সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / চকরিয়ার বন্যা কবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি : দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন

চকরিয়ার বন্যা কবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি : দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন

মুকুল কান্তি দাশ;চকরিয়া :

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বন্যায় পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে নিজ ঘরে ফিরলেও বন্যা কবলিত মানুষ পানিবাহিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। একদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন অপরদিকে পানিবাহিত রোগব্যাধিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বানভাসি পরিবারগুলো। উপজেলা ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য ১৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হলেও সিংহভাগ এলাকায় ওষুদ স্বপ্লতার কারণে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেনা বলে বানবাসি মানুষ অভিযোগ করেছেন। দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসপাতালে উপস্থিত না থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়জলের সংকট ও স্যানিটারি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এতে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মেম্বার অনিমেষ দাশ বলেন, ঘর থেকে পানি নামার পর বন্যা দুর্গতরা নিদারুণ কষ্টে বসবাস করছে। সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। শনিবার সকালে একটি মেডিকেল টিম এসে প্রায় ২শ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। টিউবওয়েল থেকে পানি উঠলেও তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

ফাঁসিয়াখারী ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য-সহকারী হাসান মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা.মোহাম্মদ তোফাজ্জল, উপ-সহকারী সৈয়দ ওসমান গণিসহ একটি মেডিকেল টিম ঘুনিয়া এলাকায় ২’শতাধিক পানিবাহিত রোগী দেখেছি। তাদের মধ্যে ১৫জনকে ওষুধ দিয়েছি। ওষুধ স্বল্পতার কারণে অন্যদের দেয়া সম্ভব হয়নি। অনুরুপভাবে উপজেলার অপর ১৭ ইউনিয়নেও সিংহভাগ পানিবাহিত রোগী ওষুধ স্বল্পতার কারণে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেনা।

কোণাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বলেন, বন্যায় পানি আসতে আসতে নামতে শুরু করেছে। বন্যা পরবর্তীতে ছোট শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোগিদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কোন মেডিকেল টিম আসেনি।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.মোহাম্মদ ছাবের বলেন, পানিবাহিত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা ওষুধ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে। অন্যকোন রোগি ওষুধ না পেলেও বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা অবশ্যই ওষুধ পাবে। যেসব ইউনিয়নে ওষুধের ঘাটতি পরবে তারা মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পদির্শক রতনের মাধ্যমে ও অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানিয়ে চাহিদা অনুযায়ী ওষুদ স্ব-স্ব এলাকায় নিয়ে যাবেন।

কক্সবাজারের জেলা সিভিল ডা.মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকল চিকিৎসক নিয়ে জরুরী সভা করেছি। সবাইকে দিকনির্দেশনা দিয়েছি বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত কোন রোগী যাতে চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়। পাশাপাশি মেডিকেল টিমগুলোকে সার্বক্ষণিক মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দূর্যোগকালীন সময়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা.সুলতান আহমদ সিরাজী হাসপাতালে উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে, ঢলের পানি কমার সাথে সাথে মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ী ও আবাদী জমিসহ নানা স্থাপনা। বিপন্ন হচ্ছে মানুষ। গত পাঁচ বছরে পৌরসভা ছাড়াও মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তি গ্রামের অন্তত হাজারো বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। এখনো হুমকির মুখে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে বসবাসকারী কয়েক হাজার বসতবাড়িসহ ধর্মীয় ও নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মাতামুহুরী নদীর ভাঙন ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ না থাকায় শত বছরের পুরোনো দিগরপানখালী কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রপাল মন্দিরটিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় ভাঙন ঠেকিয়ে বসতবাড়ি, ফসলী জমি, ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষার দাবি উঠেছে উপজেলাবাসীর মাঝে।

স্থানীয়রা লোকজন বলেন, গত চার দিনের ভারি বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় পুরো উপজেলা। পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় ঘরবাড়ি।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছরে পৌর এলাকার শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাড়ি-ভিটে সবকিছুই মাতামুহুরী নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় হাজারো মানুষ পাহাড়ি এলাকায় এবং কারো কারো বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, সাহারবিল, কোণাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী, বরইতলী ইউনিয়ন এবং পৌরসভার দিগরপানখালী, কোচপাড়া, নামার চিরিঙ্গা, এক নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল বারী সিকদার পাড়া, কাজীর পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা। নদীর দুই তীরে কোন ধরনের স্থায়ী বাঁধ না থাকায় গত পাঁচ বছরে এসব এলাকার হাজারের বেশি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাতামুহুরী নদীর তলদেশ অত্যধিক ভরাট হয়ে গেলেও খনন না করায় এবং অতি ঝুকিতে থাকা নদীর তীর রক্ষায় গাইডওয়াল ও ভাঙ্গন রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করায় ঠেকানো যাচ্ছেনা ভাঙ্গন। সর্বস্ব হারিয়ে নিস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।

এদিকে, শুক্রবার বিকালে মাতামুহুরীর নদীতে বিলীন হওয়া বসতবাড়ী হারানো পরিবার ও বন্যা কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙ্গনকৃত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজিজ মোহাম্মদ চৌধুরী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমান আলী। তারা নদীর তীর ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভিত্তিতে স্পার বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং নদীর তীরবর্তী মানুষকে রক্ষা করতে দ্রুতসময়ে কাজ শুরু করা হবে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন্যান্য এলাকায় ভাঙনরোধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাতামুহুরী নদীর দুই তীর সংরক্ষণের উপর জোর দিয়ে ইতিপূর্বে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর সংবাদকর্মী আবু হেনা সাগরের মাতা অসুস্থ : দোয়া কামনা 

  বার্তা পরিবেশক : কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার সংবাদকর্মী এম আবুহেনা সাগরের মাতা অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের ইবনে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/