এম.বেদারুল আলম; কক্সভিউ :
কক্সবাজার জেলার একমাত্র শিল্পাঞ্চল শহরতলীর লিংকরোড়স্থ বিসিক শিল্প নগরীর দিন দিন জৌলস হারাচ্ছে। নানা অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়মের কারনে জেলার এক সময়ের প্রাণচাঞ্চল্য ভরা বিসিক শিল্প নগরী আজ মৃতপ্রায়। ১৯৬৪ সালে ২১.৬৯ একর জমির উপর উক্ত শিল্পাঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা কারণে আজ মৃত্যুপথযাত্রী বিসিকের ৩৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে উত্পাদনে রয়েছে হাতেগুনা কয়েকটি। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে দেনার কারণে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেনা। ৩৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩টি শিল্পকে রুগ্ন শিল্প হিসাবে চিহিৃত করেছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যুপথযাত্রী এ শিল্প সমূহ হল প্রিমিয়ার সী-ফুডস, আকুয়া ফিশারীজ, সোনালী ফুড প্রোডাক্টসের ২টি ইউনিট, সার কোন্ড ষ্টোরেজ লিমিটেড, কক্সবাজার ফ্লায়ার মিলস্ এন্টারপ্রাইজ, কক্সবাজার পলিথিন এ্যান্ড প্লাষ্টিক ইন্ডাষ্ট্রিজ এরহমান অয়েল মিলস, স্কুয়ার কর্পোরেশন বিডি লিমিটেড, ডুলাহাজারা জেনারেল ফিড্স মিলস লিঃ।
উক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে। এদিকে নিরিবিলি ফিস ফিড এর মালিক সাবেক সাংসদ লুত্ফর রহমান কাজল বলেন ”আমার প্রতিষ্ঠান উত্পাদনে রয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মাঠে মারা যাচ্ছে। সরকারের উচিত্ শিল্পসমূহ কেন বন্ধ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা। বর্তমান অবস্থায় নতুন করে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সাহস পাচ্ছেনা ব্যবসায়িরা। উত্পাদনে থাকা এস এস এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মিসবাহ উদিদন চৌধুরী জানান”। বিসিক এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, গত বছর নিপা ফ্লাওয়ার মিলসে পানি প্রবেশ করে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা আইন শৃংখলার।
স্থানিয়দের প্রভাব এবং সন্ত্রাসিদের কারনে বিনিয়োগ করেও অনেকে শান্তিতে ব্যবসা করতে সাহস পাচ্ছেনা। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সরকার যেন উদ্যোগ গ্রহন করে।”
অপরদিকে ব্যাংকের নিকট অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান দেনার দায়ে দায়বদ্ধও রয়েছে বলে জানান বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা। বর্তমানে ১৪টি উত্পাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেড় হাজারমত শ্রমিক কাজ করছে। ব্যাংকে মামলা, অর্থ অনাদায়ে নিলামে ওঠা, নানা কারণে নিস্ক্রিয় হওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহকে শীঘ্রই চিহিৃত করে বাঁচিয়ে রাখা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা প্রতিক‚লতার পরও যে-ক’টি রপ্তানিমূখি শিল্প রয়েছে তাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে ১৪১.১০কোটি। এক সময়ের ভরা যৌবনময়ী জেলার একমাত্র বিসিক শিল্প নগরীকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, পৃষ্ঠপোষকতা, আর্থিকভাবে ভর্তুকি প্রদান এবং ব্যাংক ঋণ মওকুপ সহ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে।
জেলার অর্থনীতির প্রাণ রপ্তানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহকে বাঁচাতে বিসিক শিল্প নগরির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, বেতনবৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার, সুশৃংখল পরিবেশ, অর্ধমৃত শিল্প প্রতিষ্ঠান সমুহে ভর্তুকি প্রদান করলে বিসিক শিল্প নগরী পুনরায় স্বরুপে ফিরে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা।
You must be logged in to post a comment.