মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :
অতিবৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় পার্বত্য জেলা বান্দবানের লামা উপজেলা শহর এখন পানির নিচে। লামা উপজেলার বিগত দিনের সবচেয়ে বড় বন্যার রেকর্ড ১৯৮৭ ও ১৯৯৭ কে হার মানিয়েছে এবারের বন্যার পানির স্তর, এমনটা দাবী করছে স্থানীয়রা।
গত ৫ দিনের টানা বৃষ্টিতে আজ সোমবার সকাল থেকে বান্দরবানের লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গা পানির নিচে ও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে শতাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ রফিক বলেন, চেয়ারম্যান পাড়া, নারকাটা ঝিরি ও কাটা পাহাড় এলাকায় ১৫টির অধিক ঘরবাড়ি পাহাড়ধসে ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে পানিবন্দী ও পাহাড়ধসের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ভিড় জমিয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে লামা-আলীকদম সড়কে পানিতে ডুবে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে লামা-চকরিয়া সড়কের মিরিঞ্জা পাহাড় এলাকায় বেশকিছু স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পড়ে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে যোগাযোগ সচল করেছে।
গত টানা দুইদিনের পানিতে বন্দী থাকা লোকজন খাবার ও সুপেয় পানিতে কষ্ট পাচ্ছে। লামা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা নয়াপাড়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও শামসুল ইসলাম বলেন, ভানবাসি মানুষের তুলনায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা খুবই নগন্য।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার লামা বাজার, নয়াপাড়া, টিএন্ডটি পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, পাহাড় পাড়া, মধুঝিরি, লাইনঝিরি, উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, শিলেরতুয়া, কলিঙ্গাবিল, লামামুখ, রাজবাড়ী এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লামা-আলীকদম সড়কের লাইনঝিরি, ছাগলখাইয়া, শিলেরতুয়া, কেরারঝিরি, দরদরাঝিরি এলাকায় রাস্তা পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে মাতামুহুরী নদী সহ লামার সবকয়টি নদী খালে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, যে কোন দুর্যোগে সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও লামা থানা কাজ করছে। আহতদের লামা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। উপজেলার অধিকাংশ সরকারি অফিস এখন পানির নিচে।
ইতিমধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে মাইকিং করা হয়েছে।
লামা উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের ৫৫টি প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। শহরের কাছাকাছি ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সাধ্যমতে আমরা ত্রাণ ও রান্না করা খাবার দেয়ার চেষ্টা করছি।
লামা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফসলের মাঠ, সবজি খেত এখন পানির নিচে। কৃষকের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ৮০ শতাংশ আবাদি ফসলের জমি পানিতে ডুবে আছে।
এদিকে লামা পৌর শহরে চেয়ারম্যান পাড়া ও নয়া পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের বড় মুসলিমপাড়া এবং সরই আন্ধারি এলাকায় কয়েকস্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার সকাল থেকে একটানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টি বন্ধ হচ্ছেনা। লামা বাজারের বড় আড়ত ও মুদি ব্যবসায়ীরা দোকানের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে রাখা স্থানেও বন্যার পানি হানা দিয়েছে।
লামা বাজারের ব্যবসায়ীক সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কয়েককোটি টাকা। এছাড়া রূপসীপাড়া, লামা সদর, গজালিয়া ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। আভ্যন্তরিন সকল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
লামা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বাদশা জানান, পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর শহরের অধিকাংশ জায়গা এখন পানির নিচে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমা পারুল বলেন, সকাল থেকে আমরা নৌকায় করে শুকনা খাবার, খাওয়ার পানি ও রান্না করা খাবার আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে পৌঁছে দিচ্ছি। পার্বত্য মন্ত্রী সবসময় বন্যার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন।
You must be logged in to post a comment.