সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / উখিয়ায় পাহাড় ধসের মৃত্যু ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

উখিয়ায় পাহাড় ধসের মৃত্যু ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় ধসের মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গরা। সাম্প্রতিক সময়ের ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে দেড়শতাধিক লোকজন মারা যাওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলেও উখিয়ায় বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী অঞ্চলে বসতবাসরত লোকজনদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে হাজারো পরিবার। বিগত দিনে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে প্রায় ২০ জন নারী-পুরুষ শিশুর অকাল মৃত্যুর পর বর্ষা নামলে প্রশাসন ও বন বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনদের নিরাপদে সরে যাওয়ার প্রচারণা চালিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করলেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থাপনা তৈরিতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে এসব এলাকার পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতন মহল।

সরকারের সমন্বিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী (সিডিএমপি) কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকার পাহাড় গুলোর ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করেছে। তাতে দেখা গেছে এ দু’উপজেলায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড় গুলোর ৭৫শতাংশই বালু মিশ্রিত। যেখানে বসতিতো দূরের কথা কোন প্রকার অবকাঠামো নির্মাণের জন্য উপযুক্ত নহে। পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার অব বাংলদেশ উখিয়া শাখার সভাপতি ইমরান জাহেদ জানান, সরকারি বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব এলাকার পাহাড় ও জমিজমা গুলো সংরক্ষিত থাকলেও কতিপয় অসাধু বনকর্মীদের কারণে বিস্তৃর্ণ বনভূমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেছে। জবর দখল, পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন, পাহাড়ের উপর, পাহাড়ের ঢালু ও নিচে অসংখ্য বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে।

এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর দুই তৃতীয়াংশ ভূমিহীন হওয়ার সুবাদে তারা ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে বসবাস করছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ও সংশোধিত ২০১০ এর ৪ ধারায় বলা হয়েছে সরকারি বা স্বায়িত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। এ আইনে পাহাড় কাটার অপরাধে সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা বনবিভাগ পাহাড় কর্তনের অভিযোগে কাউকে শাস্তির আওতায় আনেনি। যার ফলে উখিয়ায় পাহাড় দখল করে বসবাসের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

উখিয়া ও ইনানী বন রেঞ্জের আওতাধীন মনখালী, ছেপটখালী, জুম্মাপাড়া, মোঃ শফির বিল, ইনানী জুমের ছড়া, সোনাইছড়ি, পাইন্যাশিয়া, তুতুরবিল, হরিণমারা, তেলখোলা, মোছার খোলা, হাতিরঘোনা, মধুরছড়া, মাছকারিয়া, দোছরী, থিমছড়ি, তুলাতলি, সোনারঘোনা, ডেইলপাড়া, ভালুকিয়া আমতলী, চিকনঝিরি পাগলির বিল সহ প্রায় শতাধিক পাহাড় দখল করে অবৈধ ভাবে বসবাস করছে হাজারো পরিবার।

বনবিভাগের তথ্যমতে উখিয়া ও ইনানী রেঞ্জের আওতাধীন বনভূমিতে প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ২০১০ সালের ১৫ জুন প্রবল বষর্ণ ও সৃষ্ট বন্যায় পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী গ্রামে পাহাড় ধ্বসে একই পরিবারের ৩ জন, সাদৃকাটা এলাকায় ১ জন ও ছেপটখালী গ্রামের ১ জন সহ ৫ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু পাহাড় ধ্বসে ঘর চাপাঁ পড়ে আহত হয়েছে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে বিশাল আকারের একটি পাহাড় ধসের ঘটনায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হলে দারিদ্রতা অশ্বপৃষ্টে বাঁধা এসব পরিবারগুলো অন্যত্রে সরে যেতে পারেনি। এমতাবস্থায় থিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে তিনজনসহ ৭ জন নিহত হয়। এসময় শত শত ঘরবাড়ি পাহাড়ের নিচে মাটি চাপা পড়ে।

২০১২ সালে ২৭ জুন ভালুকিয়া আমতলী চিকনঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে প্রায় ১১ জন নিহত হয়। এসময় ঘরবাড়ি ও গাছপালা চাপা পড়ে প্রায় শতাধিক লোকজন আহত হয়।

ইনানী বনরেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়া জানান, বনকর্মীদের বাঁধা উপেক্ষা করে স্থানীয় লোকজন পাহাড় দখল করে স্থাপনা তৈরি পূর্বক পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে।

ইনানীর সংরক্ষিত বন রক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি নুরুল আবছার জানান, বনকর্মীরা মোটা অংকের টাকা নিয়ে বনভূমির দখল বিক্রি করার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উখিয়ার সদর বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, স্থাপনা তৈরির খবর পেয়ে তা তাৎক্ষণিক ভাবে উচ্ছেদ করা হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের ছত্রছায়ায় পুনরায় ওই স্থাপনা গড়ে তোলতে সক্ষম হচ্ছে। যে কারণে বনভূমি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক নুর মোহাম্মদ সিকদার জানান, বনভূমি দখল করে রোহিঙ্গারা যত্রতত্র স্থাপনা তৈরি, পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনৈতিকতা চিরাচরিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। যে কারণে বর্তমানে বনভূমি রক্ষা করা বনকর্মীদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। ভয়ংকর পরিবেশে বসবাস করলেও ওই সব পরিবারগুলো পাহাড় ধসের ঘটনা থেকে নিস্তার পেতে দূর্যোগের সময়ও বাড়ি ছাড়ছে না। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত ভূমিহীন পরিবারগুলোকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের পূর্ণবাসন করা। তা নাহলে প্রতিবছরের পাহাড় ধসে মৃতের সংখ্যা সম্প্রসারিত হবে এনিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর সংবাদকর্মী আবু হেনা সাগরের মাতা অসুস্থ : দোয়া কামনা 

  বার্তা পরিবেশক : কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার সংবাদকর্মী এম আবুহেনা সাগরের মাতা অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের ইবনে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/