কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে যুবলীগ নেতা নামধারী মেম্বার কামাল কর্তৃক প্রকাশ্য দিবালোকে মারধর ও সর্বশান্ত হওয়া প্রবাসী জাহেদ আলম অভিযুক্ত কামালের বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় অভিযোগ দিলেও রাজনৈতিক চাপের কারণে এজাহার হিসাবে রেকর্ড করছেনা। ফলে অভিযুক্ত কামালের অব্যাহত হুমকির মূখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে উক্ত প্রবাসী। অর্থ ও মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ায় স্ত্রী ও ২ শিশু কন্যা নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর দিনাতিপাত করছে প্রবাসী জাহেদ আলম। কামালের নানা অপকর্মে খোদ দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের ভাবমূর্তি ঘুমধুমে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঘুমধুম ইউনিয়ন সভাপতি ও মাত্র ১৪ মাসের মেম্বারের দায়িত্ব পালনকালে সরকার দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিরো থেকে হিরো হয়েছে। দলের অশৃঙ্খল কতিপয় নেতা-কর্মী ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে ঘুমধুমে গড়ে তুলেছে আলাদা বাহিনী। ওই বাহিনীর প্রধান কামালের নেতৃত্বে খাস জায়গা জমি দখল করে বিক্রি, ঘুমধুম-তুমব্র“ সড়কের কয়েক লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে আত্মসাৎ, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা, বিচার শালিসের নামে অর্থ আদায়, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের দায়সারা কাজ সম্পাদন করে অর্থ তছরুপ, নিরীহ, ফরিয়াদী লোকজনের উপর বিচারিক রায় চাপিয়ে দেওয়া অন্যথায় কথা-কথায় মারধর সহ বহুমুখী অপকর্মে ঘুমধুমের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন কামালের হাতে এক প্রকার জিম্মী হয়ে আছে। সরকার দলের নেতা, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার, আলাদা-বাহিনী সবকিছু মিলিয়ে অঘোষিত সম্রাট কামাল তার হাতে নানা ভাবে নিগৃহিত হয়েছে সাধারণ লোকজন থেকে শুরু করে আপন চাচা গুলাম সোবহান মেম্বার, চাচি খালেদা মেম্বার, চাচা আব্দুল আলিমসহ আরো অনেকেই।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘুমধুম বেতবনিয়া বাজার পাড়ার মৃত সোলাইমানের পুত্র জাহেদ আলম দীর্ঘ পনের বছর প্রবাসে ছিল। প্রবাস জীবনে অর্জিত অর্থ দিয়ে একটি বাড়ি ও স্বল্প জায়গা জমি ক্রয় করে। উক্ত জায়গা জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে জাহেদ আলমের আপন সহোদর ভাই আবুল কালাম, নুরুল আলম ও সাইদী আলমের। ভাইগণ জাহেদ আলমের জায়গা জমি জবর দখল চেষ্টা পায়তারা করে আসছিল বিগত ৩ বছর ধরে। এই নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে শালিস বিচারও হয়। বিচারকের মধ্যে মেম্বার কামালও একজন। কামাল জাহেদ আলমের প্রতিপক্ষ ভাইদের পক্ষ নিয়ে জাহেদ আলমের নিকট থেকে দফায় দফায় লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করে। আরও টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ২৩ আগষ্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাত টায় জাহেদ আলমের অপর ভাইদের পক্ষ নিয়ে মেম্বার কামাল ১০/১২ জন সংঘবদ্ধ ধারালো অস্ত্রধারী লোকজন নিয়ে জাহেদ আলমের বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রী সেলিনা আকতারকে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় জাহেদ আলমের শিশু কন্যা সুমাইয়া (৭) কে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়। জাহেদ আলম ও তার স্ত্রীকে জিম্মি করে ভাইগণ বাড়িতে রক্ষিত নগদ ষোল হাজার টাকা, আড়াই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান মালামালসহ লক্ষাধিক টাকা লুটে নেয়।
স্থানীয়ভাবে এঘটনা আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা চালিয়ে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হওয়ায় জাহেদ আলমের স্ত্রী সেলিনা আকতার (২৫) বাদী হয়ে নুরুল আলম, আবুল কালাম, সাইদী আলম, শাকের আলমসহ এজাহার নামীয় ৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন কে আসামী করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ২৫ আগষ্ট মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং- ০৮/১৫, তারিখ: ২৫/০৮/২০১৫ইং। মামলায় দুই আসামী গ্রেপ্তার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ আগষ্ট সকাল ১১ ঘটিকার সময় জাহেদ আলম পুনরায় প্রবাসে গমন করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা কালে বেতবনিয়া বাজারে পৌঁছলে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা মেম্বার কামাল ও তার সংঘবদ্ধ লোকজন অতকির্ত ভাবে জাহেদ আলমের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে জাহেদ আলমকে বিবস্ত্র ও দিগম্বর করে পুরো বেতবনিয়া বাজার ঘুরিয়ে শারীরিক ও মানসিক নাজেহাল করে।
এ সময় জাহেদ আলমের পকেটে থাকা নগদ দেড় লক্ষ টাকা সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি মোবাইল ফোন সেট ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ছিনিয়ে নেয়। জাহেদ আলমকে উদ্ধার করে প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনা তাৎক্ষণিক নাইক্ষ্যংছড়ি থানাকে অবহিত করে।
ওই দিন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আবুল খায়ের উখিয়া হাসপাতালে সন্ত্রাসী আক্রান্ত জাহেদ আলমকে দেখতে এসে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বস্থ করেন।
পরদিন এ.এস.পি সার্কেল (লামা) মাহাবুব সরেজমিনে ঘুমধুমে তদন্তে আসে। এসময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন কামালের ভয়ে মুখ না খুললেও তার পিতা আলতাব হোসেন জাহেদ আলমকে মেরেছে মর্মে কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের উপযুক্ত সাক্ষী না পেয়ে এএসপি সার্কেল ক্ষুব্ধকন্ঠে বলেন, ঘুমধুমে লোকজনকে চক্ষু চিকিৎসা করাতে হবে।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, এ বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হই। এখন আমার আর কোন বক্তব্য নেই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল বাছেদ সরকার বলেন, জাহেদ আলমের স্ত্রীর দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। পরবর্তী জাহেদ আলমকে হামলার বিষয় থানায় অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেও ঘটনার ৫ দিন গত হয়েছে এখনো পর্যন্ত সন্ত্রাসী আক্রান্তের শিকার প্রবাসী জাহেদ আলম এর দায়েরকৃত অভিযোগটি এজাহার হিসাবে গণ্য করছেনা। এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আবুল খাইর এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, রাজনৈতিক নানা চাপ রয়েছে, তার পরেও বাদী বিবাদী উভয়কে ডেকে সন্তোষজন আপোষ মিমাংশা করবে বলে আওয়ামীলীগ নেতারা দায়িত্ব নিয়েছেন। আক্রান্ত প্রবাসী জাহেদ আলম ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, ছাত্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। ১৫ বছরের প্রবাস জীবনে সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রবাসীর নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ঘুমধুম ইউনিয়নে আওয়ামীলীগকে সু-সংঘটিত করার দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছি। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বীর বাহাদুর এমপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে নাইক্ষ্যংছড়ি বান্দরবান যাওয়ার আমি নিজেই কয়েকটি গাড়ির ভাড়া বহন করে থাকি। আজকে কথিত যুবলীগ নেতা নামধারী কামাল নব্য আওয়ামীলীগ সেজে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। সাধারণ লোকজন তার হাতে বিভিন্ন সময় নিগৃহের শিকার হয়েছে। আমি নিজেও আজকে সর্বশান্ত। অথচ উক্ত কামাল মেম্বার গত ইউপি নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপি জামায়াত সমর্থিক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি জামায়াতের সাথে আতাত করে নিজের সুবিধা ভোগ অব্যাহত রেখেছে। কামালের হাতে নির্যাতন অত্যচারের শিকার জাহেদ আলম বর্তমানেও কামাল বাহিনীর হুমকির মূখে চরম নিরাপত্তাহীনতায় জীবন যাপন করছেন।
তাই তিনি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি মহোদয়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের আশু সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।
You must be logged in to post a comment.