মূল্যবান প্রাণী মৃত্যুর পর প্রতিবারই ঘটনা ধামাচাপা দেয় কর্তৃপক্ষ
মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এবার “আঁখি” নামের বাঘটি মারা গেছে। গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ওই বাঘটি রহস্যজনক কারণে মারা যায়। ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসক মৃত বাঘের ময়নাতদন্ত করেন। পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য দিতে অনীহাসহ লকোচুরির কারণে বাঘের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ পায় বিলম্বে।
সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ঢাকার শ্যামলী থেকে তিনটি ব্যাঘ্র শাবক উদ্ধার করে র্যাবের একটি দল। পরে ব্যাঘ্র শাবকগুলো চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করলে তাদের নাম দেওয়া হয় জয়, জুঁই ও জ্যোতি। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবে বাংলাদেশ সফরে আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-জাপানের বন্ধুত্বের নির্দশন হিসেবে রণবীর ও জ্যোতি নামের দুইটি বাঘ উপহার দেয়ার ঘোষনা দেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষায় জ্যোতিকে নেওয়া হয় ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে এবং রনবীরকে নেয়া হয় গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে। তবে, জাপান সরকার বাঘ প্রতিপালনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই জানিয়ে রণবীর ও জ্যোতিকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর রণবীর ও জ্যোতির ঠিকানা হয় ঢাকার চিড়িয়াখানায়।
পার্কের দুইজন কর্মচারী বলেন, ২০১৫ সালে জয় ও জুঁই’র সংসারে দুটি বাচ্চা আসে। এ দুইটি বাচ্চার নাম রাখা হয় নয়ন ও আঁখি। সেই থেকে সাফারি পার্কে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় চারটি। গত ২৯ জানুয়ারি সকাল থেকে পার্কে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরা চারটি বাঘ দেখতে না পেয়ে কানাঘোষা শুরু করেন। আঁখি নামের বাঘটি হঠাৎ কোথাও উদাও হয়ে গেছে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এতে বাঘ মারা যাওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঘের বেস্টনীর বাইরে ও ভিতরের অংশে তিনটি বাঘ রয়েছে। তন্মধ্যে দুইটি বাঘ বেস্টনীর বাইরে ও অন্যটি বেস্টনীর ভেতরের অংশে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এসময় বাঘের বেস্টনীর দায়িত্বে ছিলেন পার্কের কর্মচারী রাজিব, তোফাজ্জল ও রউফ। চারটি বাঘের মধ্যে তিনটি বাঘ কেন নাই জানতে চাইলে ওই সময় রাজিব বলেন, একটি বাঘ ১৩ জানুয়ারি পালিয়ে গেছে। সেটির নাম আঁখি। অনেক চেষ্টা করেও বাঘটিকে খাঁচায় ঢুকানো যায়নি।
তবে কর্মচারীদের আরেকটি অংশ নিশ্চিত করেছে, গত ২৮ জানুয়ারি রাতে আঁখি মারা গেছে। ময়নাতদন্তের পর বাঘটিকে গোপনে মাটি চাপা দিয়ে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকে পার্কের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নিজেদের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ রাখেন, আবার কেউ কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
বাঘের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে বুধবার সাফারি পার্কের তত্ত¡াবধায়ক মোরশেদুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁর ব্যবহৃত দুইটি মুঠোফোনই বন্ধ পাওয়া যায়।
সাফারি পার্কের বনবিট কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোন সকাল থেকে বন্ধ থাকলেও তিনি বিকেল চারটার দিকে ফোন খোলেন। তবে তিনি রিং পড়লেও ফোন রিসিভ করেননি।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম গোলাম মওলা বাঘের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাঘটি কি কারণে মারা গেছে এখনও জানা যায়নি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা.শুভাগতসহ একদল চিকিৎসক বাঘটির ময়নাতদন্ত করেছেন। প্রতিবেদন পেলে বুঝা যাবে, কেন বাঘটি মারা গেছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মারা যায় সুদূর আফ্রিকা থেকে আনা জেব্রা, দুটি ব্যাঘ্র শাবক, হাতিসহ বেশ ক’টি প্রাণী। প্রতিবারই মূল্যবান এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর পার্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তথ্য গোপন করে গেছেন।
You must be logged in to post a comment.