প্রথমদিকে যখন ব্লুটুথ স্পীকার প্রযুক্তি বাজারে এসেছিল তখন খুব একটা ভালো কোয়ালিটির ছিলোনা সেগুলো। হ্যাঁ, স্মার্টফোনের চাইতে কিছুটা বেশি সাউন্ড অবশ্যই দিত কিন্তু তা ছিল একটি বাড়তি স্পীকারের তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু বর্তমানে বা আরও স্পেসিফিকভাবে বললে আমরা যদি এবছরের সেরা ব্লুটুথ স্পীকারগুলোর দিকে একটু লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাবো ব্লুটুথ স্পীকারগুলো আর আগের মত নেই, বরং চমত্কার মানের জন্য এখন অনেক স্থানেই অনেকে ব্লুটুথ স্পীকারগুলো ব্যবহার করছেন। তবে ব্লুটুথ স্পীকার কেনার ক্ষেত্রে কোনটা ভালো হবে বা কোনটা মন্দ হবে এবিষয় নিয়ে অনেককেই সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই আমি এবছরের সেরা কিছু ব্লুটুথ স্পীকারের তালিকা করেছি যা এই রিভিউ-এর মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করব যাতে করে এই তালিকাটি পরবর্তিতে আপনাকে কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক।
Creative Sound Blaster Roar 2
বাজারে যখন এই ডিভাইসটির পূর্বের ভার্সনটি এসেছিল তখনই সেই সাউন্ড ব্লাস্টার স্পীকারটি এই মূল্যের অন্যান্য ব্লুটুথ স্পীকার থেকে প্রায় ১০ গুন সুবিধা দিয়েছিল। আর এই সাউন্ড ব্লাস্টার রোয়ার ২ স্পীকারটি সহজেই পূর্বের ডিভাইসটিকে হারিয়ে দেয় পারফর্মেন্সের দিক থেকে। চমত্কার এই ব্লুটুথ স্পীকারটি দেখতেও বেশ চমত্কার, হালকা-পাতলা এবং পূর্বের ডিভাইসটি থেকেও বেশ ভালো সাউন্ড প্রদান করে থাকে।
স্পীকারটির চমত্কার ফিচারগুলো যদি হাইলাইট করতে হয় তবে প্রথমেই বলবো রোয়ার ২ স্পীকারটিতে রয়েছে এনএফসি সাপোর্ট এবং অন্যান্য সকল সুবিধা যা সাধারণ ব্লুটুথ স্পীকারগুলোতে থেকে থাকে। পাশাপাশি, আপনি এই স্পীকারটির মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোন চার্জ করতে পারবেন বা আপনি ইউএসবি অথবা এসি পাওয়ার সোর্স ব্যবহার করে এই স্পীকারটি চার্জ করতে পারবেন। রোয়ার ২ স্পীকারটি আপনার কম্পিউটারের জন্য একটি এক্সটার্নাল সাউন্ড কার্ড হিসেবে কাজ করতেও সক্ষম। আপনি চাইলে এসডি কার্ড থেকেও এই স্পীকারটির মাধ্যমে গান প্লে করতে পারবেন। এছাড়াও ডিভাইসটিতে রয়েছে একটি বিল্ট-ইন ভয়েস রেকর্ডার! আর কি চাই বলুন!
সত্যি কথা বলতে হয়তো এতগুলো ফিচার সমৃদ্ধ ব্লুটুথ স্পীকার সবার প্রয়োজন হয়না তবে যেহেতু স্পীকারটি আপনি পেয়ে যাবেন মাত্র ১৫০ ডলারের মধ্যেই ফলে আপনার বাজেট যদি এরকম হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনার একবার হলেও প্রোডাক্টটি দেখে নেয়া উচিত্!
মূল্য – প্রায় ১৫০ ডলার।
Bose SoundLink Mini 2
আপনার যদি এমন একটি ব্লুটুথ স্পীকারের প্রয়োজন হয়ে থাকে যা আকারে কিছুটা ছোট হবে আবার তাতে সাউন্ড কোয়ালিটিও চমত্কার হতে হবে তবে আপনি বোসের সাউন্ডলিংক মিনি ২ স্পীকারটি ব্যবহার করতে পারেন। এটিও একটি সিক্যুয়াল ডিভাইস অর্থাত্ এর পূর্বের সাউন্ডলিংক মিনি ডিভাইসটি বাজারে এসেছিল তবে নতুন এই ডিভাইসটি সব দিক থেকেই পূর্বের ডিভাইসটিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে!
প্রথমবার যখন আপনি সাউন্ডলিং মিনি ২ ডিভাইসটি দেখবেন তখন আপনার খুব সিম্পল একটি ডিভাইস মনে হবে তবে সিম্পল হলেও এই ডিভাইসটি আপনাকে দিতে সক্ষম অসাধারণ সাউন্ড কোয়ালিটি। পূর্বের ডিভাইসটি থেকে নতুন এই ডিভাইসটির ডিজাইনে খুব বেশি পার্থক্য রাখা হয়নি। তবে স্পীকারের ডিজাইনটা আরও কিছুটা পলিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিভাইসটি বর্তমানে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাক-আপ দিতে সক্ষম যেখানে পূর্বের ডিভাইসটি ব্যাক-আপ দিতে পারত মাত্র ৭ ঘন্টা। স্পীকারটি আপনি মাইক্রো ইউএসবি’র মাধ্যমে রিচার্জ করতে পারবেন।
ডিভাইসটি আরও চমত্কার হতে পারত যদি এতে স্টেরিও পেয়ারিং যুক্ত করা হতো তবে মূল্যের দিক দিয়ে এই বা কম কি?
মূল্য – প্রায় ১৯৯ ডলার।
JBL Flip 3
আপনি যদি সাউন্ডলিংক মিনি ২ স্পীকারটি মত কিছু ব্যবহার করতে চান তবে আপনার বাজেট অতটা না হয়ে থাকে তবে আপনি জেবিএল ফ্লিপ ৩ স্পীকারটি দেখতে পারেন। সাউন্ডলিংক মিনি ২ এর অর্ধেক মূল্যের এই ডিভাইসটি সাউন্ড লিংকে ২ এরমত সাউন্ড দিতে না পারলেও আপনি এর সাউন্ড কোয়ালিটিতে নিঃসন্দেহে মুগ্ধ হবেন এবং আপনি চমত্কার এই ডিভাইসটিকে আপনার পকেটেও বহন করতে পারবেন।
পূর্বের ফ্লিপ ২ ডিভাইসটি থেকে এই ডিভাইসটির ব্যাটারি লাইফ বর্ধিত করা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ! ফলে ফ্লিপ ২ যেখানে মাত্র ৫ ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিত সেখানে ফ্লিপ ৩ স্পীকারটি একটানা আপনাকে প্রায় ১০ ঘন্টার মত সার্ভিস দিতে সক্ষম। এই আকারের অন্যান্য স্পীকারের তুলনায় এই ডিভাইসটির বাস নিঃসন্দেহে অনেক ভালো, আপনি এই বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন না অন্তত।
চমত্কার এই স্পীকারটির রেঞ্জ প্রায় ৫০ ফিট এবং এটি স্প্ল্যাশপ্রুফ হওয়ায় যেকোন স্থানেই আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন বলা যায়।
মূল্য – প্রায় ৮৬ ডলার।
CB3 Ultra Slim
নামের সাথে স্পীকারটির বেশ মিল আছে! স্পীকারটি সত্যিকার অর্থেই বেশ স্লিম। মাত্র ৮.৫x৪x১.৮ ইঞ্চি আকারের স্পীকারটি আপনি যেখানে ইচ্ছে সেখানেই বহন করে নিয়ে যেতে পারবেন কোন রকম সমস্যা ছাড়াই। এছাড়াও ভ্রমণের উপযোগী করে তোলার জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের ইউনিবডি ডিজাইন এবং স্ট্রাডি বাতন। এই আকারের স্পীকার থেকে অধিক জোড়ালো সাউন্ড আশা করাটা অবশ্যই উচিত্ হবেনা তবে এতে ব্যবহারিত ডুয়াল ড্রাইভার বেশ ভালোই সাউন্ড আউটপুট দিয়ে থাকে।
মূল্য – প্রায় ৪৯ ডলার।
Fugoo Sport XL
Fugoo Sport XL স্পীকারটি একেবারেই ওয়েদার প্রুফ একটি ডিভাইস এবং এটি পানির নিচে প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি আসলে পানিতে ভেসে থাকতে সক্ষম ফলে পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কাই নেই। জেনে অবাক হবেন তবে এই ব্লুটুথ স্পীকারটি আপনাকে প্রায় ৩৫ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাক-আপ দিতে সক্ষম তাই যদি দূরে কোথাও ভ্রমণে যান বা সারাদিন ব্যবহার করার মত ব্লুটুথ স্পীকার খুঁজে থাকেন তবে ফুগো স্পোর্ট এক্সল হতে পারে একটি চমত্কার পছন্দ।
মূল্য – ২৯৯ ডলার প্রায়।
কোথায় পাবেন?
যেহেতু আমি কেনাকাটার গাইডেও এই লেখাটিকে যুক্ত করছি তাই আপনারা কোথায় পাবেন সেটাও বলে দেয়া আমার দায়িত্বের মাঝেই পড়ে! বাংলাদেশে খুব কম প্রতিষ্ঠান এই ডিভাইসগুলো বিক্রি করে থাকে তাও জেবিল আর বোস ছাড়া অন্যান্য স্পীকারগুলো খুঁজে পাবেন কিনা তাতেও সন্দেহ। তবে প্রত্যেকটি ডিভাইসই আপনি অ্যামাজনে খুঁজে পাবেন।
কীভাবে কিনবেন?
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ অ্যামাজন থেকে প্রোডাক্ট এনে দেয়। আপনার সহজেই সেই গ্রুপগুলোতে আপনাদের অর্ডার প্লেস করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রোডাক্টের মূল্যের সাথে এক্সট্রা কিছু চার্জ আপনাকে দিতে হবে এবং ডলারের সঠিক কনভার্সেশন রেটটাও আপনি সেখানে পাবেন না।
সূত্র:প্রতিক্ষণডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.