সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / নির্যাতিত রোহিঙ্গারা মিশে যাচ্ছে লোকালয়ে

নির্যাতিত রোহিঙ্গারা মিশে যাচ্ছে লোকালয়ে

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা এদেশে এসে তাদের খাদ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে মিশে যাচ্ছে। ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের মংডুর উত্তরে তিনটি সেনা ছাউনিতে সশস্ত্র বিদ্রোহী হামলায় ৯ জন সেনা ও ৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। এঘটনায় বিদ্রোহী তল্লাসীর নামে বর্মী সেনা পুলিশ ও রাখাইন যুবকেরা মংডুর ১৮টি রোহিঙ্গা অধ্যূষিত গ্রামে হামলা চালিয়ে দমন নিপীড়ন, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়ায় এসব রোহিঙ্গারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। নিঃস্ব এসব রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে পালিয়ে আসে। সীমান্তের বিজিবি’র কড়া নিরাপত্তার সত্ত্বেও প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং বস্তি ও বালুখালীর বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে।

১১ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে স্বপরিবারে পালিয়ে এসে উখিয়ার কুতুপালং বস্তি ও বালুখালীর বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের উপর প্রশাসনিক কোন নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এরা অবাধে বিচরণ করছে। সুযোগ বুঝে বস্তি ছেড়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বসবাসকারী তাদের নিকটাত্মীয় স্বজনদের কাছে, মিশে যাচ্ছে লোকালয়ে। পরবর্তী যেকোন সময়ে এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর একটি নীতিগত পরিবেশ সৃষ্টি হলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লোকালয়ে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনটি মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।

শনিবার সকালে কুতুপালং বস্তি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমারের মংডু নাইচ্ছংপাড়া গ্রামের আলি আজগর কবিরাজ (৫৫) পরিবার পরিজন ও সরঞ্জামাদি নিয়ে সড়কের কিনারায় অপেক্ষা করছে। জানতে চাওয়া হলে ওই কবিরাজ জানায়, মরিচ্যা গরুর বাজার এলাকায় তার আত্মীয় স্বজন রয়েছে। সেখানে চলে যেতে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছে। এভাবে অসংখ্য রোহিঙ্গা পরিবার প্রতিদিন কুতুপালং বস্তি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানায়, কুতুপালং বস্তির ঠিকানায় এসে রোহিঙ্গারা প্রথমে কয়েকদিন আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে অধিকাংশ রোহিঙ্গা কাউকে না জানিয়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, অনিবন্ধিত ও সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অবাধ বিচরণ করার সুযোগ পেয়ে তাদের পছন্দের জায়গায় চলে যেতে সক্ষম হচ্ছে। যেহেতু এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তেমন কোন দায়ী দায়িত্ব নেই বললে চলে। একথার সত্যতা স্বীকার করে ক্যাম্প ইনচার্জ শামশুদ্দোজা  জানান, তিনি শুধু নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ দিচ্ছেন ইউএনএইচসিআর।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ক্যাম্প ইনচার্জ জানান, তাদের ব্যাপারে তার কোন দায় দায়িত্ব নেই। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে ক্যাম্প পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা তাদের ইচ্ছামত চলাফেরার সুযোগ পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে। এমনকি বিদেশেও অনেক রোহিঙ্গা চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটকের ঘটনাই প্রতিয়মান হয়।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিরাপদ অবস্থান নেওয়াটা দেশ ও জাতির জন্য একদিন হুমকি হয়ে দাড়াঁতে পারে। তাছাড়া সরকারের সদিচ্ছায় ও কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হলে তখন কিন্তু অধিকাংশ রোহিঙ্গা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। তাই প্রশাসনের উচিত এই মুহুর্তে অনুপ্রবেশকারী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের উচিত।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের পিতার মৃত্যু : বিভিন্ন মহলের শোক

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের পিতা হাজী নূর ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/