সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / লামায় বেপরোয়া বালু উত্তোলনে বিপর্যস্ত গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট

লামায় বেপরোয়া বালু উত্তোলনে বিপর্যস্ত গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট

লামা (বান্দরবান) ফাঁসিয়াখালী ফকিরাখোলা এলাকা হতে বালু তোলার দৃশ্য।

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :

বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালী ও সরই ইউনিয়নে বেপরোয়া বালু উত্তোলন এবং ভারী গাড়ি দিয়ে বালু পরিবহনের কারণে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইউনিয়নের সকল গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে সরকার দলীয় নেতারা জড়িত থাকায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ফকিরাঘোনা হতে হারগাজা-ডুলহাজারা রোড দিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ গাড়ি বালু পাচার হচ্ছে। ফাঁসিয়াখালী ছড়া হতে কবিরার দোকান হয়ে লামা-চকরিয়া রোড দিয়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ গাড়ি ও বগাইছড়ি খাল হতে বগাইছড়ি-ডুলহাজারা রোড দিয়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৯০ গাড়ি বালু পাচার হচ্ছে।

লামা (বান্দরবান) ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হারগাজা রোডের দৃশ্য।

ট্রাক ড্রাইভাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গড়ে প্রতিটি বালুর লোড গাড়ির ওজন ১৫ থেকে ২৭ মেট্রিক টন। লামা সড়ক ও জনপদ বিভাগের সুপারভাইজার রবি চাকমা বলেন, গ্রামীণ রাস্তাগুলো ব্রিক দিয়ে করা এবং ব্রিজ কালভার্টগুলো পরিমিত ওজন নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে নির্মাণ করা হয়ে থাকে। অতি পরিমাণের লোড গাড়ি চলাচল করায় অতি দ্রæত রাস্তা, ব্রিজ কালভার্ট সমূহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের গুটি কয়েক প্রভাবশালী নেতা জড়িত। প্রতিটি বালুর গাড়ি থেকে প্রশাসনের কথা বলে টাকা আদায় করা হচ্ছে। যাদের কারণে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। সরকার প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও সংষ্কার করলেও বছরের দুই তিন মাস বালু উত্তোলন করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট গুলো নষ্ট করছে বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কোথাও নেই বালুর মহাল। প্রতিদিন পাচারকৃত কয়েকশত গাড়ি বালু হতে কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা সরকার। নাম প্রকাশ না করা সত্তে¡ এক বালু ব্যবসায়ী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সম্প্রতি ২০ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করে নিলাম দিয়েছেন। নিলামের ২০ হাজার ঘনফুট বালুর কাগজ দেখিয়ে পাচার হচ্ছে কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু। এই যেন মগের মুল্লুক। নদী, ছড়া ও খাল থেকে বালু উত্তোলনের কারণে দু’পাড় ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তৃর্ণ এলাকা এবং ফসলের মাঠ। ধসে পড়েছে কয়েকটি কালভার্ট ও আরো ধসে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে ইউনিয়নের বড় বড় কয়েকটি ব্রিজ। কোন প্রকাশ অনুমতি ছাড়া রাজস্ব না দিয়ে কিভাবে বালু পাচার হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এইসব অবৈধ বালু ব্যবসা গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া, লোহাগাড়া উপজেলার লোকজন।

বালু ব্যবসার সাথে জড়িত ফাঁসিয়াখালী আওয়ামীলীগ নেতা নুর হোসেন বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নিলাম দেয়া কাগজ মূলে বালু নিয়ে যাচ্ছি। নষ্ট হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট গুলো পুণরায় সরকারের পক্ষ থেকে নির্মাণ করে দেয়া হবে।

ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, বালু বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। উপজেলা প্রশাসন বলতে পারবে।

লামা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সায়েদ ইকবাল বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার লোকজন। তাদেরকে নিষেধ করেও বন্ধ করা যাচ্ছেনা। আমাদের অবৈধ বালু উত্তোলন অভিযান চলমান রয়েছে।

লামা উপজেলার সীমানায় অবৈধ প্রবেশ করে চকরিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার লোকজনের বালু উত্তোলন বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, অন্য উপজেলা হতে লামায় বেআইনীভাবে প্রবেশ করে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। সকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের আইনে আওতায় আনা হবে।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামায় জমি নিয়ে বিরোধে জের ধরে ১ জনকে কুপিয়ে খুন, আহত ৭

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বান্দরবানের লামা উপজেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষের ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/