মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
ঈদের ছুটি শেষে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে ছুটে চলছে মানুষ। আপন ঠিকানায় পৌঁছাতে গিয়ে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ননীয় দুর্ভোগ। একদিকে কৃত্রিম গাড়ি সংকট অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস মালিক-শ্রমিকরা। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। সারাদিন বাস টার্মিনাল ও সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছেনা গাড়ির সিট।
ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে সুকান্ত। ফের বাড়ি ফিরতে সকাল ১০টা থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরস্থ বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের আশায়। শেষমেশ দুপুর ১টার দিকে লোকাল একটি বাস জুটেছে । তাও আবার ২৫০ টাকা ভাড়া। অন্যদিন যে ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা সেই ভাড়া এখন নিচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত।
গরমে ঘেমে ও বৃষ্টিতে ভিজে একাকার যাত্রী আবদুল হামিদ চকরিয়ার বদরখালী থেকে এসেছেন বাস টার্মিনালে। কাজ করেন চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মা’র সাথে ঈদ করতে বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু যাত্রাপথে বাস স্ট্যান্ডে এসে তাঁর মেজাজ বিগড়ে যায়। তিনি অনেকটা প্রতিবাদী কণ্ঠে বলেন, আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের কি অপরাধ বুঝলাম না। এক এক বার এক এক অজুহাত তুলে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। আর আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। এর একটা প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। তাঁর কাছ থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার বাস ভাড়া দাবি করা হয়েছে ৩০০ টাকা।
শনিবার সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী টার্মিনালসহ চকরিয়া পৌরশহরের দুই কিলোমিটার জুড়ে ছুটাছুটি করছেন বাসের জন্য। অসহায় যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া নিয়ে চালক ও সহকারীর সঙ্গে দীর্ঘ বাদানুবাদ করেও কোনো ফল মিলছেনা। অনেকটা জিম্মি হয়ে বাধ্য হয়েই তারা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে অসহনীয় পরিস্থিতিতে পড়েছেন। একদিকে অল্পক্ষণ রোদের দাপট ফের গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এবং গাড়ির সংকট এ তিনে মিলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্যদিন কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহি বাসগুলো চকরিয়ায় যাত্রা বিরতী করলেও শনিবার ছিল ভিন্ন। কক্সবাজার থেকে সকল গাড়ি সিট বুকিং হয়ে আসছে। ফলে গাড়ির সিট না পেয়ে অনেকটা হতাশাগুস্ত হয়ে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাওয়ার বাস ভাড়া হাকা হয় নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ। ১৭০ টাকা নির্ধারিত ভাড়ার জায়গায় ভাড়া দাবি করে ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। কক্সবাজার যেতে ৭০ টাকার স্থলে দিতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। সাতকানিয়ার-কেরানিহাটের ভাড়া চাওয়া হয় ১০০ টাকার স্থলে ২০০টাকা। যাত্রীদের শত অনুরোধেও ভাড়া কমাতে রাজি নই বেশির ভাগ বাস চালক-হেলপার। তারা তাদের দাবিতে অটল।
এ ব্যাপারে এক শ্রমিক নেতা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যাত্রীদের চাপ রয়েছে বেশি। সে তুলনায় গণপরিবহণ কম। আমরা যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে কিছু অতিরিক্ত বাস নিয়ে এসেছি, সেজন্য যাত্রীদের ভাড়া একটু বেশি দিতে হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, আপনার কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শুনেছি। আমি এখনই থানার ওসিকে নির্দেশ দিচ্ছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
You must be logged in to post a comment.