সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ক্রীড়া / ফিরে দেখা ২০১৭: ঘটনাবহুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

ফিরে দেখা ২০১৭: ঘটনাবহুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

বাংলাদেশের শততম টেস্টে জয়, পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অনবদ্য জুটি, মিসবাহ-ইউনুসের বিদায়। ছবি: সংগৃহীত

দেখতে দেখতে শেষের পথে ২০১৭। পৃথিবী নামক গ্রহের বয়সের খাতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও একটি বছর। আগামী সপ্তাহে সবাই পা রাখতে যাচ্ছে ‘ব্র্যান্ড নিউ’ ২০১৮ সালে। নতুন বছরের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে ক্যালেন্ডারও। ২০১৭ সালের ক্যালেন্ডারের জায়গা হয়তো হবে স্টোররুম কিংবা অন্য কোথাও। তবে এই ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা যা ঘটেছে তা ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেটের বিশাল ইতিহাসে। চলুন একটু পেছন ফিরে দেখা যাক কেমন ছিল ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

কিউই পাখির টাইগার বধ

এই ছবিতেই প্রতিফলিত হচ্ছে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের অবস্থান। ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের প্রতিপক্ষ কেবল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররাই ছিলেন না। নিউজিল্যান্ডের জোরালো বাতাস, বিরুদ্ধ কন্ডিশন, আর অচেনা উইকেটও কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশের। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি; কোনও ফরম্যাটেই কেন উইলিয়ামসনদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। তিন ফরম্যাটের সিরিজেই বাংলাদেশকে শাসন করে ব্ল্যাকক্যাপরা। তবে বাংলাদেশের প্রাপ্তির খেরো খাতায় জ্বলজ্বল করছে সাকিবের নাম। ওয়েলিংটনে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান খেলেন ২১৭ রানের ইনিংস। যা টেস্টে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। দুঃস্বপ্নের সেই সফর শেষ হয়েছিল ২০ জানুয়ারি।

ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ টেস্ট

হায়দরাবাদের ঐতিহাসিক টেস্টে জয়ের হাসি ছিল বিরাট কোহলিদের মুখেই। ছবি: সংগৃহীত

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে ১৭ বছর। ১৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে মাত্র নয়টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আটটি টেস্টই অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। প্রতিবেশিরা যেন একটু বেশিই রুঢ় বাংলাদেশের প্রতি। মাত্র একবারই ভারত সফরে যেতে পেরেছে বাংলাদেশ। সেটা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেই সফর ছিল মাত্র একটি টেস্টের। যা অনুষ্ঠিত হয় হায়দরাবাদে। সেই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ২০৮ রানের ব্যবধানে হেরেছিল তৎকালীন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ঐতিহাসিক হায়দরবাদ টেস্টে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে চওড়া ছিল মুশফিকের ব্যাট। নিজেদের প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ২৬২ বলে ১২৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।

অস্ট্রেলিয়ার ভারত সফর

সবকিছু ছাপিয়ে আলোচিত হয়ে ওঠেছিল এই দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ফেব্রুয়ারিতে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ভারত গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই সিরিজের প্রতিটি টেস্টই ছড়িয়েছে উত্তেজনা। জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনার। যদিও এসবের আগেই বাঁহাতি অজি স্পিনার স্টিভ ও’কিফের ঝলকে পুনে টেস্টে স্বাগতিকদের ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দেন স্টিভেন স্মিথরা। ওই টেস্টে ও’কিফ একাই নেন ১২ উইকেট।

এরপর বেঙ্গালুরু টেস্ট। সেই টেস্টের প্রথম দিনই নাথান লায়নের ঘূর্ণিতে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ব্যস! সেটাই যেন তাঁতিয়ে দিল কোহলিদের। সেই টেস্টের দ্বিতীয়দিনের সকালের সেশনের ঘটনা। ব্যাট করছেন স্মিথ, বোলিংয়ে ডানহাতি পেসার ইশান্ত শর্মা। তার নিচু হয়ে আসা এক ডেলিভারিতে পরাস্ত হন স্মিথ। তখনই মজার এক কাণ্ড করে বসেন ইশান্ত। ভেংচি কাটেন স্মিথের দিকে তাকিয়ে।

স্লিপে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছিলেন কোহলি। সতীর্থের এমন কাণ্ডে বেশ জোরেই হেসে উঠেন তিনি। হাস্যরসে যোগ দেন আশেপাশে থাকা ভারতীয় ফিল্ডাররাও। স্মিথও এর উত্তর দিতে পিছপা হননি। সেই টেস্টেই এলবিডব্লিউ হয়ে রিভিউ নেবেন কিনা এমন পরিস্থিতিতে ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন স্মিথ। হয়েছেন সমালোচিত। এছাড়া কোহলি-স্মিথের বাকযুদ্ধ তো আলাদা করে স্পটলাইটটা কেড়ে নিয়েছিলই।

সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টে কাঁধে চোট পেয়ে খেলতে পারেননি অধিনায়ক কোহলি। কোহলির সেই ইনজুরি নিয়ে মজা করতে ছাড়েনি অজি ক্রিকেটাররা। আর তা মোটেও ভালভাবে নেননি কোহলি। সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়ে দেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে আর কোনও বন্ধুত্ব নয়।’

কলম্বোয় বাংলাদেশের ইতিহাস ও লঙ্কান ক্রিকেটের মৃত্যু!

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ছুটছেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: সংগৃহীত

মার্চে দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুই টি-টোয়েন্টি খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সেই সফর শুরু হয়েছিল সিরিজের প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানের বিশাল হার দিয়ে। তবে পরের টেস্টেই দুর্দান্তভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ। কলম্বোর পি সারা ওভালে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামে বাংলাদেশ। সেই টেস্ট ছিল বাংলাদেশের শততম টেস্ট। ইতিহাস গড়ার টেস্টটা জয় দিয়েই স্মরণীয় করে রেখেছেন সাকিব-মুশফিকরা। নিজেদের শততম টেস্টে লঙ্কানদের চার উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। উইনিং শটটি নেন তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। সিরিজ সেরার পুরস্কার ওঠে সাকিবের হাতে।

সেই হার চরম নাড়া দিয়েছিল লঙ্কান ক্রিকেটকে। শ্রীলঙ্কার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য শ্রীলঙ্কান আইল্যান্ড’ এই হারকে ঘোষণা করে লঙ্কান ক্রিকেটের মৃত্যু হিসেবে। শুধু তাই নয়, এপিটাফও প্রকাশ করেছিল সেই পত্রিকা।

সেই সফরেই আচমকা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে টসের সময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের কথা জানান মাশরাফি। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাট থেকে মাশরাফির বিদায়টা রাঙিয়েছিলেন তার সতীর্থরা। অধিনায়ককে দুর্দান্ত এক জয় উপহার দিয়েছিলেন সাকিব-তামিমরা।

পাকিস্তানের ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি মিসবাহ উল হক ও ইউনুস খান। দীর্ঘদিন এই দুজনের কাঁধে চড়েই এগিয়ে গেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট। ২০১০ সালে ফিক্সিং ইস্যুতে জীর্ণশীর্ণ পাকিস্তান দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মিসবাহ। এরপর পাকিস্তানকে তুলেছেন টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে। তার অধিনায়কত্বে ৫৬টি টেস্ট খেলে ২৬টিতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। গেল মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে বিদায় জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। একই ম্যাচে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন ইউনুস। সেই সিরিজেই প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

এই দুজনকে আর কখনও দেখা যাবে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায়। তবে সরফরাজ আহমেদ-ইয়াসির শাহরা তাদের এই দুই অগ্রজকে যেভাবে বিদায় দিয়েছেন, তা ক্রিকেটবিশ্ব মনে রাখবে অনেকদিন। বিদায়ী টেস্টে ইতিহাস গড়া জয় নিয়ে বীরের বেশে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়ার সৌভাগ্য কয়জনের হয়। নেতা, ব্যাটিং স্তম্ভ ও অভিভাবক; গেল এক দশকে পাকিস্তান দলের জন্য এই শব্দগুলোর সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন মিসবাহ ও ইউনুস।

শশাঙ্ক মনোহরের পদত্যাগ

শশান্ত মনোহর। ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালের মে মাসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শশাঙ্ক মনোহর। কিন্ত বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মে মাসে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন আইসিসির প্রথম স্বাধীন চেয়ারম্যান। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় তাকে। আইসিসির বোর্ড কমিটির সদস্যদের অনুরোধে ফেরেন শশাঙ্ক। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আইসিসির চেয়ারম্যান পদে দেখা যাবে তাকে।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

পাকিস্তানের উইনিং সেলফি। ছবি: সংগৃহীত

এই বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে পর্দা ওঠে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। ওয়ানডের শীর্ষ আট দলের অংশগ্রহণে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শিরোপা জেতে পাকিস্তান। অথচ শুরুর দিকে পাকিস্তানের পক্ষে বাজি ধরার লোক ছিল নগণ্য। সেই পাকিস্তানই একের পর এক মাচ জিতে জায়গা করে নেয় ফাইনালে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। কাগজে কলমে অথবা শক্তির বিবেচনায় ভারতের ধারেকাছেও ছিল না পাকিস্তান। কিন্তু সবাইকে অবাক করে সেই পাকিস্তানই প্রথমবারের মতো ঘরে তোলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা।

ফখর জামানের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ভারতকে ৩৩৯ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান। রান পাহাড় টপকাতে গিয়ে শুরুতেই মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। বাঁহাতি এই ফাস্ট বোলার আগুন ঝরানো বোলিংয়ে একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরান রোহিত শর্মা, শেখর ধাওয়ান ও ভারতের ব্যাটিং ভরসা বিরাট কোহলিকে। ব্যস! সেখানেই কুপোকাত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এই আসরে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। যা আইসিসির বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। এছাড়া আলাদা করে বলতে হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের অনবদ্য এক জুটি। সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকান সাকিব-মাহমুদউল্লাহ দুজনই।

টেস্ট পরিবারে নতুন দুই সদস্য

টেস্টের কুলীন পরিবারে দুই নতুন সদস্য আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

এতদিন টেস্ট খেলুড়ে দেশ ছিল দশটি। গেল জুনে একাদশ ও দ্বাদশ দল হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। জুনে বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই দুই দলকে টেস্ট ক্রিকেট খেলার লাইসেন্স দেয় আইসিসি। আফগান ও আইরিশদের আগে সর্বশেষ টেস্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই কুলীন পরিবারে পার করেছে ১৭ বছর।

টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও এখনও অভিষেক হয়নি আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ডের। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) বরাতে জানা গেছে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে তাদের। আর অভিষেক টেস্টে আয়ারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

তাইজুল-রাবাদার পাশে ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা

অভিষেকেই হাসারাঙ্গার ইতিহাস। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচ সব ক্রিকেটারের কাছেই বিশেষ কিছু। আর বিশেষ ম্যাচে বিশেষ কিছু করে ফেললে তার গুরুত্বটা বেড়ে যায় হাজার গুণ। তেমন কিছুই করেছেন শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনার ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু হয়েছে এ বছরের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে দিয়ে। অভিষেকেই হাসারাঙ্গার বাজিমাৎ! মাত্র ২.৪ ওভার বল করেই দেখা পেয়ে যান হ্যাটট্রিকের। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ৩৪ তম ওভারে এই কীর্তি গড়েন তিনি। পরপর তিন বলে সাজঘরে ফেরান তিন জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান ম্যালকম ওয়ালার, ডোনাল্ড তিরিপানো ও টেন্ডাই চাতারাকে। এটা ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ৪২তম হ্যাটট্রিক। যা অভিষেকে স্পিনার হিসেবে ষষ্ঠ ও কোনও লেগ স্পিনারের প্রথম হ্যাটট্রিক।

এই কীর্তি গড়ে তিনি নাম লিখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও কাগিসো রাবাদার পাশে। ২০১৪ সালে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নিজের অভিষেক ওয়ানডেতে চার বলে চার উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। পরের বছর মিরপুরেই নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন প্রোটিয়া পেসার রাবাদা।

মিরপুরে অজি বধের কাব্য

টেস্টে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া বধের পর মুশফিকদের উদযাপন। ছবি: সংগৃহীত

১১ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে বাংলাদেশে ফিরে এবারের অভিজ্ঞতা মোটেও ভাল হয়নি অজিদের। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারায় বাংলাদেশ। যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে সমানতালে অজিদের শাসন করেন তিনি। ম্যাচে একাই নেন দশ উইকেট।

পাকিস্তানে ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন

স্বাধীনতা কাপ দিয়ে দেশের মাটিতে ক্রিকেট ফেরানোর চেষ্টায় পাকিস্তান। ছবি: সংগ্রহীত

২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার টিম বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন থেকে নির্বাসিত হয় পাকিস্তান। এরপর থেকেই দেশের মাটিতে ক্রিকেট ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) কিন্তু দুইয়ে দুইয়ে চার মিলছিল না কিছুতেই। যদিও ২০১৫ সালে ঝুঁকি নিয়েই পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তাতে বিশেষ লাভ হয়নি।

পাকিস্তানের এই দৈন্যদশায় এগিয়ে যায় খোদ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট ফেরানোর লক্ষ্যে গেল সেপ্টেম্বরে বিশ্ব একাদশ নামের একটি দল পাঠায় আইসিসি। যে দলে খেলেছেন তামিম ইকবাল, ড্যারেন স্যামি, হাশিম আমলাদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। এই সফরে পাকিস্তান জাতীয় দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বিশ্ব একাদশ।

ঘরের মাটিতে ক্রিকেট ফেরা উপলক্ষ্যে বর্ণিল সাজে সেজেছিল পাকিস্তান। লাহোরের গাদ্দাফি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ঘিরে ফেলা হয়েছিল নিরাপত্তার চাদরে। নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয় স্বাধীনতা কাপ নামে মাঠে গড়ানো এই সিরিজ। এছাড়া কিছুদিন আগে পাকিস্তানের লাহোরে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে এসেছে শ্রীলঙ্কা। আইসিসি এবং পিসিবির আশা অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরবে পাকিস্তানে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘কিলার মিলার’

পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এভাবেই দর্শক হয়ে থেকেছেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা। ছবি:এএফপি

নয় বছর পর গেল সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে বাজেভাবে হারার পর দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে সফর শেষ করে বাংলাদেশ। শেষটা মোটেও ভাল হয়নি সাকিব-মুশফিকদের। ভাল হতে দেননি দক্ষিণ আফ্রিকার মারকুটে ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৩৫ বলে হাঁকান সেঞ্চুরি। যা টি-টোয়েন্টির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেই সেঞ্চুরি করার পথে তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে এক ওভারে টানা পাঁচটি ছক্কা মারেন মিলার। ছন্দে থাকলে মিলার আসলেই কিলার হয়ে উঠতে পারেন, ক্রিকেটবিশ্বকে সেই বার্তাটাই দিয়েছিলেন বাঁহাতি এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।

বেন স্টোকস ও নাইট ক্লাব কেলেঙ্কারি

বেন স্টোকস। ছবি: সংগৃহীত

তখন ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড। পরদিন ম্যাচ, এমন সময় বিশাল এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। ব্রিস্টলের এক নাইট ক্লাবে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে। তখন স্টোকসের সাথে ছিলেন তার সতীর্থ অ্যালেক্স হেলস। সেই রাতে পুলিশি জিম্মায় থেকে পরেরদিন মুক্তি পান তারা।

পরবর্তীতে ইংলিশ সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, সমকামী দম্পতিকে মদ্যপ ব্যক্তির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দ্য সানের এক ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, অনবরত দুই ব্যক্তিকে ঘুষি মারছেন স্টোকস।

স্টোকসের এমন কাণ্ড ভালভাবে নেয়নি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) শাস্তিস্বরূপ অ্যাশেজ সিরিজের জন্য ঘোষিত ইংল্যান্ড দল থেকে বাদ পড়েন সহ-অধিনায়ক স্টোকস। তবে ওয়ানডে সিরিজের জন্য দলে বিবেচিত হয়েছেন স্টোকস-হেলস দুজনই।

অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার

অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি ইংলিশরা। ছবি: সংগৃহীত

ক্রিকেটের সবচেয়ে আদি ও ঐতিহ্যবাহী দ্বৈরথ অ্যাশেজ। গেল পাঁচবারের মধ্যে চারবারই শিরোপা গেছে ইংলিশদের ঘরে। তবে এবার অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ খেলতে গিয়ে পাত্তাই পাননি জো রুট-অ্যালিস্টার কুকরা। সিরিজের প্রথম তিন টেস্টেই অজিদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন তারা। ফর্মে তুঙ্গে আছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। অন্যদিকে জো রুট সেট হয়েও বড় করতে পারছেন না নিজের ইনিংস। দুই দলের দুই অধিনায়কের পারফরম্যান্সেই প্রতিফলিত হচ্ছে এবারের অ্যাশেজের চিত্র।

বছর শেষে রাজত্ব রোহিত ‘হিটম্যান’ শর্মার!

বছর শেষে আলো ছড়িয়েছেন রোহিত শর্মা। ছবি: সংগৃহীত

ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করাটাকে যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন রোহিত শর্মা। একে একে হাঁকিয়েছেন তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি! যার সর্বশেষটি এসেছে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। সেদিন ছিল তার দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। এমন বিশেষ দিনে গ্যালারিতে স্ত্রীকে উপস্থিত রেখে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান দেখা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির। তার তিন ডাবল সেঞ্চুরির দুটিই এসেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অপরটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

এখানেই শেষ নয়! সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই যৌথভাবে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন ভারতের এই ওপেনার। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে ছুঁয়েছেন ডেভিড মিলারকে। গেল সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে টি-টোয়েন্টির দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম লেখান মিলার।

 

সূত্র:জুবায়ের আহমেদ তানিন-priyo.com;ডেস্ক।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ কারাগারে

নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদকে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/