সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / উৎপদন রেকর্ড ভঙ্গের সম্ভাবনা : আমদানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : খুশিতে মাঠের চাষীরা

উৎপদন রেকর্ড ভঙ্গের সম্ভাবনা : আমদানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : খুশিতে মাঠের চাষীরা

Salt - Ajit Himu 05-01-2016 (news & 1pic) f1অজিত কুমার দাশ হিমু; কক্সভিউ :

লবণ কক্সবাজার জেলার অন্যতম অর্থকরী সম্পদ। কিন্তু বিগত বছর গুলোতে এ অর্থকরী সম্পদ চাষীদের কাছে বিষফোড়ে পরিনত হয়েছিল। মৌসুমের শুরুতেই খুলনা ও রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক কতিপয় অসাধু মিল মালিক সিন্ডিকেট চক্র সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলে ভুল তথ্য দিয়ে কৌশলে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে নানাভাবে অপতৎপরতা শুরু করেন। এই খবরে লবণ উৎপাদন এলাকার চাষীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার পরে তিনি নির্দেশ দেন এব্যাপারে তদন্ত করতে। এরই প্রেক্ষিতে চলতিমাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার এসে জেলা প্রশাসন ও লবণ চাষী এবং ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানতে পারেন দেশে বর্তমানে লবণ উৎপাদন শুরু হওয়ায় এখন বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে হবেনা। ফলে চক্রান্তকারীদের অপচেষ্টা ভেস্তে যায়।

এদিকে টানা কয়েকবছর লবণ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি ও দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকা সত্বেও কিছু সুবিধাবাদী মুনাফালোভী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা চক্রান্তের মাধ্যমে প্রতিবছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি অব্যাহত রাখায় এ খাত লোকসানে নিমজ্জিত ছিল। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ মহল লবণ আমদানী বিমুখ হওয়ায় জেলা ব্যাপী লবণের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ খাত সংশ্লিষ্ট চাষীরা লোকসান কাটিয়ে সুদিনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে চাষীদের মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) সুত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয় ১৬ লাখ ৫৮ হাজার মেট্টিক টন। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রের অধীনে লবণ জমি রয়েছে ৭০ হাজার ৭৫৪ একর। সেখানে চলতিবছর চাষ হচ্ছে ৫১ হাজার ৯৭০ একর জমিতে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৬৪ হাজার ১৫১ একর জমিতে। তবে চাষীরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এবার চাষের পরিধি বাড়ছে। এতে করে অবশিষ্ট থাকা ১৮ হাজার ৭৮৪ একর জমিতে পর্যায়ক্রমে লবণ চাষ শুরু হবে।

মাঠ পর্যায়ে চাষীদের মতে, এবার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে লবণ উৎপাদনে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও দেশে বর্তমানে গত বছরের উৎপাদিত প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্টিকটন লবণ মাঠে মজুদ রয়েছে। ফলে এই মুহুর্তে দেশে কোন ধরণের লবণ ঘাটতি নেই বলে ধারনা করা হচ্ছে। এতে করে আগামীতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে হবেনা।

চাষীরা অভিযোগ করেছেন, এখনো গত বছরের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ লবণ বোঝাই কার্গো খুলনা, ঝালকাটি, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব লবণ কার্গো থেকে খালাস না করেই কতিপয় মিল মালিকরা দেশে লবণের কৃত্রিম সংকট দেখানোর চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলার বৃহত্তম লবণ বিপণন কেন্দ্র দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে গত নভেম্বর মাস থেকে। বর্তমানে বিভিন্ন মোকামে নতুন লবণ উঠতে শুরু করেছে। গত বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে না থাকার কারনে লবণ উৎপাদনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। কিন্তু এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, চাষীরা বর্তমানে মাঠে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে লবণ উৎপাদন মৌসুমে শুরু হয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে এক শ্রেনীর প্রভাবশালী মিল মালিক সিন্ডিকেট দেশে ‘শিল্প ও ক্যামিক্যাল লবণ’ সংকটের অজুহাতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে নানাভাবে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এই অশুভ কারসাজির কারনে প্রতিবছর দেশের লবণ শিল্প ও ক্ষুদ্র চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানির অপচেষ্টার বিষয়টি ওই সিন্ডিকেট চক্রের দীর্ঘদিনের অপৎপরতার অংশ। তাঁরা বারবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং ট্যারিপ কমিশনকে ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানি করতে বাধ্য করেন। আমদানির কারণে দেশীয় লবণ শিল্প মার খাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি বুঝতে পেরে এবার তাদের অপতৎরতা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও কতিপয় অসাধু মিল মালিকরা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে মিল বন্ধের উপক্রম দেখিয়ে বিদেশ লবণ আমদানির কৌশলে মেতেছে। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাদের এই অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবসার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মৌসুমে চাষিরা পুরোদমে লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছে। প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এবার গত বছরের তুলনায় লবণ উৎপাদনের হার বেড়েছে। সরকার বর্তমানে বিদেশ থেকে লবন আমদানী বন্ধ রেখেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবার লবন উৎপাদনে বিসিকের লক্ষমাত্রা অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/