মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
যে রাবার ড্যাম ধান ও সবজি চাষ করার জন্য তৈরী করা হয়েছে সে ড্যামের কারণেই ক্ষতির মুখে এখন চাষিরা। বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি টানা চারদিনের বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুটি বিলের ১২’শ একর জমির পাকা বোরো ধান এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বড়বিল ও কাকারার নলবিলার এই বিপুল পরিমাণ জমির ধান পানির নিচে থাকায় কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে হতাশা ভর করেছে।
বাঘগুজারা রাবার ড্যাম মেরামত করতে মাটির তৈরী বাঁধ দেয়ায় সোনাইছড়ি ও হারবাং ছড়া খালের পানি ভাটির দিকে নামতে না পারায় হারবাং বড়বিলে পানির নিচে তলিয়ে প্রায় ৭’শ একর জমির পাকা ধান।
অন্যদিকে, সরকারী বরাদ্দ পাওয়া সত্বেও বাইশ্যারছড়া সঠিকভাবে খনন না করায় নলবিলা বিলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে অন্তত ৫’শ একর জমির ধান পানির নিচে রয়েছে। নলবিলার পানির নিচে থাকা ধান কাটতে না পারায় প্রশাসনের হস্তক্ষেত চেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় কৃষক সমাবেশ করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
হারবাং ইউনিয়নের ডেবলতলি এলাকার চাষি মো. কামাল (৪২) ও জাফর আলম (৪৫) বলেন, আমরা ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বোরো চাষ করেছি। রাবার ড্যাম মেরামত করতে মাটির তৈরী বাঁধ নির্মাণের কারণে মাতামুহুরী নদী ও ছড়াখাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি আটকে যাওয়ায় আমাদেরসহ কয়েক হাজার কৃষকের অস্তত ৭’শ একর জমির পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে আছে। এই ধান কাটতে না পারায় সুদে নেয়া টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো বুঝতে পারছিনা।
রবিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির ফলে বিলে পানি জমে রয়েছে। জমে থাকা পানি যাওয়ার কোন পথ নেই। ক্ষেতের ধান পানির নিচে ডুবে রয়েছে। চাষীরা পানির নিচে ডুবে যাওয়া ধান কাটার চেষ্টা করছে। সিংহভাগ নষ্ট হওয়ায় ফসল হারিয়ে হাহাকার করছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক রয়েছেন যাদের পরিবারের সারা বছরের সংসার খরচ চলে ধান বিক্রির টাকায়। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
কৃষকরা জানায়, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বেলতলি, ডেইঙ্গাকাটা, পহরচাঁদা, কালাসিকদার পাড়া, গোদারপাড়া, মহছনিয়াকাটা, নোয়াপাড়া এলাকার বিলে প্রায় ৭’শ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে চলতি বছর।
ক্ষুব্ধ কৃষক খালেদ হোসেন পিটু বলেন, ভাই আমি এ বছর জমি চাষ করেছি ঋণ করে। সব ফসলতো পানিতে তলিয়ে আছে। কীভাবে সংসার চালাবো, আর কীভাবেই বা ঋণের টাকা শোধ করবো সে চিন্তায় আছি।
তিনি আরো বলেন, শীতের সময় যদি বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি মেরামত করা হতো, তাহলে এ দুর্ভোগে পড়তে হতো না। কিন্তু কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
অন্যদিকে, কাকারার নলবিলা বিলে বোরো চাষ হয় অন্তত ১২’শ একর জমিতে। তন্মধ্যে নিচু প্রায় ৫’শ একর জমির ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে। গত শীতে এ বিলের কৃষকদের স্বার্থে বাইশ্যারছড়া খাল খনন করতে সরকার নগদ পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করলেও খালটি লোক দেখানো কাজ করে সঠিক সংস্কার না করায় বিলের পানি নদীতে বেরোতে পারছেনা। ফলে, চারদিনের বর্ষণে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসমস্যা থেকে বাঁচতে শনিবার সন্ধ্যায় কাকারা ও লক্ষ্যারচরের কয়েক হাজার কৃষক মাইকিং করে সমাবেশ করেছে। তারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের ত্বড়িৎ হস্তক্ষেত চেয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো.আতিক উল্লাহ বলেন, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭’শ একর জমিতে বোরা ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু কাল বৈশাখীর ফলে সৃষ্ট কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: দিদারুল আলম বলেন, বেশ কয়েকটি বাঁধ কেটে দেয়ায় হয়েছে। বাঘগুজারা বাঁধ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান বলেন, বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি মেরামত চলছে। তাই রাবার ড্যামের পাশে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে বাঁধের একপাশে ছোট করে কাটা হয়েছে। অধীক পানি আটকে গেলে জনস্বার্থে বাঁধ কেটে দেয়া হবে।
You must be logged in to post a comment.