মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া:
লবণবোঝাই মিনিট্রাক ও যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের (হাইয়েস) মুখোমুখি সংঘর্ষে জখম ও দগ্ধ হয়ে শিশুসহ তিনজন নিহত ও ১৫জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সাথে সাথে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে মাইক্রোতে আগুন ধরে গেলে মর্মান্তিক এ হতাহতের ঘটনাটি ঘটে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাং গয়ালমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মাইক্রোতে দগ্ধ হয়ে নিহত তিনজনের মধ্যে একজন পুরুষ, একজন মহিলা ও ৮বছর বয়সী শিশু কন্যা। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত নিহতদের মধ্যে পুরুষের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম কমল তালুকদার (৪৫)। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ফকিরখিল এলাকার বাসিন্দা ও মৃত হিমাংশু তালুকদারের ছেলে বলে ওসি তদন্ত কামরুল আজম নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া অপর শিশুসহ মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কাজলি তালুকদার (৪৫), তার মেয়ে শীলা তালুকদার (১২), কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও মাইজ পাড়ার আবদুর রহমানের মেয়ে জন্নাতুল মাওয়া (১৫) ও তার দাদি রাবেয়া বসরী (৬০), চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ফকিরদিীপা তালুকদার (২৫)।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে জেলার উখিয়া উপজেলার কোটবাজার সোনার পাড়া নুর আহমদের ছেলে মাহমুদুল হক (২৫), চকরিয়ার হারবাংয়ের মিলন ধরের ছেলে অসীম ধর (৪০), ফাঁসিয়াখালীর ছৈয়দ আলমের ছেলে মিজানুর রহমান (১৮), বমুবিলছড়ির আবদুল আলিমের ছেলে সিজার (২০), একই এলাকার আবদুস ছমদের ছেলে করিম (২৭), পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামার হরিণজিরি এলাকার মোঃ কালুর ছেলে নুরুল আলম (৫০), মহেশখালীর হোয়ানক এলাকার মোস্তাক আহমদের ছেলে সুলতান আহমদ (৪০), মাতারবাড়ীর উত্তর রাজঘাট এলাকার মৃত সদর আমিনের ছেলে নুরুল আমিন (৩৪) ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার আবু তাহেরের ছেলে মোহাম্মদ শওকত (৩৫)কে।
এছাড়া ১০-১১ মাস বয়সি জখমি এক শিশু চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার কোন নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.মোহাম্মদ ছাবের বলেন, দুর্ঘটনায় দগ্ধ ও হাত-পা ভেঙ্গে আহতদের মধ্যে শিশুসহ ৫ জনের অবস্থা শংকটাপন্ন হওয়ায় রেফার করা হয়েছে। তাদের অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজন পাওয়া না যাওয়ায় হাসপাতালের দরিদ্র তহবিলের টাকায় এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ।
প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল আজম বলেন, যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল। গয়ালমারায় পৌছলে বিপরীতমূখী লবণবোঝাই মিনিট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ ঘটে মাইক্রোতে আগুন ধরে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নিরাপত্তায় থানা ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পাশাপাশি চকরিয়া পৌরশহর থেকে দমকল বাহিনী গিয়ে মাইক্রোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুর্ঘটনার পর প্রায় ১ ঘন্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিলো। পরে স্থানীয় জনতার সহায়তায় পুলিশ গাড়ি দুটি সড়কের পাশে সরিয়ে নিলে ফের যান চলাচল শুরু হয়। পরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর।
ওসি প্রভাষ ধর বলেন, অজ্ঞাত মরদেহ দুটির পরিচয় উদঘাটনে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের বিভিন্ন থানা পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পরিচয় পাওয়া গেলে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবার সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
You must be logged in to post a comment.