মুকুল কান্তি দাশ, বাঁশখালী থেকে ফিরে…..
লাখো পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের একমাত্র ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা উপজেলা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হাজার হাজার ভক্তের আগমনের পাশাপাশি এই মেলায় মুসলিমসহ অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও এককাট্টা হয়ে অংশ নেয়ায় এটি এখন অসম্প্রদায়িক মিলন মেলায় রুপ পেয়েছে। গত ৬০ বছরে তিন বছর অন্তর আয়োজিত ঋষিকুম্ভ মেলায় ফিরতি আয়োজনই বাড়ছে ভক্তকুল।
গত রবিবার ৫ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হওয়া ৮ দিনব্যাপী ঊনবিংশতম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলাটি শেষ হবে আগামী রবিবার।
বাঁশখালী ঋষিধাম ও চট্টগ্রামের তুলশী ধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ সমগ্র অনুষ্টানের পৌরহিত্য করেন। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার কোকদন্ডীস্থ ঋষিধামে প্রতি তিনবছর পর পর এই মেলার আয়োজন করে আসছে শ্রী গুরু সংঘ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেবরাজ ইন্দ্র যখন অমৃত কুম্ভের কলসি নিয়ে পলায়ন করছিলেন সেই সময় ওই কলসি ভারতের উজ্জয়িনী, নাসিক, প্রয়াগ ও হরিদ্বারে রাখেন। ভারতের এইসব রাজ্যে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এদেশের দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে ভারতের পূর্ণকুম্ভের অনুসরণে শিবকল্পতরু শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সাল থেকে বাংলাদেশে এ ঋষিকুম্ভের প্রচলন করেন।এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কোকদন্ডীস্থ ঋষিধামে তীর্থকামী মানুষদের কথা চিন্তা করে প্রতি তিনবছর পর পর শুভ ভৈমী একাদশী হতে মাঘী পূর্ণিমা ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার আয়োজন হয়ে আসছে।
শুক্রবার সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঋষিধামের ৩১একর জায়গা এবং আশপাশ এলাকার আরো কয়েক’শ একর জায়গা জুড়ে অুনষ্ঠিত হচ্ছে মেলা। কুম্ভমেলা উপলক্ষ্যে কুটির শিল্প, কারু শিল্প, মৃৎশিল্প, খেলনা, প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য সামগ্রীসহ অন্তত তিন হাজার দোকান বসেছে। কুম্ভ মেলায় আগত লাখ লাখ পূণ্যার্থীদের জন্য প্রতিদিন দুপুরে ও রাতে মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা করেছে মেলা কমিটি। কুম্ভ মেলা উপলক্ষ্যে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক ঋষি, সাধু-সন্ন্যাসী ও ভক্তের মিলন ঘটেছে। ঋষি কুম্ভ ও কুম্ভমেলাটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বলয় সৃষ্ঠি করেছেন। কিন্তু নিকটে বড় ধরনের পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় পূণ্যার্থীদের নিয়ে আসা শত শত পরিবহণ পার্কিং নিয়ে সামান্য বিড়ম্বনা হলেও মেলা কমিটির লোকজনের দক্ষ হাতের পরিচালনায় এই সমস্যা নজরেই পড়ছেনা।
ঋষিকুম্ভ মেলার সভাপতি লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বলেন, কুম্ভমেলা ভারতের ৪টি জায়গায় হয়। কিন্তু এ দেশের সকল মানুষের পক্ষে ভারতে গিয়ে পুণ্য অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় ভক্তদের সুবিধার্থে ভারতের সন্ন্যাসীদের বাঁশখালীতে আনার ব্যবস্থা করে এ মেলার প্রচলন করেন স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ। ঋষিকুম্ভে সমগ্র বিশ্বের কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়।
মেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত বলেন, এবারের ঊনবিংশতম ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় দেশ-বিদেশের অন্তত ২০ লাখের অধিক ভক্ত-পূণ্যার্থীর সম্মিলন ঘটবে। শ্রীগুরু পূজা, সমবেত প্রার্থনা, ধর্ম সম্মেলন, ঋষি ও বৈষ্ণব সম্মেলন এবং ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান, মহানামযজ্ঞ, পঞ্চঙ্গ স্বস্ত্যায়ন, গীতাযজ্ঞ ও দীক্ষাদানসহ নানা আয়োজন রয়েছে। এক কথায় মহামিলনমেলায় পরিণত হয়েছে কুম্ভমেলা প্রাঙ্গন।
You must be logged in to post a comment.