সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / ওখানে তারা বন্দুক তাক করে রেখেছে আমাদের মারার জন্যে

ওখানে তারা বন্দুক তাক করে রেখেছে আমাদের মারার জন্যে

থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পে মংডু উপজেলা চেয়ারম্যান ছৈয়দ উল্লাহসহ অন্যান্যরা।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

নির্যাতন বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে বিশ্ব নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিশ্ব মানবতা। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নারকীয় তান্ডব, নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের বর্ণনা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ বিশ্ব নেতারা। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দেখতে এসে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অশ্রু দেখা যায় চোখের কোণে। রোহিঙ্গা এক শিশু প্রধানমন্ত্রীকে তার পরিবারের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা শোনায়।

শিশুটি জানায়, তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশুটিও। তার নাকে আঘাত করে থেঁতলে দেওয়া হয়। শিশুটির কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে ওই শিশুকে বুকে জড়িয়ে নেন। তাকে শান্তনা দেন। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী তাদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। এখন তারা সেই দুর্বিসহ স্মৃতি ভুলে গিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, দুদিন আগেও মগ সেনাদের নির্যাতন সইতে না পেরে রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখানে পালিয়ে এসেছেন। ওখানে তারা বন্দুক থাক করে রেখেছেন আমাদের মারার জন্যে। আমরা আর কত মার খাব। আমাদের নিরাপত্তা দিন আমরা ফিরে যাব। গত ২০ জানুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হিলির নেতৃত্বে বিশেষ প্রতিনিধি দল টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প এবং ২১ জানুয়ারি উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।

হাফেজার কাছ থেকে নাজেরা কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করছেন রোহিঙ্গা শিশুরা।

এরপর বালুখালী আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর গোল ঘরে অপেক্ষমান রোহিঙ্গাদের সাথে একান্তে কথা বলেন। আশ্বস্থ করেন সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। এ সময় রোহিঙ্গারা ব্যানার নিয়ে স্বদেশে ফেরত যেতে বিভিন্ন দাবী পেশ করেন। রফিক উল­াহ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, মিয়ানমারে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমার কারাগারে থাকা রোহিঙ্গাদের মুক্তি দিতে হবে। নিজেদের বাপ-দাদার বসত বাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। চাকরি ও ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে নাগরিক সকল সুযোগ সুবিধা এবং স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত তাদের কথা শুনেছেন এবং বলছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা যেভাবে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের নাগরিকদের রক্ষা করছে না। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের প্রকৃত চিত্র জাতিসংঘে তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিজভূমি রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারের প্রতি জোরালো চাপ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এতে রোহিঙ্গারা আশার আলো দেখছেন।

থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত হাইচ্ছুরতা মংডু এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান ছৈয়দ উল্লাহ (৭৮) বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের মা বোনদের জুলুম করে মেরে ফেলেছে। তাদের অত্যাচারের কারণে আমরা ফিরে যাবো না। যতক্ষণ আমাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে না ততক্ষণ আমরা ফিরে যেতে চাই না। আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেলে অবশ্যই আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব। মংডু দক্ষিণের ঘরাখালী গ্রামের সায়েত উল্লাহ (৩২) বলেন, সবকিছু হারিয়ে এখানে আশ্রয় পেয়েছি। আবার ফিরে গিয়ে জীবনটাই যেন হারাতে না হয় সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখলে আমাদের স্বদেশে ফিরতে আপত্তি নেই। শুধুমাত্র জীবনের নিরাপত্তা চাই।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সমাধান শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের শিক্ষিকা হাফেজা নুর আয়েশা শিশু কিশোরীদের নাজেরা কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে নুর ছেহেনা (৭) আসমা বিবি (৮) আনোয়ারা হোছনা (৯) নুর কলিমা (১০) উম্মে ছাকিলা (৯) আল কায়াছ (১৩) ছেহেরা বিবি (১০) সাজেদা বিবি (১২) আল কামা (১১) হুমায়রা (১৪) নুরে জান্নাত (১৫) এদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে কিনা জানতে চাইলে সকলে এক বাক্যে বলেন, আমরা এখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছি। ওখানে তা পারি না। এখানে সবাই আমাদের আদর করে। আর মিয়ানমারে আমাদের জুলুম করে। জুলুম বন্ধ হলে ফিরে যাব। এখানে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তারা বলেন খুব ভাল।

১৫ বছরের শিশু নুরে জান্নাত বলেন, চোখের সামনে বার্মিজ মিলিটারী আমার বান্ধবী হালিমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। আমাদের মতো অনেক শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে যারা তাদের হাতে আমরা কিভাবে নিরাপদ থাকব আপনারাই বলেন। আমাদের কী আমাদের দেশে হেসে খেলে থাকতে ইচ্ছে করে না? কে দেবে তাদের এসব প্রশ্নের জবাব।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/05/Election-Sagar-6-5-24.jpg

ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাচনে চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস

  এম আবু হেনা সাগর;ঈদগাঁও : অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত কক্সবাজারের নবসৃষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চারজন ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/