চেহারাসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলেও ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব। তাই ডিএনএ টেস্টের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গত সোমবার (১২ মার্চ) নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ৬৭ জন যাত্রী ও চার জন ক্রু নিয়ে ইউএস-বাংলার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৫১ জন নিহত হন। নিহতদের অনেকেরই শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। যাদের দেখে চেনার কোনও উপায় নেই। তাদের ডিএনএ টেস্টের নমুনা সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ থেকেও সাত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দু’জন ফরেনসিক কর্মকর্তা নেপাল গেছেন। এর আগেও রানা প্লাজা ও গুলশানে হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় নিহতদের শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
ফরেনসিক সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব মৃত ব্যক্তির পরিচয় স্বাভাবিক নিয়মে নিশ্চিত হওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্ট করেই তাদের শনাক্ত করতে হয়। এজন্য ডিএনএ টেস্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। ডিএনএ টেস্টের বিষয়টি সারা বিশ্বে স্বীকৃত। সর্বশেষ নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করবেন নেপাল ও বাংলাদেশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এরপর রক্তসম্পর্কীয় স্বজনদের নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। নিহত ও জীবিত স্বজনের নমুনা ম্যাচিং-এর মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির সঙ্গে বেঁচে থাকা স্বজনদের অনেক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে। নিহত ব্যক্তিকে সহজে শনাক্ত করা না গেলে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নানা আইনি জটিলতা নিরসনেও ডিএনএ টেস্টের কোনও বিকল্প নেই। ডিএনএ টেস্টের জন্য নিহত ব্যক্তির দাঁত ও হাড় নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে ভিকটিমের পরিবার বা রক্তসম্পর্কীয় স্বজনের রক্ত বা মুখের লালা সংগ্রহ করা হয়। কোনও কোনও সময় দুটিই সংগ্রহ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘যে বডি শনাক্ত করা যায় না, তখন আমরা ওই বডি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে থাকি। এজন্য ডিএনএ টেস্টের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তিদের দেহ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলেও কেবলমাত্র ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমেই সুনিশ্চিতভাবে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব।’ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহের তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত, বাবা-মা, সন্তান ও ভাইবোন। দ্বিতীয়ত, দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেটাও সম্ভব না হলে নিকটাত্মীয়দের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।’
সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বলেন, ‘যখন কোনও বডি চেনার উপায় থাকে না, তখন তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাধারণত ডিএনএ টেস্ট করা হয়। যেমন, নেপালে যারা মারা গেছেন, তাদের কারও কারও বডি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। দেখে চেনার কোনও উপায় নেই। সেক্ষেত্রে তাদের দেহাবশেষ থেকে এবং তাদের নিকটাত্মীয়দের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নমুনা ম্যাচিং করলে তখনই নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। ডিএনএ’র ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় মূলত শনাক্ত না হওয়া মৃত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার জন্য। যে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেপালে সিআইডির পক্ষ থেকে দু’জনকে পাঠানো হয়েছে নমুনা সংগ্রহের জন্য।’
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এনএফডিপিএল) ল্যাব প্রধান অধ্যাপক শরিফ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় অনেক মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছিল ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে। সেখানে নিহত অনেক শ্রমিকের ডিএনএ টেস্ট করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। যে কারণে ডিএনএ টেস্টের গুরুত্ব অনেক।
সূত্র:deshebideshe.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.