কক্সবাজারের চকরিয়ার সাথে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার যোগাযোগ মাধ্যম দুটি। একটি সড়ক ও অন্যটি নদীপথ। মাতামুহুরীর নদীর নাব্যতা হারিয়ে ছোট-বড় বালুচর জেগে উঠায় এ পথে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এখন যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়ক। কিন্তু চকরিয়া ও লামার সীমান্তবর্তী কুমারী বেইলী ব্রীজটি অতি ঝুঁকির মুখে থাকায় যেকোন সময় ধসে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই ব্রীজ ধসে পড়লে চকরিয়ার সাথে লামা ও আলীকদমের অন্তত ৫ লাখ মানুষ যোগাযোগ ভোগান্তির মুখে পড়বে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার সীমানার মাত্র ১৫-২০গজ অদূরে কুমারী বেইলী ব্রীজটি। এই ব্রীজের সবক’টি পাটাতন নড়বড়ে হয়ে গেছে। দুটি দেবে গেছে। এছাড়া একপাশে হেলে পড়ায় ব্রীজটি এখন অতি ঝুঁকিতে। পণ্য ও যাত্রীবাহি যান চলাচলের সময় দুর্ঘটনার ভয়ে আতংকে থাকে মানুষ। ব্রীজটি অতি ঝুঁকিতে পড়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা হিসেবে লাল পতাকা টাঙ্গিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়ক। উচু-নিচু পাহাড়ের চুঁড়া বেয়ে নির্মিত সড়কটি যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি নজর কাড়ে পর্যটকদেরও। কিন্তু অতি দ্রুত সড়ক নির্মাণ করার সময় পাহাড়ি ছড়াখালের উপর স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বসানো হয় বেইলী ব্রীজ। টানা ৩০ বছর ওই বেইলী ব্রীজের উপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় কুমারীসহ কয়েকটি ব্রীজ নড়বড়ে হয়ে গেছে। সব চেয়ে বেশী ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুমারী বেইলী ব্রীজটি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ রাজনীতিবিদদের অভিমত, কুমারী বেইলী ব্রীজসহ চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়কের সকল অস্থায়ী বেইলী ব্রীজগুলো উঠিয়ে পাঁকা স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে স্থায়ী সেতু না হোক কুমারী ব্রীজটি মেরামত না হলে ব্রীজটি ধসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এতে ভোগান্তিতে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে লামা-আলীকদমের মানুষের।
চকরিয়ার ব্যবসায়ী হারাধন দাশ বলেন, আমাদের প্রতিদিন কাঁচামাল আনতে ওই সড়ক দিয়ে লামা-আলীকদম যেতে হয়। কিন্তু কুমারী বেইলী ব্রীজটি নড়বড়ে হওয়ায় বেশী পরিমাণ মাল আনতে পারছি না। যার ফলে আমারা যারা কাঁচামালের ব্যবসা করছি তাদের অল্প পরিমাণ মাল আনতে হচ্ছে বিদায় লোকসান গুণতে হচ্ছে।
চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহম্মদ বলেন, ফাঁসিয়াখালী সড়কের কুমারী এলাকায় বেইলী ব্রীজটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় সময়ই গাড়ির চাকা পাঙ্গচারসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া এলাকাটিও ডাকাত প্রবণ। ওই ব্রীজটি পার হওয়ার সময় প্রায়শই ডাকাতির শিকার হতে হয় চালকসহ যাত্রীদের।
আলীকদমের বাসিন্দা শিক্ষার্থী ক্যাউচাঁই বলেন, আমাদের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে এটি। ওই বেইলী ব্রীজটি পার হওয়ার সময় খুবই ভয় করে। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের একমাত্র দাবি বেইলী ব্রীজটির পরিবর্তে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক। এতে করে তিন উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
ব্রীজটির ব্যাপারে জানতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বান্দরবান জেলায় কর্মরত উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউছুপ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, মুঠোফোনে একাধিকবার রিং করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে, সওজ’র উপ-প্রকৌশলী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজটি মেরামতের গুরত্বারোপ তুলে ধরে উর্ধ্বতন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতিসহ বরাদ্দ পেলে ব্রীজটি মেরামত করা হবে।
You must be logged in to post a comment.