কিছুদিন আগেও দেশে ছিল না কোনো মোবাইল উৎপাদন বা মোবাইল অ্যাসেম্বলিং কারখানা। দেশের সাড়ে ১৩ কোটির বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীর হাতে শোভা পাওয়া হ্যান্ডসেটগুলোর সবই ছিল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা। বাইরে থেকে প্রস্তুত করে প্যাকেটিং অবস্থায় দেশে নিয়ে এসে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের হ্যান্ডসেটগুলো বিক্রি করতো।
তবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত মোবাইল কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন বিষয়ক নির্দেশিকা দেশীয় মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আসায় এই বছরটি ছিল দেশীয় মোবাইলের সূচনাকারী অধ্যায়। কারণ এ বছর মোবাইল উৎপাদনের (অ্যাসেম্বলিং) তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দেশের বাজারে চলতি বছরের ৫ অক্টোবর গাজীপুরের চন্দ্রায় প্রথম অ্যাসেম্বিলিং কারখানার উদ্বোধন করে দেশের প্রথম দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। এরই কয়েক মাস পর দেশের বাজারে উন্মোচিত হয় প্রথম মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত মোবাইল ওয়ালটন প্রিমো ই৮আই।
১০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে গাজীপুরের চন্দ্রায় ২ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে ওয়ালটনের মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ২০১৮ সালের প্রথম ছয়মাসের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ লাখ স্মার্টফোন উৎপাদন করা। সেখান থেকে পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে এক কোটি মোবাইল উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর মধ্যে ৩০ লাখ হবে স্মার্টফোন এবং বাকি ৭০ লাখ ফিচার ফোন।
মোবাইল কারখানার বাজারে অন্যান্য কোম্পানি-
সিম্ফনি- শুধু ওয়ালটন নয়, দেশে তৈরি মোবাইল উৎপাদনের তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে দেশীয় ব্রান্ড সিম্ফনি। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, দেশের বাজারে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরসি থেকে হ্যাঁ-বোধক ইশারা পেলেই ২০১৮ সাল থেকেই মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত মোবাইল বাজারজাত করবে এই প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে ২০০৮ থেকে দেশে ব্যবসা শুরু করে সিম্ফনি। ২০১০ সালের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। এখন পর্যন্ত সিম্ফনিই দেশের এক নম্বর মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড।
উই- রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে স্মার্টফোন তৈরির কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে আমারা হোল্ডিং লিমিটেড। তারা ‘উই’ ব্র্যান্ড নাম দিয়ে হ্যান্ডসেট বাজারজাত করবে। জানা যায়, এ কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে মাসে প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার ইউনিট স্মার্টফোন।
এলজি- যৌথ বিনিয়োগে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি এলজি ইলেকট্রনিকস। মেট্রোসেম নামে একটি কোম্পানি এলজির হয়ে দেশে প্লান্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা দেশীয় বাজারে জনপ্রিয় এ ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন উৎপাদনের পাশাপাশি শিগগির নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে আনাবে বলে পরিকল্পনা করছে।
দেশে মোবাইল কারখানা স্থাপনের নির্দেশিকা প্রকাশ-
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মোবাইল তৈরির কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে বিটিআরসি। নির্দেশিকা অনুসারে এ বিষয়ে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই ধরনের তালিকাভুক্তি সনদ দেওয়া হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির সনদ নিতে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে বিটিআরসিকে। সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। একই সঙ্গে তাদেরকে মানসম্মত লে-আউটের মাধ্যমে নিজস্ব একটি টেস্টিং ল্যাব করতে হবে। এসব ল্যাবে প্রয়োজনীয় সব টেস্টিং সুবিধাসম্পন্ন বিভিন্ন বিভাগ বা শাখা থাকতে হবে। অন্যদিকে যারা ‘বি’ ক্যাটাগরির সনদ নেবে তাদের লাগবে ১০ লাখ টাকা। এই ক্যাটাগরিতে তাদের নিজেদের টেস্টিং ল্যাব না থাকলেও চলবে। তবে তাদের ‘এ’ ক্যাটাগরির সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তাদের হ্যান্ডসেট উৎপাদন বা সংযোজনের যাবতীয় টেস্ট সম্পন্ন করাতে হবে। আবার ‘বি’ ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত সনদপ্রাপ্তরা তাদের যাবতীয় টেস্টিং সুবিধা বা যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ নিজস্ব ল্যাব স্থাপন করতে সক্ষম হলে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করাতে পারবে এবং তারা সনদ পাবে।
সব ক্যাটাগরির তালিকভূক্ত কোম্পানিরা তাদের নিজস্ব ল্যাব স্থাপনের আগ পর্যন্ত তাদের উৎপাদিত সেটগুলোর কমপক্ষে ৫ শতাংশ সেট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টেস্টিং ল্যাব থেকে গুণগত মান যাচাই করে প্রাপ্ত সনদ বিটিআরসিতে জমা দিতে হবে।
সূত্র:রাকিবুল হাসান-priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.