সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ক্রীড়া / টাইব্রেকার রোমাঞ্চে শেষ আটে স্বাগতিক রাশিয়া

টাইব্রেকার রোমাঞ্চে শেষ আটে স্বাগতিক রাশিয়া

জয়ের নায়ক আকিনফিভকে চেরিশেভ-জুবাদের কুর্নিশ। ছবি: সংগৃহীত

৯০ মিনিটে সমানে সমান লড়াই। রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষেও স্কোর লাইন থেকে গেল ১-১। খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। এখানেও স্পেনের বিপক্ষে পাল্লা দিয়ে লড়ল স্বাগতিক রাশিয়া। শেষমেশ টাইব্রেকারের অপেক্ষা। অপেক্ষা ফুরোতেই স্প্যানিশদের হৃদয় ভেঙে খানখান। আর নায়কের ভূমিকায় রাশিয়ার গোলরক্ষক ইগর আকিনফিভ। পুরো ম্যাচে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে থাকা আকিনফিভ স্পেনের দুটি পেনাল্টি শট ফিরিয়ে দিয়ে লিখে ফেললেন নতুন ইতিহাস।

টাইব্রেকার রোমাঞ্চে স্পেনকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ রাশিয়া। লুঝনিকি স্টেডিয়াম হয়ে উঠল স্বাগতিকদের বিজয় উদযাপনের মঞ্চ। সেই মঞ্চের পাশ দিয়েই মুখ লুকিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো খলনায়ক হয়ে ওঠা কোকে ও ইয়াগো আসপাসকে। কারণ এই দুজনের পেনাল্টি কিক বাঁচিয়েই গোটা রাশিয়াকে উৎসবে মাতিয়েছেন আকিনফেভ।

বিশ্বকাপে রাশিয়ার সর্বোচ্চ সাফল্য বলতে গ্রুপ পর্বে খেলাই। এই বিশ্বকাপের আগে কখনো নকআউট পর্ব পেরোতে পারেনি তারা। এবার যেন সব সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে চেরিশেভ-জুবারা। প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েই স্বপ্নের সীমানা আরও বড় করে নিল রাশিয়া। একই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হওয়ার পর স্পেনের বিপক্ষে পাওয়া প্রথম এই জয়ে এটাও জানান দিয়ে রাখল, শিরোপার লড়াইয়ে এখনও টিকে আছে তারা।

স্বাগতিক বলেই রাশিয়াকে সমীহ দিতে হচ্ছিল স্পেনকে। এ ছাড়া গ্রুপ পর্বে নিজেদের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্ট থাকার উপায় ছিল লা রোজাদের। সব মিলিয়ে শেষ আটে ওঠার পথে স্বাগতিকদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, এটা জানাই ছিল ২০১০ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ম্যাচ শুরু হওয়ার পর সেটা আরও ভালোভাবে টের পেয়েছে স্প্যানিশরা। বেশির ভাগ সময়ে বল নিজেদের পায়ে রাখলেও রাশিয়ার রক্ষণভাগে সেভাবে হানা দিতে পারেনি তারা। প্রথমার্ধে মাত্র একটি পরিষ্কার আক্রমণ সাজায় স্পেন।

৫ মিনিটে প্রথম আক্রমণ করে রাশিয়া। যদিও ইউরি ঝিরকভের শট সামাল দিতে সমস্যা হয়নি স্পেনের। এরপর কয়েক মিনিট কোনো দলই সেভাবে আক্রমণ করতে পারেনি। ১২ মিনিটে গিয়ে কপাল পোড়ে স্বাগতিক রাশিয়ার। নিজেদের ভুলেই পিছিয়ে পড়ে তারা। রাশিয়ার ডি বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় স্পেন। মার্কো এসেনসিও নেওয়া ফ্রি কিক ফেরাতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন রাশিয়ান ডিফেন্ডার সার্গেই ইগনাশেভিচ।

গোল হজম করার দুই মিনিট পর স্পেনের ডি বক্সের দিকে বল নিয়ে ছোটেন ডালের কুজইয়ায়েভ-রোমান জবনিনরা। যদিও প্রতিপক্ষের মনে কাঁপন ধরাতে পারেনি তারা। জবনিনের নেওয়া ডান পায়ের শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। এরপর লম্বা সময় ধরে বল দখলের লড়াই করে গেছে দুই দল। কোনো দলই গোলেল সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ৩৬ মিনিটে গিয়ে সমতায় ফেরার সুযোগ তৈরি করে রাশিয়া। কিন্তু জবনিনের পাস থেকে আলেকজান্ডার গলোভিনের নেওয়া শট গোলপোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা স্পেন তখনও জোরালো আক্রমণ করতে পারেনি। কেবল রাশিয়ার আক্রমণ ফিরিয়েই গেছে তারা। ৪০ মিনিটে আরও একটি আক্রমণ ফেরাতে হয় তাদের। আলেকজান্ডার সামেদভের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দেন আর্টেম জুবা। এ যাত্রায় রক্ষা পায় স্পেন। কিন্তু পরের মিনিটেই হতাশায় ডুবতে হয় রামোস-কস্তাদের। নিজেদের ডি বক্সে রাশিয়ার আক্রমণ ফেরাতে ব্যস্ত জেরার্ড পিকের হাতে গিয়ে লাগে বল। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

স্পটকিক থেকে গোল করে রাশিয়াকে সমতায় ফেরান আগের তিন ম্যাচেও দারুণ খেলা আর্টেম জুবা। চলতি বিশ্বকাপে রাশিয়ান স্ট্রাইকারের এটা তৃতীয় গোল। তবে তার তৃতীয় গোলের সঙ্গে জড়িয়ে রইলো কিছুটা বিতর্ক। কারণ ইচ্ছাকৃতভাবে বলটি হাত দিয়ে ফেরাননি পিকে। জুবার নেওয়া হেড পেছন দিয়ে গিয়ে পিকের হাতে লাগে, যেটা দেখেননি স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। তবু স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি দেন রেফারি।

ম্যাচে সমতা ফেরায় স্পেন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে প্রথমবারের মতো পরিষ্কার একটি আক্রমণ করে বেশির ভাগ সময় বল নিজেদের পায়েই রাখা স্প্যানিশরা। যদিও গোলের দেখা মেলেনি।

দিয়েগো কস্তার দুটি আক্রমণ থেকে দলকে রক্ষা করেন রাশিয়ান গোলরক্ষক আকিনফিভ। প্রথমে কস্তার শট ফেরান তিনি। কিন্তু ফিরে যাওয়া বলে হেড নেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। এবারও ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে গোলের হাত থেকে বাঁচান আকিনফিভ।

দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে দুই দলই কৌশল পাল্টে নেয়। রক্ষণাত্মক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসে স্পেন-রাশিয়া। বিশেষ করে স্পেন গোলের সন্ধানে মরিয়া হয়ে ওঠে। ৪৭ থেকে ৫৩ মিনিট পর্যন্ত তিনটি আক্রমণ করে স্পেন। তবুও স্বস্তি ফেরেনি স্প্যানিশ শিবিরে। এই তিন আক্রমণ থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেননি জর্দি আলবা, দিয়েগো কস্তা, সার্জিও বুসকেটসরা। ৬০ মিনিটে ডেভিড সিলভার হেড একটুর জন্য রাশিয়ার জালে জড়ায়নি।

শুরু থেকেই বল দখলের লড়াইয়ে রাজত্ব করা স্পেন একের পর এক আক্রমণ করেও ৯০ মিনিটে গোলের দেখা পায়নি। রাশিয়াও সেভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তবে ৮৫ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে স্পেন। কিন্তু বদলি হিসেবে মাঠে নামা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোলে গোলপোস্টের খুব কাছে দিয়ে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময়ে গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

১-১ গোলের সমতার ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াতেই খেপে ওঠে স্পেন। বল দখলে রাশিয়াকে পাত্তাই দেয়নি তারা। ৭৯ শতাশ সময় সময় নিজেদের পায়ে রাখে লা রোজারা। একই সঙ্গে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে তারা। তবুও গোলের দেখা নেই। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটেও স্কোরশিট একই থেকে যায়।

অতিরিক্ত সময়ে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ সুযোগ তৈরি করে স্পেন। কিন্তু রদ্রিগোর অসাধারণ শট থেকে আরও একবার রাশিয়াকে রক্ষা করেন দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে থাকা রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফিভ। এই অর্ধেও গোল করতে পারেনি কোনো দল। খেলা গড়ায় টাইব্রকোরে। আর রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ট্রাইব্রেকারে গিয়ে হৃদয় ভাঙে স্পেনের। পেনাল্টি শুট আউটে ৪-৩ গোলে স্পেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় রাশিয়া।

সূত্র:শান্ত মাহমুদ-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের হ্যান্ডবল টিম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, #https://coxview.com/quantum-cosmo-school-and-college-sports-rafiq-2-10-23/

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের হ্যান্ডবল টিম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : সিলেটে অনুষ্ঠিত ৫০তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হ্যান্ডবল ফাইনাল ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/