মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :
পার্বত্য বান্দরবানের সবচেয়ে জনবহুল, বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা লামা। প্রায় ২লাখ মানুষের বসবাস অত্র উপজেলায়। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা, সরকারের নিয়মিত তদারকি না থাকায়, শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো সমস্যা, আসবাবপত্র সংকট, কিছু শিক্ষকদের একই স্থলে দীর্ঘদিন অবস্থান, কোচিং বাণিজ্য, সরকারী নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত ফি আদায়, আসন সীমিত ও শিক্ষকদের নানান অনিয়মের কারণে ভেঙে পড়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। একই চিত্র লামা উপজেলার মাদ্রাসা গুলোতে।
লামা উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা সহ মোট মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১টি। মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৬৬১জন। ২০১৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে ১হাজার ২০জন ছাত্র ও ১হাজার ৪৫৪জন ছাত্রী মোট ২ হাজার ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী পাস করে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু তিন এর এক ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ আছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে। বাকী শিক্ষার্থীরা শুধু মাত্র আসন স্বল্পতার কারণে ঝরে পড়ছে। এই দায় কার?
লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, তিন-চারটির বেশি ক্লাশ হচ্ছে না অত্র বিদ্যালয়ে। ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থী। রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো সমস্যা, আসবাবপত্র সংকট, কিছু শিক্ষকদের একই স্থলে দীর্ঘদিন অবস্থান, কোচিং বাণিজ্য, সরকারী নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত ফি আদায়, আসন সীমিত ও শিক্ষকদের নানান অনিয়মের সমস্যা। দীর্ঘ দিনের অর্জিত সুনাম হারাতে বসেছে লামা উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়টি স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের লেখাপড়া অগ্রগতি, ভাল ফলাফল, শিখন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারায় কিছু বিশ্বাসের অবস্থান দখল করে নিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। তবে রয়েছে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো সমস্যা, আসন সীমিত ও আসবাবপত্র সংকট।
লামা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি কয়েক বছর যাবৎ জেএসসি ও এসএসসিতে ধারাবাহিকভাবে ফলাফল খারাপ করায় অতীতের সুনাম হারাতে বসেছে। প্রশাসনের নখদর্পনে থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা ব্যবস্থার এই অবনতি ভাবিয়ে তুরেছে এলাকার অভিভাবকদের।
লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা বান্দরবার জেলার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে মাদ্রাসার প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা, সরকারের নিয়মিত তদারকি না থাকায়, শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো সমস্যা, আসবাবপত্র সংকট, কিছু শিক্ষকদের একই স্থলে দীর্ঘদিন অবস্থান, কোচিং বাণিজ্য, সরকারী নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত ফি আদায়, আসন সীমিত ও শিক্ষকদের নানান অনিয়মের কারণে দারুণ ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমের। এছাড়া অন্যান্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতেও প্রায় একই সমস্যা বিরাজমান রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
মাধ্যমিক শিক্ষার অব্যবস্থাপনা নিয়ে লামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মচারী স্বল্পতা থাকার কারণে সঠিকভাবে তদারকী করা যায়নি। তাছাড়া শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো সমস্যা, আসবাবপত্র সংকট, গুটি কয়েক শিক্ষকের উদাসীনতা, কোচিং বাণিজ্যকে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ। আশার কথা হচ্ছে, সরকার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা গুলো পার্বত্য জেলা পরিষদের অধিনে দেয়ায় আগে তুলনায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।
You must be logged in to post a comment.