পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো লেখা না লিখতে ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কারও লেখা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো হলে সে ক্ষেত্রে পুলিশকে তা জানানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর রোববার দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইজিপি।
তিন ব্লগার খুন হওয়ার পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে থানায় জিডি করতে গেলেও কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তা না নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে ফেইসবুকে লিখে গিয়েছিলেন নিলয়। প্রাথমিক তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি দাবি করে আইজিপি বলেন, “তবে এখনও তদন্ত চলছে। যদি তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তাহলে সেই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।”
নিলয়ের আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে টিএসসির সামনে খুন হন অভিজিত্ রায়। এর কয়েক মাসের মধ্যে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় তেজগাঁওয়ে তার বাসার কাছে। তারপর সিলেটে সড়কে খুন করা হয় অনন্ত বিজয় দাশকে।
তিনটি হত্যার ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও প্রকৃত খুনিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে এসব মামলায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাবু নিহতের ঘটনাস্থল থেকে জনতা দু’জনকে ধরে পুলিশে দেয়।
এসব হত্যা নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে আইজিপি বলেন, “এখানে আমার একটা বক্তব্য আছে। মুক্তমনা, তারা তো থাকবে। তাদের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ আছে। তবে আমাদের যে জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা অপরাধ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারীর সাজা ১৪ বছর। তবে কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে তাকে হত্যা করতে হবে, তা মানা যায় না।”
“কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে, তার বিরুদ্ধে মামলা হলে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।” বলেও জানান শহীদুল হক।
“পাশাপাশি যারা মুক্তমনা লেখেন, তাদের কাছে এবং আপনারা যারা আছে তাদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি। এমন কিছু লেখা উচিত নয়, যেখানে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত আনে।” আইজিপি বলেন, “নিলয়ের হত্যা কোনোভাবে কাম্য নয়। হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা হবে।”
নিলয়সহ আগের ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে বার্তা এসেছে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
জঙ্গি দমনে পুলিশ ৮০ ভাগ সফল দাবি করে আইজিপি বলেন, জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত ৬৩২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৬টিতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। দুই হাজার ৫৪৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শিশু হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আলোচিত শিশু হত্যার জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেফতারের পুলিশ সক্রিয় বলে দাবি করেন আইজিপি। তিনি জানান, সিলেটর সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনায় ১২ জন, খুলনার রাকিব হাওলাদার হত্যার ঘটনায় তিনজন ও বরগুনার রবিউল হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাজন হত্যার আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক। “যদি তাকে (কামরুল) আনতে দেরিও হয়। তাহলেও চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দেয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরির্দশক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
নতুন বার্তা ডট কম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.