সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / নারী পরিচয় দিয়ে কেন নিজেদের আলাদা করে ফেলছি?

নারী পরিচয় দিয়ে কেন নিজেদের আলাদা করে ফেলছি?

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম এই বিশ্ব নারী দিবস কেন পালন করবো আমরা? এই দিনটি এলে নারীদের অধিকার নিয়ে একটু মাতামাতি হয়। বিভিন্ন সভা সেমিনার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে নারীদেরকে সম্মানিত করা হয়। দুই একদিন পর থেমে যায় সব। সভা মিছিল-মিটিং, অনুষ্ঠান, সংবর্ধনা এসব পালন করে হাঁপিয়ে ওঠে অনেকে।

নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিলে বা তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কিংবা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এসবই কি যথেষ্ট? দরকার পরিবারে ভিতর থেকে সচেতনতা। সবাই যদি সচেতন হয় তবে বিশেষ বিশেষ দিবস পালন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না।

মাঝে মাঝে ভাবি বিশ্ব পুরুষ দিবস কি আছে? না নেই। কেন নেই? কারণ পুরুষদের কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা নারীরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করে ফেলছি। আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছি বিশেষ বিশেষ দিবস আর আইন।

আমাদের জন্য আছে নারী নির্যাতন আইনসহ কত কী? আমরা শুধু নারী তাই তো আমাদের রক্ষা করার জন্য কত আয়োজন করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তোমরা নারী। জানি না আমার এ কথাটির অর্থ নারী সমাজ বুঝতে পেরেছে কি-না। আমরা নারীরা কেন নিজেদের এতো ছোট করে ভাববো?

আমরা তো মানুষ। নারী পরিচয় দিয়ে কেন নিজেদের আলাদা করে ফেলছি? সমাজ, দেশ, বিশ্ব যদি আমাদের শুধু নারী পরিচয়ে দেখে তবে আমাদের উন্নতি কোনো দিন হবে না। কোনো আইন কোনো দিবস আমাদের সমমর্যাদা দিতে পারবে না। আর সেজন্য আমাদের অর্থাৎ নারী সমাজর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

পুরুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে যদি কোনো দিবস বা আইন প্রয়োজন না হয় তবে নারীদের কেন প্রয়োজন? তার মানে নারীদের শুরু থেকেই অসহায় ভাবা হচ্ছে। আমরা নিজেদের শুধু নারী হিসেবে নয়, ভাববো মানুষ হিসেবে।

একজন পুরুষ সমাজ, দেশ ও পরিবার থেকে যা যা পেতে পারে বা দিতে পারে। আমরা নারীরা তা তা দিতে পারি পেতেও পারি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি পালনের পেছনের ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তবে দেখা যাবে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সূচ কারখানার মহিলা শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে মানবেতর জীবন ও ১২ ঘণ্টা কর্মদিবসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল।

সে সময় নারীদের অমানবিক কর্মক্ষেত্র ও তাদের অধিকতর খাটিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সূচ কারখানার নারীরা নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমে এসেছিল। আর তারই ফলশ্রুতিতে তাদের উপর নেমে এসেছিল পুলিশি নির্যাতন।

পুলিশের নির্যাতনে একধাপ পিছিয়ে পড়া নারীরা বুঝতে পারে এভাবে আন্দোলন করে তাদের অধিকার আদায় করা যাবে না। তাই তো ধীরে ধীরে একত্রিত হতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে থাকে।

১৮৫৯ সালে ওই কারখানার মহিলা শ্রমিকরা “মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন” গঠন করেন এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই আন্দোলনের পথ ততোটা সুগম ছিল না। এই আন্দোলন চলতে থাকে দীর্ঘ বছর।

১৯০৮ সালে ১৫০০০ নারী, কর্মঘন্টা, ভাল বেতন ও ভোটের অধিকার দাবি নিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে মিছিল করে। তখন নিউইয়র্ক সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত, নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো।

ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সমাজবাদী পার্টি সর্বপ্রথম ইন্টারন্যাশনাল উইমেন ডের কথা বলে। তার এক বছরের মাথায় ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেন হেগেন শহরে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন।

জার্মানির মহিলা নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করেছিলেন। এই দিন বিশ্বের ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন।

১৯১১ সাল থেকে উৎসাহ নিয়ে এ দিনটি পালন করার রীতি শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে চীন এই দিনটি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন ডে হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়। তারপর আমেরিকার এই দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়।

তখনও জাতিসংঘ এসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এ আন্দোলন বা দিবস কেবল মাত্র কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধভাবে আলোচিত হয়ে আসছিল। ১৯৮৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকেই এর প্রেক্ষাপট পাল্টাতে শুরু করে। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে খুবই স্বল্প পরিসরে। এরপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস স্বীকৃতি প্রদান করা হলে ও ১৯৯১ সালে প্রথমবার এ দিবসটি যথার্থ মর্যাদা ও অনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়।

সারা পৃথিবীব্যাপী নারীরা একটি প্রধান লক্ষ্যে হিসেবে এই দিবসটি উদযাপন করলেও বিশ্বের এক এক দেশে এক এক লক্ষ্যে নিয়ে এ দিবসটি পালন করে। কোনো কোনো দেশে নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা মুখ্য বিষয়। আবার কোনো কোনো দেশে মাহিলাদের আর্থিক রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটির বিষয় বেশি গুরুত্ব পায়।

গত ২০১৫ সালে ৮ মার্চকে ঘোষিত করা হয়েছিল নারীর ক্ষমতায়নেই মানবজাতির ক্ষমতায়ন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের নারীরা আজ শুধু গার্মেন্টস শিল্পেই নয় রাজনৈতিক নেতৃত্বে, ব্যবসা বাণিজ্যে, তথ্যপ্রযুক্তিতে, মিডিয়াসহ কী না করছে।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশের নারীরা অন্যান্য দেশের নারীদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে তা সবার জানা।

 

সূত্র: deshebideshe.com – ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

চলতি বছরের ফিতরা কত, জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন https://coxview.com/islam-zakat-2/

চলতি বছরের ফিতরা কত, জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  অনলাইন ডেস্ক :এ বছর দেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/