সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / পাসপোর্ট পেতে কেন প্রয়োজন পুলিশি প্রতিবেদন?

পাসপোর্ট পেতে কেন প্রয়োজন পুলিশি প্রতিবেদন?

বাংলাদেশ পার্সপোর্ট

পাসপোর্ট পেতে বিভিন্ন রকম দুর্ভোগ-হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- পুলিশ ভেরিফিকেশন। হয়রানি-দুর্নীতি ইত্যাদি অভিযোগে এর আগে অনেকেই দাবি তুলেছিলেন পার্সপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাদ দেওয়ার জন্য। গত বছর এ ব্যাপারে সরকারি মহল থেকেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের বাধার মুখে বিষয়টি আর এগোয়নি।

তবে গত ২১ আগস্ট সোমবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পার্সপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশি ছাড়পত্র এবং সত্যায়ন ও প্রত্যয়নের বিধান বাতিলের সুপারিশ করলে বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসে। অন্যদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল আত্মঘাতী হতে পারে মন্তব্য করে তা বহাল রাখতে চায় পুলিশ।

এদিন রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে পুলিশি তদন্তের জন্য ঘুষ দিতে দেয়। ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ হিসেবে গড়ে ৭৯৭ টাকা দিতে হয়। ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ পুলিশি তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হন।

এছাড়া সেবাগ্রহীতাদের ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ পাসপোর্ট সেবায় অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হন। পাসপোর্ট সেবায় ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেওয়ার গড় পরিমাণ ২ হাজার ২২১ টাকা। পাসপোর্ট বিতরণে নির্ধারিত সময়ের পরে গড়ে ১২ দিন, সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ দিন এবং সর্বনিম্ন ৪ দিনের বেশি দেরি হয় বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত দেশের ২৬টি পাসপোর্ট অফিসে দৈবচয়ন ভিত্তিতে মোট এক হাজার ৪৫৩ সেবাগ্রহীতাকে গবেষণার আওতায় নেওয়া হয় বলেও জানায় টিআইবি।

গত পাঁচ অর্থবছরে ১১০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেলেও সরকার এই খাতে মাত্র ২৩৫ কোটি টাকা খরচ করেছে উল্লেখ করে টিআইবি জানায়, রাজস্ব আদায়ে পাসপোর্ট খাত বড় একটি হাতিয়ার হলেও সরকার এই খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই পাসপোর্ট তৈরিতে গ্রাহক হয়রানির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার পুলিশি তদন্ত, তথ্য-ছবি সত্যায়ন ও প্রত্যয়নপত্র বাতিলসহ ১২ দফা সুপারিশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন কি

ভিআইপি পাসপোর্ট ব্যাতিত প্রায় সকল পাসপোর্টেই পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট আবেদন জমা হওয়ার পর পাসপোর্ট অধিদপ্তর আবেদন ফর্মের একটি কপি পুলিশ বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা স্বশরীরে আবেদনপত্রে উল্লিখিত ঠিকানায় গিয়ে আবেদনকারীর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ যেমন বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে তথ্যের মিল ইত্যাদি খতিয়ে দেখে। এছাড়া আবেদনকারী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না সেটিও বিবেচ্য থাকে। পুলিশের এ প্রতিবেদনটি যদি ইতিবাচক না হয় তাহলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় না।

পুলিশি প্রতিবেদন বাতিল বিষয়ে টিআইবির যুক্তি

সংবাদ সম্মেলনে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশি দুর্নীতির একটি উদাহরণ টেনে টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহনূর রহমান বলেন, পাসপোর্টের জন্য একজন নাগরিক আবেদন করলে এসবি পুলিশ অযথা ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করে। এমনকি জঙ্গি কার্যক্রম কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো হয়। এমনও হয় যে, এসবি পুলিশ আবেদনকারীর বাড়িতে না গিয়ে তাকে চায়ের দোকানে কিংবা থানায় ডেকে পাঠায়। সেবাগ্রহীতার কাছে প্রকাশ্যে ঘুষ দাবি করে। ক্ষেত্রবিশেষে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বলা হয় পুলিশ সদস্যের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, পাসপোর্ট পেতে পুলিশি ছাড়পত্র কিসের জন্য? আমি এই দেশের একজন নাগরিক। দেশে কে অপরাধী কে সন্ত্রাসী আর কে ভালো সব কিছুই পুলিশ জানে। পুলিশের চোখের সামনে অপরাধী ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ওই অপরাধীকে দেখতে পায় না, উল্টো একজন সাধারণ নাগরিকের পেছনে লেগে থাকে। পাসপোর্ট ছাড়পত্রের জন্য একজন নাগরিককে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ সরকার নাগরিককে আইডি কার্ড দিয়েছে। সেখানেই তো নাগরিকের সব ধরনের তথ্য আছে।

কেন বাতিল হচ্ছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

এদিকে তদন্তে পুলিশি হয়রানি হয় এমন অভিযোগ রয়েছে বলে স্বীকার করলেও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ভেরিফিকেশন পদ্ধকি বাতিলের পক্ষপাতি নন। তার দাবি এতে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দুর্বল ও বিদেশে দেশের ভাবমূতি ক্ষুণ্ম হওয়ার মতো ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই পুলিশি তদন্তের বাইরে পার্সপোর্ট দেওয়া হয় না। পাসপোর্ট আবেদনকারী গুরুতর অপরাধী কি না, আবেদনপত্রে তথ্য সঠিক কি না ইত্যাদি যাচাইয়ের জন্য পুলিশি তদন্ত অবশ্য প্রয়োজন। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তাই বলে তদন্ত ছাড়া পাসপোর্ট দেওয়া চিন্তা আত্মঘাতী হতে পারে।

পুলিশের সাবেক এ মহাপরিদর্শক আরও বলেন, পুলিশি তদন্ত ছাড়া এমন কেউ পাসপোর্ট পেতে পারেন যিনি দেশের নাগরিকই নন, যেমন রোহিঙ্গারা। তাছাড়া জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তি যদি পাসপোর্ট পান তবে অবস্থাটা কি দাঁড়াবে?

তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের নাগরিক নন বা অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি পাসপোর্ট পেয়ে দেশের বাইরে গিয়ে অপরাধ কমকাণ্ডে জড়িত হলে দেশের ভাবমূর্তিও হুমকির মুখে পড়বে।

সূত্র:আবু আজাদ/priyo.com,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামায় জমি নিয়ে বিরোধে জের ধরে ১ জনকে কুপিয়ে খুন, আহত ৭

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বান্দরবানের লামা উপজেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষের ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/