এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও :
দেশব্যাপী ঘটছে একের পর শিশু নির্যাতন। প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও হচ্ছে শিশু নির্যাতন। এসব শিশু নির্যাতনের ঘটনা দৈনিক পত্রিকা কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় উঠে আসলেও অনেক কিছু প্রকাশ হচ্ছে না। গেল মাসে সিলেটের শিশু রাজন হত্যার দৃশ্য দেখে দেশজুড়ে অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। একজন মানুষ যে কতটা হিংস্র, কতটা বিবেকহীন, কতটা মনুষ্যত্বহীন, কতটা পাষাণ হতে পারে তা রাজন হত্যার দৃশ্যই বলে দেয়। তেমনি শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওয়ের এক তরুণ ব্যবসায়ী আরিফ উল্লাহর অনন্য সংগ্রাম চলছে দিনের পর দিন।
এদিকে ২৪ আগষ্ট ঈদগাঁও বাজারস্থ কবিরাজ সিটি সেন্টারে একটি কেক চুরির অপরাধে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার সাত বছরের ফাহিম নামের এক শিশুকে নির্যাতনকারীর হাত থেকে রক্ষা করল।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যার দিকে ঈদগাঁও বাজাস্থ কৃষি ব্যাংকের সামনে চটপটির দোকানে আট বছর বয়সী ফারুক নামের এক শিশুকে মারধর করা হয়। কারণ উক্ত চটপটির দোকানে পানি খেতে গিয়ে একটি গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। যার ফলে ওই দোকানদার শিশু ফারুককে ব্যাপক মারধর পূর্বক রক্তাক্ত করেছে। এসময় পাশের দোকানদার তরুণ ব্যবসায়ী আরিফ ছুটে এসে নির্যাতনের শিকার ফারুককে উদ্ধার করে এবং নিজ অর্থে চিকিত্সা সেবা দিয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের চেপ্টামুরা এলাকায় ফারুকের বাড়ী বলে জানা যায়। তার বাবা মায়ের মৃত্যুর পর থেকে সে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ফেরিওয়ালার কাজ করে যে টাকা আয় করে তা দিয়ে কোন রকম চলে।
এদিকে এতিম শিশু ফারুকের অসহায়ত্বের কথা শোনে তরুণ ব্যবসায়ী আরিফ স্থানীয় এক পত্রিকায় এক এতিম শিশু ফারুকের সংগ্রামী জীবন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিখে জেলাবাসীকে জানান দেয়। এ প্রতিবেদনে আরিফ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। আবার ঈদগাঁওয়ের ফুটপাত ব্যবসায়ী কুমিল্লার আলামিন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে তারেক নামের পিতা হারানো এক শিশু তিনবেলা ভাতের বিনিময়ে চাকরি করেছিল। ২০১২ সালের ১০ মে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশে ফার্নিচার দোকানদার মোক্তার মিস্ত্রির ছেলে রমজান শিশু তারেককে কাপড় বিক্রি না করে রেখে না দেওয়ার অপরাধে ক্ষিপ্ত হয়ে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে শিশুটিকে আছড়ে ফেলে মুখমন্ডল দিয়ে রক্ত বের করে। পাশের দোকানদার আরিফ শিশুটির নির্মম নির্যাতনের চিত্র দেখে আর নিজের বিবেককে ধরে রাখতে পারলেন না। ছুটে গিয়ে শিশু নির্যাতনকারী রমজানকে পাল্টা আঘাত করে রক্তাক্ত তারেককে হাসপাতালে নিজ খরচে প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সেবা প্রদান করানো হয়। পরবর্তীতে আরিফ শিশু তারেকের উপর নির্যাতনকারী রমজানের কাছ থেকে মুছলেকা নিয়েছে এই মর্মে যে, আর কোন শিশুর উপর যেন নির্যাতন না করে। সে সময়ে তরুণ ব্যবসায়ী আরিফ উল্লাহ তাঁর সাহসিকতা ও মানবতার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিক রেজাউল করিম আজকের কক্সবাজারের এ প্রতিনিধিকে শিশু নির্যাতন রোধে ঈদগাঁওর প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক আরিফ উল্লাহর ভ‚মিকার বরাবরই প্রশংসনীয়। তিনি তাঁর শিশু নির্যাতন বিরোধী ভূমিকা ও অবস্থানের মাধ্যমে অসচেতন সমাজকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন সমাজের প্রত্যেকে যেন শিশুর প্রতি সহনশীল ও সহমর্মি হন।
You must log in to post a comment.