কক্সবাজার উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় বঙ্গোপসাগরের বেড়িবাধে মগনামা উজানটিয়ায় ব্যাপক ভেঙ্গে ও পেকুয়া সদরের পুরাতন ভাঙ্গা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জানা যায়, উজানটিয়ার ঠেকপাড়ায় নতুনভাবে ৩টি অংশে বেড়িবাধ ভেঙ্গে গেলে ১০টির অধিক গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হযেছে।
এদিকে মগনামা লঞ্চঘাটের উত্তর পাশে শরৎঘোনা এলাকায় নতুন করে ৫০ফুটের মতো বেড়িবাধ ভেঙ্গে গিয়ে নতুনভাবে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, এছাড়া মগানামা খালারপাড়া, কাকপাড়া, কাজীরপাড়া হয়ে মাগনামার পূর্ব পাশ পর্যন্ত সমুদয় চিংড়িঘের একাকার হয়েগেছে। ৪দিন ধরে পেকুয়া সদরের ২০টিগ্রাম জোয়ারভাটার শিকার হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদে চরম অনিশ্চয়তা দেখাদিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২৯আগষ্ট পেকুয়ার মগনামা কাকপাড়ায় ৩টি পয়েন্টে নতুনভাবে বেড়িবাধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে চিংড়িঘের ও গ্রামীণ সড়ক সহ শতাধিক বসতঘর প্লাবিত হয়েছে। ৩০আগষ্ট উজানটিয়ার ঠেকপাড়ায় পূর্ণনির্মিত বেড়িবাধ ৪০ফুট মত ভেঙ্গে গিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
এদিকে ২দিন ধরে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সিরাদিয়ায় গত বন্যায় ও ঘূর্ণিঝড় কোমনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে জোয়ারের পানি ঢুকে পেকুয়া সদরের সিরাদিয়া নন্দীর পাড়া, গোয়াখালী বাইম্যাখালী, সিকদার পাড়া, হরিণাফাড়ি, সরকারীঘোনা, তৈল্যাকাটা, মৌলভী পাড়া, সুতাবেপারী পাড়া, ছৈরভাঙ্গা, নাপিতার ঘোনা, মুড়ারপাড়া, মগঘোনা, উজিরার ঘোনা, চৌধুরীর ঘোনা, গুইন্যাঠেয়ারা. মাতবরপাড়া সহ ২০টি গ্রামে গত ৪দিন ধরে জোয়ারভাটার অব্যাহত থাকায় বীজতলা গ্রামীন সড়ক ও শতাধিক বসতঘর পানির নীচে তলিয়ে গেলে এসব এলাকায় চলতি আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়েগেছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, চলতি পূর্ণিমার জোয়ারের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩থেকে ৪ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ বেড়িবাধ কয়েকদফা বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে মগনামর কাকপাড়া, শরৎঘোনা উজানটিয়ার ঠেকপাড়া, মালেকপাড়া, রুপালী বাাজার, মিয়াজি পাড়া, মধ্যম উজানটিয়া মৌলভী পাড়, জৈনদ্দিন পাড়া, ফেরাসিঙ্গাপাড়া, পশ্চিম উজানটিয়া করিমদাদ মিয়ার ঘাট এলাকায় পেকুয়া সদরের মাতামুহুরী নদীর বাঙ্গোজারা, রাজাখালী ইউনিয়নের বখশিয়াঘোনা, সুন্দরী পাড়া সহ বেশ কিছু অংশে বেড়িবাধ মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হয়েপড়ে। সাগরতীরবর্তী এসব ইউনিয়নের ১৫টি স্পটে ১২শ ফুট দৈর্ঘের বিধ্বস্ত বেড়িবাধ দ্রুত নির্মাণের জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩০লাখ টাকা করে দুদফার ৬০লাখ টাকার জরুরী বরাদ্দ ঘোষনা করে ইতিমধ্যে মাতামুহুরী নদী ও মগনামা উজানটিয়া পেকুয়া সদর ও রাজাখালীর বিধ্বস্ত বেড়িবাধ পূর্ণনির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই নতুন করে বেড়িবাঁধ আবারো ভেঙ্গে গেলে বিপদ দেখা দিযেছে। দীর্ঘ ১মাস ধরে পেকুয়া সদরের সিরাদিয়ার ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাধ পূণ:নির্মাণ না করায় বর্তমানে জোয়ারভাটা অব্যহত রয়েছে। জরুরী বরাদ্দের কাজ গুলো অতি নিম্নমানের করায় মগনামা ও উজানটিয়ায় পূণ:রায় ভেঙ্গে গেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছে। উজানটিয়া মালেক পাড়ার বাসিন্দা সাবেক এম.ইউপি এমজারুল হক বলেন, বার বার জোয়ারের স্রোতে বেড়িবাধ ভেঙ্গে গেলে স্থানীয় জমি ও চিংড়িঘেরের মালিকদের কাছ থেকে কানি প্রতি ২হাজার টাকা করে প্রায় ২২লাখ টাকা উত্তোলন করে স্থানীয় চেয়ারম্যান বেড়িবাধটি নির্মাণ করলেও ঠেকসইভাবে কাজ না করাতে স্বাভাবিক জোয়ারের স্রোতে আবারো তৃতীয়বারের মতো বেড়িবাধ ভেসে গিয়ে জোয়াভাটা চলছে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, উজানটিয়া মগনামা দুর্গম এলাকা ও সাগরতীরবর্তী হওয়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বেড়িবাধ নির্মাণের সময় যথাযথ তদারকি না করায় জরুরী বরাদ্দের কাজ সময় মতো নির্মাণ হয়নি যার ফলে পেকুয়ার লোকজনকে জোয়ারভাটার শিকার হতে হলো। হাজার কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে। পেকুয়া সদরের লোকজনের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
You must be logged in to post a comment.