমিক হিসাবে পাওয়া গেছে চকরিয়ায় সম্পূর্ণ ঘর-বাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫টি, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫ শত ৪০টি। পানি শুকিয়ে গেলে পুরো হিসাব দেয়া যাবে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান বলেন, এই উপজেলা এখনও পানিতে নিমজ্জিত। ২আগস্ট রবিবার কিছুটা বন্যার উন্নতি হচ্ছিল। প্রাথমিক হিসাবে পেকুয়া ৭ ইউনিয়নে সম্পূর্ণ ৩ হাজার ও আংশিক ৭ হাজার ঘর-বাড়ী বিধ্বস্ত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
চকরিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহাসান উল্লাহ বলেন, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নে বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ঘেষা ইউনিয়ন থেকে পানি কমতে শুরু করার পর দেখা যাচ্ছে কাঁচা-রাস্তা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। ব্রিক সলিন ও পাকা সড়ক কোথাও ভেঙ্গেছে আবার সিংহভাগ স্থানে ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। পুরো উপজেলা থেকে পানি নামার পর বলা যাবে ক্ষতির পরিমাণ।
পেকুয়া পিআইও অফিস সহকারী ওমর আলী বলেন, এই উপজেলায় কোথায় কি ক্ষতি হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। এখনও (রবিবার বিকাল পর্যন্ত) উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনেই হাঁটুর উপরে ঢলের পানি রয়েছে। পানি নামার পর বিভিন্ন দপ্তর মাঠ পর্যায়ে হিসাব করে রিপোর্ট জমা দিলে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।
দু’উপজেলার কৃষি অফিস জানায়, টানা ৯দিন বীজতলা পানির নিচে রয়েছে। কখন শুকাবে এখনো বলা যাচ্ছে না। অত্যাধিক পলি পড়ায় বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দু’উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি কমায় উজানের ইউনিয়ন সুরাজপুর-মানিকপুর ও কাকারার ঘর-বাড়ী থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। এ দুটি ইউনিয়নের প্রতিটি সড়কেই ভেঙ্গে গেছে। মাটির রাস্তা মিশে গেছে আবাদী জমির সাথে। প্রপার কাকরায় গাইড ওয়াল পুরোপুরি মেরামত না হওয়ায় নদীর তীর থেকে ঢলের তোড়ে সরে গেছে ব্লক। ফলে পানি নামার সাথে সাথে মাতামুহুরী নদীর কাকারা ও সুরাজপুর-মানিপুর অংশে ভাঙ্গ শুরু হয়েছে। এতে বানের পানি কমলেও উজানের দুটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে ভর করেছে নদী ভাঙ্গন আতংক। এছাড়া চিরিংগা-বদরখালী-মহেশখালী, জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর, চিরিংগা-কোণাখালী, হারবাং-বারবাকিয়া, বরইতলী-মগনামা সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীন যেসব সড়ক থেকে পানি নেমেচে সেখানেই খানা-খন্দক ও ভেঙ্গে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। মহাসড়েকর জিদ্দাবাজার ও মাতামুহুরী ব্রীজের উপর মাটি মিশ্রিত বালি দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের গর্ত ঢাকতে দেখা গেছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, অতীতে বর্ষায় চার দফা এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়নি চকরিয়ায়। তাই এবার অতিরিক্ত ক্ষতি হয়েছে। ঢলে ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বসত ঘর বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলোকে নগদ সাহায্যের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়ায় অপূরণীয় ক্ষতির বিষয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জানিয়েছি সরাসরি সাক্ষাত করে।
You must be logged in to post a comment.