এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :
ঘরে পানি উঠছে, আমরা পানিতে ভাসি, কার খবর কে রাখে? ক্ষোভের ভাষায় এ কথাগুলো বলেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীর নোনা পানিতে বন্দি নাহার আক্তার। সে বলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে নোনা পানিতে ভাসতেছি, আমরা কোথায় আশ্রয় নিবো। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত একই এলাকার আরেক গৃহবধূ বলেন, পানিতে ঘরের চুলা ডুবে আছে, সপ্তাহ ধরে ঘরে রান্না চুলা জ্বলে না, ছেলে-মেয়েরা খাওয়ার জন্য বিরক্ত করছে। কিছু কিনে খাওয়ানোর সেই টাকাও নেই। আমাদের কষ্ট কেউ কি দেখে? তিনি আরো বলেন, ভাঙ্গা বাঁধ দিয়া নোনা পানি ঢুকছে, পানির মধ্যেই ভাসছি।
টানা বৃষ্টি, পূর্ণিমা জোয়ারের প্রভাবে এবং বাঁধ ভেঙে প্লাবিত শুধু গৃহবধূ নয়, তাদের মতো অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি। জোয়ার এবং ভাটার ওপর নির্ভর করেই দিন কাটাচ্ছে। গোমাতলীর ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে নোনা জল লোকালয়ে ঢুকে পড়লে প্রায় দশ গ্রাম প্লাবিত হয়। ওই এলাকার হাজারো মানুষ নোনা পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। জোয়ার-ভাটার বৃত্তে বন্দী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই ১০ পাড়ায় সরকারী বা প্রাইভেট কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র না থাকায় ঔষুধের দোকান গুলোই সাধারণ মানুষের চিকিত্সার শেষ ভরসা এখন। এক সময়ের যোগাযোগ উন্নত গোমাতলী বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কারণে নিয়মিত জোয়ারে যাতায়তের প্রধান সড়কটিও বিলীন হয়ে যায়। যার ফলে বর্তমানে গোমাতলীর জনসাধরণের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র মতে, ৪ জুলাই নদীর পানি বিপদসীমার ৩ দশমিক ৬৯মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল এবং বাঁধের বাইরের অংশ ছাড়াও ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে সপ্তাহ ধরে জোয়ারে পানি প্রবেশ করায় বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে ছড়িয়ে পড়েছে পানি বাহিত রোগ।
আরো জানা যায়, জোয়ারের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, টিউবওয়েলসহ নানা স্থাপনা। পানি থেকে বাঁচতে অনেকেই ঘরের উঁচু স্থানে কেউবা ঘর থেকে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। রোজার মধ্যে অনেকেই ইফতার সামগ্রী তৈরি করতে পারেননি, শুধু পানি খেয়ে ইফতার করতে হয়েছে। সাগর-নদী মোহনা তীরের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত। সেখানকার কয়েক বাসিন্দার মতে, তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা বলেন, জোয়ারের পানিতে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ তাদের খোঁজ খবর নেয় না। বানভাসি এক মহিলার মতে, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে ভাসি, তবুও স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়না। তবে এলাকাবাসীর মতে, টানা বৃষ্টি ও গোমাতলী অংশে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নোনা পানি প্রবেশ করার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে অধিকাংশ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্লাবিত এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর সড়ক ও সড়ক বিভাগের ১৫ কিলোমিটার সড়ক জোয়ারের পানির স্রোতে ভেঙে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা আরো জানায়, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে নোনা জলে প্লাবিত জমিতে বর্ষা মৌসুমে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভাঙন বেড়িবাঁধ মেরামত না করলে হাজার হাজার একর ফসলি অনাবাদি হয়ে পড়বে।
এ ব্যাপারে পোকখালী আওয়ামীলীগ সভাপতির মতে, অমাবস্যার জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাঁটা চলতে থাকলে এসব এলাকায় লোকজন বসবাস করা সম্ভব হবেনা। আগামী পূর্ণিমার জোয়ার আসার আগে বিলীন হওয়া বেড়িবাধঁ জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণ করে যাতে বর্ষা মৌসুম ঠেকানো যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মতে, ঈদের আগেই দুর্গত এলাকায় ভিজিএফ ও ভিজিডি বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বন্যাদুর্গত এলাকায় খবরা খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
You must be logged in to post a comment.