পাঁচ বছর আগে তার বার্ষিক আয় ছিল চার লাখ ছয় হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে আয় হতো ১০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় হতো তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কিন্তু পাঁচ বছর পরে তার সেই কৃষি খাত ও ব্যবসার আয় এখন শূন্য। পাঁচ বছর আগে তার নিজের মোটর গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছিল (যার মূল্য চার লাখ টাকা)। কিন্তু পাঁচ বছর পর তার সেই মোটর গাড়ি ও মোটরসাইকেলটিও নেই। পাঁচ বছর আগে (অকৃষি জমি ও অর্জনকালীন সময়ে আর্থিক মূল্য) তার ও তার স্ত্রীর নামে একটি করে কাঁচাপাকা বাড়ি ছিল। কিন্তু পাঁচ বছর পর তার স্ত্রীর নামের সেই বাড়িটিও নেই; তবে তার নিজের ১৯ শতক জমি আছে। পাঁচ বছর আগে তার নিজের নামে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ১৮ শতক একটি জমি ছিল। কিন্তু পাঁচ বছর পরে তা ৯ লাখ টাকা মূল্যের একটি টিনশেড বাড়িতে পরিণত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পাঁচ বছর পরে তার নিজের আয় এখন শূন্য। অথচ গত পাঁচ বছর ধরে জাতীয় সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দশম সংসদের পরে এবারও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি।
বলছি, বগুড়া-৬ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসলাম ওমরের কথা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া মো. নুরুল ইসলাম ওমরের তথ্য পর্যালোচনা করে এসব বিষয় জানা গেছে। তবে পাঁচ ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সরকারিভাবে যে ভাতার টাকা পেয়েছেন, সেটার কোনো হিসাব তার হলফনামায় পাওয়া যায়নি।
পাঁচ বছর আগে দশম নির্বাচনের সময় মো. নুরুল ইসলাম ওমরের দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল কৃষি খাতে ১০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগে তার মোট বার্ষিক আয় ছিল চার লাখ ছয় হাজার টাকা। কিন্তু এবারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার এবং তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় এখন শূন্য বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিজ নামে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ছিল মোট এক কোটি ২০ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৪ টাকার (একটি কাঁচাপাকা বাড়ি বাদে)। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৮৬ হাজার ১৬৩ টাকায়।
এ ছাড়াও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ছিল দুই লাশ ৫০ হাজার টাকার (খাট, সোফা, চেয়ার, নগদ ও একটি কাঁচাপাকা বাড়ি বাদে); যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামা অনুযায়ী শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে।
যা ছিল পাঁচ বছর আগের হলফনামায়
পাঁচ বছর আগে মো. নুরুল ইসলাম ওমর বগুড়া-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন। পাঁচ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় দেওয়া তার বার্ষিক আয়ের বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষি খাতে তার বার্ষিক আয় ১০ হাজার টাকা। বাড়ি/দোকান বা অ্যাপার্টমেন্ট, অন্যান্য ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, পেশা, চাকরী এবং অন্যান্য বার্ষিক আয়ের ঘরে লেখা ছিল ‘প্রযোজ্য নহে’, মানে এসব খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ছিল শূন্য। তবে ওই সময়ে হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
সেই হলফনামায় দেওয়া অস্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তার নিজের নগদ টাকা রয়েছে ৪০ লাখ, ৬৬ হাজার ৩৪৪ টাকা। আর তার স্ত্রীর কাছে নগদ এক লাখ টাকা।
বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থ, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার, পোস্টাল সেভিংসে সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ তার এবং তার স্ত্রীর কিছুই ছিল না। এ ছাড়াও বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল ইত্যাদির কিছুই তার এবং তার স্ত্রীর নেই বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন।
অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদির স্থানে তার নিজের চার লাখ টাকা মূল্যের মোটর গাড়ি ও মোটরসাইকেল আছে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। আর তার নিজের ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
অপরদিকে তার স্ত্রীর নামে বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু এবং পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী কিছুই ছিল না বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। তবে তার স্ত্রীর কাছে নগদ আসবাবপত্র খাট, সোফা, চেয়ার ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
মো. নুরুল ইসলাম ওমর গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন, তার নিজের নামে কৃষি জমি রয়েছে ৩৫ শতাংশ; যার মূল্য ৩৫ লাখ টাকা, অকৃষি জমির মধ্যে একটি কাঁচাপাকা বাড়ি রয়েছে।
দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংখ্যার বর্ণনার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তার নিজের নামে ১৮ শতাংশ জমি রয়েছে; যার মূল্য ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘প্রযোজ্য নহে’, মানে তার নিজের নামে কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই। আর চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামারের সংখ্যার ও অন্যান্যের স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘প্রযোজ্য নহে’, মানে এসব তার নিজের নেই, ছিল না।
অপরদিকে মো. নুরুল ইসলাম ওমর হলফনামায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন যে, তার স্ত্রীর নামে কৃষি জমি, দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংখ্যা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামার ও অন্যান্য কিছুই নেই। তবে তার স্ত্রীর অকৃষি জমির ঘরে তিনি উল্লেখ করেছিলেন স্ত্রীর নামে একটি কাঁচাপাকা বাড়ি রয়েছে।
যা আছে এবারের হলফনামায়
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় দেওয়া তার বার্ষিক আয়ের বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষিখাতে, বাড়ি/দোকান ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, পেশা, চাকরি এবং অন্যান্য বার্ষিক আয়ের ঘরে লেখা আছে ‘প্রযোজ্য নহে’, মানে এসব খাত থেকে তার বার্ষিক আয় শূন্য।
অস্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তিনি লিখেছেন, তার নিজের নগদ টাকা রয়েছে ৪৮ লাখ, ৭২ হাজার ১৬৩ টাকা। আর তার স্ত্রীর কাছে কোনো নগদ টাকা নেই বলে তিনি লিখেছেন ‘প্রযোজ্য নহে’। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থ, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার, পোস্টাল সেভিংসে সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ কিছুই তার এবং স্ত্রীর নেই।
এ ছাড়াও বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল—কোনো কিছুই তার এবং তার স্ত্রীর নেই বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে তার নিজের ৩০ হাজার টাকার স্বর্ণলঙ্কার, ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী (টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, মোবাইল ইত্যাদি) এবং ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র (চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি ইত্যাদি) আছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে তার স্ত্রীর নামে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, মোবাইল, চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি এবং কোনো প্রকার স্বর্ণালঙ্কার নেই বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
মো. নুরুল ইসলাম ওমর তার দেয়া হলফনামায় স্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার নিজের নামে কৃষি জমি রয়েছে ৩৫ শতাংশ; যার মূল্য ৩২ হাজার টাকা, অকৃষি জমি রয়েছে ১৯ শতাংশ; যার মূল্য ২৩ লাখ দুই হাজার টাকা। দালানের বর্ণনার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার নিজের নামে একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে; যার মূল্য ৯ লাখ টাকা। এ ছাড়াও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘প্রযোজ্য নহে’, মানে তার নিজের নামে কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে নেই। আর চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামারের সংখ্যার ও অন্যান্যের স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন এসব তার নিজের নেই।
অপরদিকে মো. নুরুল ইসলাম ওমর হলফনামায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার স্ত্রীর নামে কৃষি জমি, অকৃষি জমি, দালান, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামার এবং অন্যান্য কিছুই নেই।
বার্ষিক আয় শূন্য হলেও ব্যাংকের লোন কমেছে এমপির
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় মো. নুরুল ইসলাম ওমরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দায়-দেনাগুলোর প্রকৃতি ও বর্ণনার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার ব্যাংক লোন রয়েছে এক কোটি টাকা। অথচ পাঁচ বছর পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় মো. নুরুল ইসলাম ওমরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দায়গুলোর প্রকৃতি ও বর্ণনার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন তার ব্যাংক লোন ৬১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৬ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরে তার ব্যাংকের লোন কমেছে ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ২০৪ টাকা।
সূত্র:জনি রায়হান-priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.