সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / মহেশখালীর দীনেশপুরে প্যারাবন নিধন করে করা হচ্ছে চিংড়ি ঘের

মহেশখালীর দীনেশপুরে প্যারাবন নিধন করে করা হচ্ছে চিংড়ি ঘের

শাপলাপুর ইউনিয়নের দিনেশপুর এলাকায় পাহাড় কেটে লবণ মাঠ ও প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের তৈরী

শহীদুল্লাহ্ কায়সার; কক্সভিউ :

কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের দিনেশপুরে নিধন করা হচ্ছে প্যারাবন। দিন দুপুরে স্কেভেটর দিয়ে প্যারাবন নিধন করে সেই জমিকে করা হচ্ছে চিংড়ী ঘেরে রূপান্তরের কাজ। মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক বিএনপি নেতা রশিদ মিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র সরওয়ার করছেন এই প্যারাবন নিধনের কাজ। এই কাজে তার সঙ্গি হয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন।

দীর্ঘদিন ধরে বিশাল জায়গা জুড়ে সরওয়ার প্যারাবন নিধনের তাণ্ডবলীলা চালালেও প্রশাসন নির্বিকার। উপজেলা প্রশাসন এমনকি উপকূলীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকেও প্যারাবন রক্ষায় নেয়া হচ্ছেনা কার্যকর কোন পদক্ষেপ। স্থানীয়দের অভিযোগ উল্টো উপকূলীয় বন বিভাগের বিরুদ্ধে। তাঁদের ভাষায় সরকারি এই দপ্তরের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে পরিবেশ বিধ্বংসী এই কাজ চালাচ্ছেন সরওয়ার।

গতকাল সরেজমিন দীনেশপুর গিয়ে দেখা গেছে, সাগর সংলগ্ন দীনেশপুরের বিশাল অংশজুড়ে নেই প্যারাবনের অস্তিত্ব। শুধু রয়েছে অসংখ্য গাছের শেকড় আর গোড়ালি। বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে প্যারাবনের মেরে ফেলা গাছের চিহ্ন। একটি স্কেভেটরের সাহায্যে চলছে প্যারাবন খননের কাজ। ইতঃপূর্বে খননকৃত প্যারাবনের জমিতে করা হচ্ছে লবণ চাষ। যে জমি থেকে কেটে ফেলা বড় বড় বাইন গাছ গুলোর গোড়ালি এখনো থেকে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কেটে ফেলা মূল্যবান বাইন গাছগুলো এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। প্যারাবনের বিভিন্ন স্থান জুড়ে চিংড়ী ঘের তৈরির জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে বড় বড় গর্ত। গর্ত থেকে উত্তোলন করা মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণের কাজে। শ্রমিকের সাহায্যে নিজে উপস্থিত থেকে এই কাজ পরিচালনা করছেন সরওয়ার এবং নুরুল আমিন। শুধু প্যারাবন নিধন নয়। প্যারাবন সংলগ্ন পাহাড়ের মাটিও ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণের কাজে। পাহাড়ের বেশ কিছু অংশ কেটে এর মূল্যবান গাছ লুট করাসহ মাটি এনে জুড়ে দেয়া হচ্ছে বাঁধের উপর। ফলে একদিকে যেমন প্যারাবন ধ্বংস করে উপকূলীয় এলাকাকে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বিপদজনক করা হচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড় কেটে নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

দীনেশপুরের স্থানীয় এক কিশোর জানায়, মাত্র পাঁচ মাস আগেও এই জমিগুলো খুব সুন্দর ছিলো। চারিদিকে ছিলো বাইন গাছ আর প্যারাবন। কয়েকমাসের ব্যবধানে সরওয়ার এবং নুরুল আমিন চিংড়ি ঘের করতে এই বন ধ্বংস এবং বনে থাকা বাইন গাছ কেটে ফেলে। মাঝে মাঝে সরকারি কয়েকজন মানুষ এলেও তাদের সঙ্গে কথা বলার পর আবার চলে যায়।

বুধবার প্যারাবন নিধনস্থলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নিধনের অন্যতম হোতা সরওয়ারের।

কেন প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলে, এই জমিগুলো আমাদের খতিয়ানভুক্ত। আমার পিতার নামে খতিয়ানভুক্ত ৪৭ একর জমিতেই আমি চিংড়ি ঘের নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে কোন সরকারি জমি নেই। ফলে এখানে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করতে আইনগত কোন বাধা নেই।

অন্যদিকে, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, “প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। যদি কারো খতিয়ানভুক্ত জমিতেও প্যারাবন বা বাইন গাছ থাকে, তাহলেও তা কাটা যাবে না। কেউ কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের পিতার মৃত্যু : বিভিন্ন মহলের শোক

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের পিতা হাজী নূর ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/