চলচ্চিত্র অভিনেতা, সুরকার, গীতিকার, গায়ক, সংলাপ রচয়িতা, প্রযোজক, সংগীত পরিচালক ও কাহিনিকার সব রকম পরিচয়েই পরিচিত ছিলেন খান আতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি তিনি। ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্রে হাতেখড়ি হয় খান আতার। এ জে কারদারের ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে আনিস নামে নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন। একই নামে ১৯৫৯ সালে এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিতেও অভিনয় করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজ শুরু করেন তিনি। তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘অনেক দিনের চেনা’। তার পরিচালনায় মুক্তি পাওয়া ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটি তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করে। তার নির্মিত শেষ ছবির নাম ‘এখনো অনেক রাত’।
খান আতা পরিচালিত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে- রাজা সন্ন্যাসী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), অরুণ বরুণ কিরণমালা (১৯৬৮), জোয়ার ভাটা (১৯৬৯), মনের মত বউ (১৯৬৯), সুজন সখী (১৯৭৫), দিন যায় কথা থাকে, আরশিনগর ও পরশ পাথর। এছাড়া তিনি ‘কবি জসীম উদ্দীনের জীবনী’, ‘গঙ্গা আমার গঙ্গা’ ও ‘গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন’ নামে ৩টি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেন।
গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ১৯৬২ সালে হাতেখড়ি ঘটে খান আতার। ‘সূর্যস্নান’ ছবিতে কলিম শরাফীর ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে’ ছিল তার প্রথম গান। এরপর ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিতে ‘শ্যামল বরণ মেয়েটি’ গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পায় পায়। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে তিনি ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’ শিরোনামের কালজয়ী গানটি লিখেন ও কন্ঠ দেন। এরপর তিনি উপহার দেন সাবিনা ইয়াসমীনের কন্ঠে ‘এ কি সোনার আলোয়’ ও শহনাজ রহমতুল্লাহের কন্ঠে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’র মতো গান। ‘সূর্যস্নান’ ছবির গীতিকার হিসেব এবং ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে পাকিস্তান ফিল্ম ফেস্টিভালে ১৯৬৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পান।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনবার বিয়ে করেন এই কিংবদন্তী। তিনি যখন লন্ডনে ছিলেন তখন সেখানকার এক স্থানীয় মেয়েকে বিয়ে করেন। এই ঘরে তাদের একটি ছেলেও ছিল। এরপর কণ্ঠশিল্পী মাহবুবা হাসনাতকে বিয়ে করেন তিনি। এই ঘরে জন্ম নেয় একটি মেয়ে যিনি কণ্ঠশিল্পী রুমানা ইসলাম। এরপর ১৯৬৮ সালে তিনি বিয়ে করেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিনকে। এই ঘরে জন্ম নেন একটি ছেলে যিনি আজকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এবং অভিনেতা আগুন।
– প্রিয়ডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.