মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত জেরুজালেম শহরকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
৬ ডিসেম্বর বুধবার হোয়াইট হাউসে এক ভাষণে মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি- তিন ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত শহর জেরুজালেমকে এই স্বীকৃতি দেন তিনি।
জাতিসংঘ, আরব ও মুসলমান দেশসহ অন্যান্য মার্কিন-মিত্রদের আপত্তি আমলে না নিয়ে প্রেসিডেন্ট আরও ঘোষণা করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার থেকে সরে আসছে। দীর্ঘ দিনের ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুত্তরাষ্ট্র দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত যদি উভয় পক্ষ সেটাই চায়।
মধ্য প্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ ছিল ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষিত।’ বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এদিকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্র সাবধান করে দেন যে এই সিদ্ধান্ত এলাকার জন্য ‘বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনবে।’
অন্যদিকে ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
কিন্তু এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানিয়ে প্যালেস্টাইনের নেতা মাহমুদ আব্বাস এটিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর হামাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলে ‘নরকের দ্বার খুলে দেবে’। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বলেছেন, এই ঘোষণা ‘সারা পৃথিবীর মুসলিমদের ঘোরতর ভাবে প্ররোচিত করবে’।
ইতোমধ্যেই গাজায় এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনসুলেটের সামনে এই ঘোষণার প্রতিবাদে মিছিলও হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বাঁকবদলকারী সিদ্ধান্তটিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘ভীষণ উদ্বেগের মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থণ না করে বলেছেন, সে অঞ্চলে শান্তি আনয়নের পথে এটি কোনো উপকারী পদক্ষেপ হবে না।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ; যারা ইসরায়েলের এই দাবিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের পর জর্ডানের কাছ থেকে জেরুজালেমের দখল নেয় ইসরায়েল। আর নিজেদের অবিভাজ্য রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালের ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল শান্তি চুক্তিতেও এই শহরের ভবিষ্যৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে বলে উল্লেখ ছিল।
তবে তা অস্বীকার করে ১৯৬৭ সাল থেকেই অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। ওই এলাকায় দুই লাখেরও বেশি ইহুদি বসবাস করে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তা অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। আর একারণেই পৃথিবীর সব দেশেরই ইসরায়লি দূতাবাস কখনোই ওই শহরে নেওয়া হয়নি। তেল আবিব থেকেই দূতাবাস পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
সূত্র:ইতি আফরোজ-priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.