এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :
১৯৯৬ সাল থেকে টেলিভিশনের পর্দায় ক্রিকেট খেলা দেখে কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওর তরুণ-যুবসমাজ ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল। জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথমেই ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে সর্ব প্রথম আনুষ্টানিক ক্রিকেটের যাত্রা হয় এই খেলার মাঠ থেকে। ক্রিকেট পাগল ব্যক্তিত্ব ও ধারাভাষ্যকার যুবলীগ নেতা সাকলাইন মোস্তাকসহ আরো কয়েকজনের নেতৃত্বে আয়োজন করে বিজয় দিবস ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট। পরবর্তীতে ঈদগাঁওর মেধাবী ক্রিকেটারেরা কক্সবাজার, চকরিয়া, রামু সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রিকেট টুর্ণামেন্টে খেলতে যান।
অন্যদিকে-ক্রিকেট ভক্তদের জন্য মাঠ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাদের আন্তরিকতা ছিল-ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সলিম উল্লাহ, মাষ্টার মোজাম্মেল হক ফরাজী, প্রয়াত গোপাল শর্মা, ক্রীড়াবিদ আব্দুল মজিদ খাঁন সহ আরও অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অনুপ্রানিত করতেন। এ ছাড়াও এই ক্রিকেট যাত্রায় অনেক প্রতিভা সম্পন্ন ক্রিকেটার উঠে এসেছিলেন এ মাঠ থেকে। কিন্তু যথাযর্থ পরিচর্চার অভাবে বিভাগীয়- জাতীয় পর্যায়ে পৌছতে পারেনি। কালক্রমে অকালে ঝড়ে গেছে বহু মেধাবী ক্রিকেটার।
জেলার গর্ব মুমিনুল হক সৌরভ যিনি আজকে জাতীয় ক্রিকেটদলের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোডন সৃষ্টি করে জেলার সম্মান বয়ে আনছে দিন দিন। তিনিও কিন্তু ঈদগাঁওর সেই ঐতিহ্যবাহী মাঠে খেলেছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঈদগাঁওতে বহু প্রতিভাবান ক্রিকেটার থাকা সত্তেও বিভাগীয় কিংবা জাতীয় পর্যায়ে ঈদগাঁওর ক্রিকেটারদের খেলার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি মাঠের প্রতিভা মাঠেই শেষ। বিগত দেড় যুগেরও বেশি সময় পার করলো ঈদগাঁওর ক্রিকেট। অনায়াসে বিলুপ্তির পথে এই ক্রিকেট। তবে বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কিশোর- যুবরা ফসলী জমিতে ছোট ছোট ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট আয়োজন করে পূর্বের ঐতিহ্যকে কোন মতেই ধারণ করে চলছে।
অপরদিকে ঈদগাঁও এলাকার মেধাবী ক্রিকেটারেরা রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে নিজেদেরকে ক্রিকেট থেকে আড়াল করে রেখেছে অনেকে। অবহেলিত ঈদগাঁওর ক্রিকেটের দূরাবস্থার জন্য অভিভাবক শূন্যতা, পৃষ্ঠপোষকের অভাব, ছোট বড়দের সম্মন্বয়হীনতা, সিনিয়র ক্রিকেটারদের আন্তকেন্দ্রিক মনোভাবের কারণে আজকের এই ক্রিকেটের বেহাল দশায় পরিণত। বলতে গেলে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও হাই স্কুলের মাঠ ক্রিকেট গায়েব! ক্রিকেটের দেড় যুগের পর্যালোচনায় বিপন্ন ক্রিকেট। বর্তমান এই তরুণ সমাজ ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি বিপন্ন হয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের সহিত জড়িয়ে পড়ছে। এ সময় ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উঠতি প্রজন্মের যুবকরা ক্রিকেটের পরিবর্তে ফুটবল খেলায় প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিজেদেরকে খেলাধুলার প্রতি আসক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়া প্রেমি, পরিচিত ধারাভাষ্যকার ও যুবলীগ নেতা সাকলাইন মোস্তাকের সাথে একান্ত আলাপ কালে ক্রিকেটের একাল- সেকালের কথা উঠে আসে। তার মতে, ক্রিকেটের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে বর্তমানে টেপ-টেনিস ক্রিকেট বাদ দিতে হবে, বৃহত্তর এলাকায় যেসব ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেট প্রেমিদের নিয়ে কেউ কখনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিগত বিশ বছর ধরে । কিন্তু ক্রিড়াব্যক্তিত্ব সাকলাইন মোস্তাক যখন প্রশিক্ষণ শুরু করলো তখন কতিপয় কিছু ক্রিকেটার নানা ষ্টাইলে নতুন প্রজন্মকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তার।
এদিকে ক্রিকেটের বৃহত্তর ঈদগাঁওতে কন্টোল কাউন্সিল খোলার দাবি জানান। বিশ বছর পাঁচ মাস ধরে ক্রিড়াঙ্গণে সময় দেওয়া সাকলাইন মোস্তাক দীর্ঘ মিয়াদী রোগে ভোগার পরেও সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত সমাজ বির্নিমাণের লক্ষ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কাজ করে যাচ্ছে ক্রিকেট নিয়ে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যথাযথ প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে না বলে তিনি জানান। বৃহত্তর ঈদগাঁওর মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ছুরুত আলম ক্রিকেট একাডেমী চালু করেছে তিনি।
You must be logged in to post a comment.