কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ’র সম্মেলন নিয়ে আবার ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত ৩১ জানুয়ারি সম্মেলন হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। খোদ জেলা আওয়ামীলীগ’র সভাপতি। সাধারণ সম্পাদকও বিষয়টির স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্যে মিলছে পরস্পর বিরোধীতা। যদিও সম্মেলন সংক্রান্ত বিষয়ে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) তাঁরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে মুঠোফোনে অ্যাডভোকেট এ.কে আহমদ হোছাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি। জেলা আওয়ামীলীগ’র সম্মেলন কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি বললেন, সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ সংক্রান্ত কোন তথ্যও তাঁর কাছে নেই।
এদিকে সম্মেলন নয় ঢাকা থেকেই ঘোষণা করা হচ্ছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি বিতর্ক এবং সংঘাত এড়াতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কমিটি ঘোষণা দেবেন। এমন খবর প্রচারিত হলে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীমুখী হতে থাকেন জেলার নেতারা। শীর্ষ থেকে মাঝারিমানের প্রায় সব নেতাই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন ঢাকায়। এই তালিকায় অ্যাডভোকেট এ.কে আহমদ হোছাইন, সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর মতো শীর্ষ নেতারা যেমন রয়েছেন তেমনি জেলা ও উপজেলা কমিটির বেশ কয়েকজন মাঝারি মানের নেতাও রয়েছেন। অনেকেই তদবির শুরু করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের বাসায়। যে কোন উপায়ে সম্ভাব্য কমিটিতে স্থান করে নিতেই তাঁদের এই তোড়জোড়। তবে, জেলা আওয়ামীলীগ’র শীর্ষ নেতাদের শনিবার পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল একটি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। তবে শনিবার পর্যন্তও এই কাজে কেউ সফল হননি।
জানা যায়, ২০ জানুয়ারি জেলা আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কাউন্সিলর তালিকাকে কেন্দ্র করেছিল এই বিবাদ। বিষয়টি জেলা নেতারা সামাল দিতে না পারার কারণে এই ভাবনা আরো বেড়ে যায়। জেলা নেতারাও এর সুরাহা করতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন। ফলে দু’পক্ষের বক্তব্য শুনেই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা। ২৩ জানুয়ারি শনিবার পর্যন্ত সম্ভাব্য সম্মেলনে সভাপতি পদের প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম শুনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে আহমদ হোছাইন, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে কিছুদিন ধরে কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগ’র সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা মাশেদুল হক রাশেদ, রাশেদুল ইসলাম এবং রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সর্বশেষ কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে এ.কে.এম মোজাম্মেল হক সভাপতি এবং সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ২৭ মে আকস্মিকভাবে এ.কে.এম মোজাম্মেল হক মারা গেলে সভাপতি পদটি শূন্য হয়। পরবর্তীতে প্রথমে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং এরপর থেকে অ্যাডভোকেট এ.কে আহমদ হোছাইন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘ এক দশক পর গত দুই বছর আগে থেকে আলোচনায় স্থান পায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। এরি মধ্যে ১২ বারের অধিক সম্মেলনের তারিখ ধার্য্য করা হলেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। শুধু চলতি মাসেই ৩ বার পরিবর্তন করা হয় জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ। প্রথমে ২৮ এরপর ৩০ এবং সেটি বদলে করা হয় ৩১ জানুয়ারি। এখন সেই তারিখেও সম্মেলন হবে কিনা তা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
You must be logged in to post a comment.