শরত্ ঋতুর শেষ পর্যায়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। দিনে প্রচন্ড গরম এবং শেষ রাতে হালকা শীত অনুভব হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে চকরিয়ায় বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও ভাইরাস রোগ। ফলে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠাই নেই অবস্থা। সিট ছাড়িয়ে মেঝেতেও রোগীদের ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত নার্স, ঔষধ ও পরীক্ষা সরঞ্জাম না থাকায় চিকিত্সা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিত্সকদের।
২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সিট ও ফ্লোরে রোগীদের বেসামাল অবস্থা। কয়েকটি সিটে একই পরিবারের একাধিক রোগীও রাখা হয়েছে। বহির্বিভাগেও ছিলো অতিরিক্ত রোগীর চাপ। এতে সবচেয়ে বেশী দুরাবস্থায় পড়ে নার্সরা। সিংহভাগ রোগীকেই হাসপাতালের ঔষধ ছাড়াও ফার্মেসী থেকে কিনতে হয়েছে। এক্স-রে করতে ছুটতে হয়েছে বাণিজ্যিক ল্যাবে। ফলে দরিদ্র পরিবারের রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিত্সা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। অনুরুপভাবে উপজেলার বেসরকারী ইউনিক হাসপাতাল, জমজম হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, ডিজিটাল হাসপাতার, মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল, মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রীষ্টান হাসপাতালসহ প্রাইভেট চিকিত্সকের কাছেও ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও ভাইরাস রোগীর ভীড় দেখা যায়। হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোরে রোগী ভর্তি ছিলো ৯৮জন। এরপূর্বে ২৭ সেপ্টেম্বর ৮৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ৭৮জন রোগী ভর্তি হওয়ায় ফ্লোরিং করেও থাকতে হয়েছে। মঙ্গলবার বহির্বিভাগে চিকিত্সা নিয়েছে ২৪১জন রোগী। ততমধ্যে ১২০ জনই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী। ভর্তি হওয়া ৯৮ জনের মধ্যে ২৩জন নিউমোনিয়া ও ২০জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ছিলো।
চকরিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মোহাস্মদ ছাবের বলেন, প্রতিবছরই এসময়ে দিনে প্রচন্ড গরম ও শেষ রাতে ঠান্ডা পড়ার পাশাপাশি গ্রামীণ লোকজনের স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব থাকায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। পাশাপাশি এবার তীব্র গরমের মাঝে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোরবানীর মাংস খাওয়ায় এবং বসত ঘরের আশপাশ অপরিচ্ছন্ন রাখায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, যোগাযোগ ক্ষেত্রে সুবিধা থাকায় চকরিয়া হাসপাতালে শুধুমাত্র চকরিয়া নয় নিকটবর্তী পেকুয়া, মহেশখালী, বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলা থেকে প্রতিদিনেই রোগী আসে চিকিত্সা নিতে। কিন্তু এই হাসপাতালে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে রোগীর চাপ বেশী হলেও উপজেলা কৌটা ভিত্তিক ঔষধ বরাদ্দ দেয়ায় পর্যাপ্ত ঔষধ দেয়া যায়না রোগীদের। জনসংখ্যা অনুপাতে ঔষধ বরাদ্দ হলে এ সমস্যা হতো না।
এছাড়া হাসপাতালে চিকিত্সকের ২১টি পদের মধ্যে ৪টি ও নার্সের ১৫টি পদের মধ্যে ৯টি শূন্য রয়েছে। অত্যাধিক সমস্যায় ভোগতে হচ্ছে নার্স স্বল্পতার কারণে। পাশাপাশি হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়া ৩০০এমএম এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। এই মেশিন মেরামত করতে ২১ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে বলে সিমেন্স কোম্পানীর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মেশিন মেরামত হলেও সচল রাখা যাবে না দাবী করে আরএমও ডা: ছাবের ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা:আবদুস সালাম বলেন, ৩০০এমএম মেশিন ব্যবহারের জন্য পুরুত্ব (ফিটনেস) সম্পন্ন দেওয়াল না থাকায় এ মেশিন ব্যবহারের সাথে সাথে চতুপার্শ্বে রশ্মি ও কম্পন ছড়িয়ে পড়ে। তাই ২০০ এমএম এক্স-রে মেশিন ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান (এক্স-রে) বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। ডা: সালাম আরো বলেন, ১৭জন চিকিত্সক বিশ্রামহীন সেবা দিলেও নার্স স্বল্পতার কারণে রোগীদের সন্তুষ্ট করা যাচ্ছে না। প্রায় জরুরী নার্সের শূন্যপদ পুরণ করা প্রয়োজন।
You must log in to post a comment.