সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / গত দেড়মাসে ৩টি পাহাড় কেটে সাবাড় : পাহাড়খেকো আহসান উল্লাহ’কে ঠেকাবে কে ?

গত দেড়মাসে ৩টি পাহাড় কেটে সাবাড় : পাহাড়খেকো আহসান উল্লাহ’কে ঠেকাবে কে ?

 

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :
পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও এসবের কোনো কিছুই পাত্তা দিচ্ছেন না বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ এইচ এম আহসান উল্লাহ।


গত দেড় মাস ধরে ফাইতং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ধূইল্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন দুইটি পাহাড় এবং তার কিছুটা পূর্বে জনৈক আবুল কাসেম ও আহমদ মিয়া একটি পাহাড় কেটে তৈরি করছেন আবাসিক এলাকা। দলীয় পরিচয় থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বান্দরবান জেলা ও লামা উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিচারে পাহাড় কাটছে। বিগত সময়ে এই ব্যক্তি আরো বেশ কয়েকবার পাহাড় কাটলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় একের পর এক পাহাড় কেটে চলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় ফাইতং ফাঁড়ি পুলিশের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে পাহাড় খেকো আহসান উল্লাহ ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বর্ষার ভারি বর্ষণের সময়। প্রতি বছর পাহাড় ধসে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। গত ১৫ বছরে ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। যদিও বর্ষায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় প্রশাসন। পরে এসব বাসিন্দারা আবারও ফিরে যান পুরোনো ঠিকানায়।


সরেজমিনে ধূইল্যাছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা আহসান উল্লাহ’র নেতৃত্বে সেখানে প্রতিনিয়ত দিনে রাতে পাহাড় কাটছে সংঘবদ্ধ চক্র। ধূইল্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগায়ো তার বাড়ির পাশের দুইটি পাহাড় ইতিমধ্যে কেটে সমতল করেছেন। যেখানের হাজার হাজার ট্রাক মাটি বিক্রি করেছেন পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বরইতলি এলাকার নতুন নির্মাণাধীন একটি বড় ভবনের ভরাট কাজে। তার কিছুটা পূর্বে জনৈক আবুল কাসেম ও আহমদ মিয়া পাহাড়টি থেকে এখন মাটি কাটছে। ৩৫/৪০ ফুট উচ্চতায় ইতিমধ্যে পাহাড়ের ৭০ শতাংশ কাটা হয়ে গেছে। গতরাতেও ২টি স্কেভেটর ও ৬টি ডাম্পার দিয়েও মাটি কাটা চলেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি স্থানীয় লোকজন।

আশপাশের স্থানীয় লোকজন বলেন, পাহাড় কাটার মাটি নিয়ে যেতে ব্যবহার হচ্ছে ১০/১৫টি ডাম্পার ও ট্রাক। ভারি এইসব গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে একাকার। আর এই ধূলোবালিতে চারপাশের মানুষ ও স্কুল-মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কষ্ট পাচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে বিষয়টি জানিয়ে তারা কোন প্রতিকার পায়নি বরং পাহাড়খেকোরা তাদের দিয়েছে হুমকিধমকি ও মামলা ভয়। হাজার হাজার গাড়ি মাটি বিক্রি করে কোটি টাকার বাণিজ্যে ভাগ পায় জনপ্রতিনিধি ও ফাঁড়ি পুলিশ।


এবিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ এইচ এম আহসান উল্লাহ বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই পাহাড় কাটছি। পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টি জানে। কাউকে কিছু বলে লাভ নাই ! ফাইতংয়ে এত ব্রিকফিল্ডে পাহাড় কাটছে এগুলো দেখেননা। আমরা কাটলেই দোষ।


কথা হয় ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক এর সাথে। তিনি বলেন, পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির টাকা আমাকে দেয়া হয় বিষয়টি সত্য নয়। পাহাড় কাটার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আহসান উল্লাহ সবাইকে ম্যানেজ করে।


নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার মানবতা আঁড়ালে ভয়ংকর ব্যবসায়ী, তেমনি শেখ এইচ এম আহসান উল্লাহ মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনা নামে মূলত একজন ধর্ম ব্যবসায়ী। তিনি কয়েকটি এতিমখানা, মাদ্রাসা ও মসজিদ চালায়। যাকে পুঁজি করে হজ্ব ও ওমরাহ এর নাম দিয়ে সোদিয়া গিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে। যার কোন হিসাব কারো কাছে নাই। কয়েকবছর আগে চকরিয়া থানা পুলিশের হাতে আহসান উল্লাহ মোটা অংকের ইয়াবা চালান নিয়ে আটক হয়েছিল।


পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান এর সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শীঘ্রই লামা উপজেলার ফাইতং ধূইল্যাছড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ফাইতংয়ে গতরাতে পাহাড় কাটার বিষয়টি লোক মারফত জানতে পেরে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। যত বড় রাজনৈতিক নেতা হোক পাহাড়খেকোদের ছাড় দেয়া হবেনা।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ কারাগারে

নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদকে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/