মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :
ষষ্ঠী দেবী লৌকিক দেবী। ষষ্ঠী দেবীর পূজা অর্চনা বিধিই ষষ্ঠীব্রত। ষষ্ঠী দেবীর পূজার মধ্যদিয়ে (শুক্রবার) লামা উপজেলায় ৮টি মণ্ডপে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপি এ উৎসবের। দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রনা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ শোক হানাহানি মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে মরণ ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।
এদিকে, পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে সমগ্র উপজেলায় বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্ডপ। পুজার নিঘন্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মন্ডপ এলাকা।
এদিকে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক ও খাদ্যশস্যও বরাদ্দ দেওয়া হয়। লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দির কমিটিতে বাবুল দাশ সভাপতি, রতন দত্ত সহ সভাপতি, বিজয় আইচ সাধারণ সম্পাদক ও গোপন চৌধুরী অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ কমিটি অনুষ্ঠিতব্য সব কয়টি পুজা মন্ডপ পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শন করেন এ কমিটির নেতারা। এছাড়া দুর্গাপুজাকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে প্রতিটি মন্ডপে মণ্ডপেও গঠন করা হয়েছে উদযাপন কমিটি। পুজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে লামা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড ও সনাতনী যুব সমাজ। প্রতিমা শিল্পীদের নিপুণ আঁচড়ে তৈরি হচ্ছে এক একটি প্রতিমা। অতি ভালোবাসায় তৈরি করা হয়েছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষী, কার্তিক, গণেশ, অসুর ও শিবের মূর্তি।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পূজা শুরু সকাল ৬টা ৩০মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপি এ উৎসবের। এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে লামা উপজেলার ৮টি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার সহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
এবিষয়ে লামা কেন্দ্রীয় দুর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিজয় আইচ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পুজা উদযাপন করে থাকি। এবারও সকলে মিলেমিশে এ উৎসব উদযাপন করতে পারবো। লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরের পাশাপাশি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের গুলিস্তান বাজার, ইয়াংছা, পাগলির আগা, কমিউনিটি সেন্টার, আজিজনগর ইউনিয়নের তেলুনিয়া, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা ও পৌরসভার চম্পাতলী মণ্ডপে পূজা উদযাপন হচ্ছে। মেরাখোলা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি সাগর সেন বলেন, আমাদের মণ্ডপের সব প্রস্তুতি শেষ। প্রতি বছরের মত এবারও শান্তিপুর্ণভাবে পুজা উদযাপন করতে পারবো বলে আশা করছি।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম শেখ জানান, ২০২১ সালে মন্ডপে হামলার ঘটনা মাথায় রেখেই এবারে পূজা উপলক্ষে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। মণ্ডপে পোষাকধারী ও সাদা পোষাকের পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকরা ২৪ ঘন্টা কাজ করবেন। এছাড়া প্রতিটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ গুলোর সাথে নিয়মিত আলোচনা চলছে। প্রতিবারের মত এবারো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এই ধর্মীয় উৎসব সম্পন্ন হবে।
You must be logged in to post a comment.