মিয়ানমারে উত্পাদিত মরণনেশা ইয়াবা পাচার রোধ করতে সরকার বছরের পর বছর কঠোর পদক্ষেপ হাতে নিলেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার। ইয়াবা পাচার রোধে সরকার যতই কঠোর হচ্ছে, পাচারকারীরা ততই নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। এমনকি তারা জীবনের ঝুকি নিতেও দ্বিধারোধ করছে না। ইদানিং পাচারকারীরা নতুন নতুন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে অথৈই বঙ্গোপসাগর।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইয়াবা গডফাদাররা চোখের আড়ালে থেকে স্থল পথকে বাদ দিয়ে ইয়াবা পাচারের জন্য সাগরপথকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের কড়া নজরধারী, পথে পথে তল্লাশী ও নানান তত্পরতায় স্থলপথে ইয়াবা পাচার কঠিন হয়ে উঠেছে। কেননা গত বছরে টেকনাফে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের অভিযানে প্রায় ৫৫ লক্ষ ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। রাঘব-বোয়ালরা স্থলপথে তেমন সুবিধা করতে না পেরে ইয়াবা পাচারের নতুন রুট হিসেবে গভীর সাগরপথকে বেচে নেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বছরের মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে বিজিবি-র্যাবও কোস্টগার্ড সদস্যরা প্রায় ১৫ লক্ষ ইয়াবাসহ ৬/৭ জন আটক করে।
অন্য একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, সাগরপথে ইয়াবা পাচারে ব্যবহৃত হচ্ছে মাছ শিকারের নামে ফিশিং ট্রলিং। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বহনকারী ট্রলারগুলো আগে থেকে গভীর সাগরে নোঙ্গর করে থাকা এই ফিশিং ট্রলিংগুলো ইয়াবার চালান নিয়ে অনায়শে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরে ঢুকে পড়ে। এই ট্রলিংগুলো প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লক্ষ ইয়াবার চালান পাচার করে থাকে সূত্রে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ স্থল বন্দরের একজন আমদানী-রপ্তানীকারক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, টেকনাফের বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদার ঢাকা-চট্টগ্রামে অবস্থান করে এসমস্ত ফিশিং ট্রলিং দিয়ে ইয়াবা পাচার পরিচালনা করে যাচ্ছে। এই ফিশিং ট্রলিং’র অধিকাংশ মালিক টেকনাফের। তারা মাছ ধরার নামে ট্রলিংগুলো ব্যবহার করছে ইয়াবা পাচারে। এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এদিকে বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর বছরের শুরুতেই মাদকপাচার প্রতিরোধ ও মাদক সেবন থেকে মুক্ত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজ ও বর্তমান প্রজন্মকে মাদক থেকে মুক্ত রাখার জন্য বেশকিছু শ্লোগান দিয়ে লিপলেট, দেয়াল লিখন, সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। শ্লোগানের মধ্য রয়েছে, মাদক মুক্ত জীবন চাই, নেশার ফাঁদে পড়বে যারা-সবহারিয়ে মরবে তারা, এসো নেশা ছেড়ে কলম ধরি-মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি, খেলাধুলায় বাড়ে বল-মাদক ছেড়ে খেলতে চল, মাদক থেকে দূরে থাকুন, মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, মাদক সেবন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করুন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার ইত্যাদি।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মানজুরুল ইসলাম মাদক বিরোধী প্রচারণার বিভিন্ন সভায় বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির শত্রু, এদেরকে প্রতিহত করুন। প্রশাসনের পাশাপাশি তাদেরকে প্রতিহত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে মাদকগুলো আসছে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে ৭০ লক্ষ মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুন যুবক। বিভিন্ন মাদকাসক্তদের পাশাপাশি ৩০ লক্ষ মাদকাসক্ত হচ্ছে ইয়াবা সেবনকারী। তাই এই তরুণ ও আগামী প্রজন্মকে মাদকের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্ত রাখার জন্য সামাজিক ভাবে ও দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
You must be logged in to post a comment.