সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / চকরিয়া-পেকুয়া খাবার ও পানীয়জলের সংকট দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

চকরিয়া-পেকুয়া খাবার ও পানীয়জলের সংকট দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

বৃষ্টি অব্যাহত, ৩০ বসত ঘর মাতামুহুরী নদীতে বিলীন, ফেসবুক প্রচারণায় ব্যস্ত নেতারা

মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :

বানের পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষ। দু’উপজেলার ৮ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দী। রান্না করতে না পেরে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ দুদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া করেনি। সাথে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয়জলের। পানির নিচে তলিয়ে থাকায় অভ্যান্তরীন যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে অনেকেই খাবার সংগ্রহ করছে। টানা চারদিনের বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি। বুধবার সকালে পানি সামান্য কমলেও দুপুর থেকে ফের বাড়তে থাকে।

অপরদিকে, জনপ্রতিনিধিরা শুকনো এলাকা ও কম পানিতে নামমাত্র খাবার বিতরণ করে সেলফি নিয়ে ফেসবুক রাজনীতি শুরু করলেও টানা দুদিন অনাহারে থাকা পরিবারগুলোর কাছে কেউই সাহায্য নিয়েতো যায়ইনি খোঁজও নেয়নি কেউ। ফলে, জনপ্রতিনিধির প্রচার রাজনীতিতে বন্যা কবলিতরা ধিক্কার জানিয়ে দাবি তুলেছেন প্রকৃত বন্যা কবলিত এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষনা করে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌছে দেয়ার দাবি জানান।

এদিকে, পাহাড়ি ঢলের তুড়ে মাতামহুরী নদী তীরবর্তি অন্তত ৩০টি বাড়ি ভিটেসহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া প্লাবিত এলাকায় আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে দু’শতাধিক কাঁচা বাড়ি।

চকরিয়ার পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়ার ৭টি মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ১টি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি গ্রাম ১০-১২ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। বুধবার দুপুরেও কাকারার পূর্ব পাড়া ও উত্তর পাড়ার দেড় শতাধিক বাড়ি ভিতর ৩-৫ ফুট উচ্চতায় পানি ছিল। ওই পরিবারে লোকজন বলেন, সকালে একটু পানি করলেও দুপুর থেকে ফের পানি বাড়তে শুরু করে। তাদের বাড়িতে পানীয়জল ও খাবার সংকট থাকলেও কোন নেতা বা জনপ্রতিনিধি খোঁজ-খবর নেয়ার গরজ করেনি। অনুরুপভাবে অধিক প্লাবিত অপর গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের অবস্থাও একই।

বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদের মোহনা মিলনায়তনে বন্যা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে এক জরুরী সভা করেছে। এতে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো.ইলিয়াছ, জেলা প্রশাসক মো.আলী হোসেন, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম, চকরিয়া পৌরসভার মেযর মো.আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য জাহেদুল ইসলাম লিটুসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে জেলা প্রশাসক বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি টিম চকরিয়া-পেকুয়া বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন।

অপরদিকে, পানি আবারো বাড়তে থাকায় চকরিয়া পৌর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। যদি ওই শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যায় তাহলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এদিকে, চকরিয়া-পেকুয়াকে বন্যা দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো.ইলিয়াছ। পাশাপাশি তিনি দ্রুত বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য ত্রান পাঠানোরও দাবি জানান।

জানা গেছে, গত রবিবার থেকে চকরিয়া-পেকুয়া, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও আলীকদমে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এই বৃষ্টির পানি রবিবার রাতের দিকে মাতামুহুরী নদী দিয়ে নেমে আসে ভাটির দিকে।এসময় নদীর দু’কুল উপচিয়ে লামা-আলীকদম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, চিরিংগা, কৈয়ারবিল, কোণাখালী, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী ও পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা এবং পেকুয়া সদর, শিলখালী, বারবাকিয়া, টৈটংসহ বেশ ক’টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান ও সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার জানান, গত বুধবার ভোর রাত থেকে পানি কমতে থাকলেও দুপুর থেকে আবারোও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে। শতশত পরিবারে রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মাঝে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে।

পূর্ব বড় ভেওলার বন্যা কবলিত পরিবারের মাঝে দুদিন ধরে খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন গতবারের চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিল উল্লাহ চৌধুরী।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে শতাধিক পরিবার জলাবদ্ধতার কাছে জিন্মি হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি ইতিমধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। এতে এই এলাকাসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহের সম্ভবনা রয়েছে। এতে পৌরশহর হুমকীর মুখে পড়তে পারে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের জন্য ইতিমধ্যে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2024/05/Election-Sagar-16-5-24.jpeg

ঈদগাঁওতে প্রজাপতি প্রতীকের মেহেনূর আক্তার পাখির প্রচারণা চলমান

  এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও : কক্সবাজারের নবসৃষ্ট ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে মহিলা ভাইস ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/