সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / চোখে ভাসছে মাকে ধর্ষণ ও বাবাকে গুলি করে মারার দৃশ্য

চোখে ভাসছে মাকে ধর্ষণ ও বাবাকে গুলি করে মারার দৃশ্য

নিজে না খেয়ে ছোট ভাইকে খাওয়াচ্ছে নুরে জান্নাত।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

নুরে জান্নাত নামে ৯ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা শিশু তার ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের বুচিডং সিকদারপাড়া থেকে। মাকে ধর্ষণের পর বাবাকে গুলি করে মারার দৃশ্য চোখে ভাসতে ভাসতে শিশুমনের দুর্বল শরীর নিয়ে খালার সাথে (১৪ নভেম্বর) এসে উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে পৌঁছায়। খালার সহায়তায় অনেক কষ্টে আসেন। কোমল মনের ছোট্র এই শিশুর চোখের সামনে বার্মিজ আর্মিদের গুলিতে বাবা নুরুল ইসলামের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি।

মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় বালুখালি এসে এ প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে শিশু নুরে জান্নাত বলেন, আঁর মারে জুলুম গরি বাবারে গুলি মারি বর্মা মিলিটারিয়ে মারি ফেলাইয়ে। আই গুরা ভাইওয়া লই কেন গইজ্জম। নুর জান্নাত জানান, তার চোখের সামনে মাকে ধর্ষণ ও বাবাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন। ছোট ভাইকে নিয়ে সে এখন কী করবেন? শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষের দলে খালার সাথে পালিয়ে আসেন তিনি। খালা আমিনা খাতুন (৪০) জানান, শুধু তার বাবা মাই নন, তার মতো আরো অনেকেই হারিয়েছেন বাবা-মা, ছেলে সন্তান, স্ত্রী স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। বার্মিজ আর্মি ছাড়াও বিজিপি, নাসাকা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা এ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে চলছে এই নারকীয় হত্যাকান্ড। প্রাণভয়ে টেকনাফের লম্বা বিল, উখিয়ার আন্জুমানপাড়াসহ অনেকেই সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে যারা ফিরছেন, তাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ, ক্ষুধার্থ, ও জীর্ণশীর্ণ চেহারায় বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে বিচ্ছিন্নভাবে শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ বালুখালি, থাইংখালি ও কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশমুখী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর সহায় সম্পদ ফেলে এপারে চলে আসছে। এরই মধ্যে সে দেশের মংডু, বুচিডং, রাচিডং, টাউনশিপ (জেলা) এলাকার শত শত গ্রাম রোহিঙ্গাশূন্য হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার আড়াই মাসের মতো পেরিয়ে গেলেও এখনো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

মিয়ানমার থেকে আসা দিলদার বেগম, রোকেয়া বেগম, ফাতেমা, হাজেরা, রহমত উল্লাহ, হামিদ হোসেন, এনায়েত উল্লাহ, মিনারা খাতুন, আব্দুল খালেকসহ একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন, গত পাঁচদিন আগে আরাকান রাজ্যের বুচিডং সিকদারপাড়া গ্রাম থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন তারা। পাঁচদিন পর বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছেন। অসহায় রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় পর্বত পেরিয়ে নদী ও সাগর পথ দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে থাকে।

২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার সূত্র ধরে রোহিঙ্গার ঢল বাড়তে থাকে। আড়াই মাসের ব্যবধানে প্রায় ৭ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গার প্রবেশ ঘটেছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে। রোহিঙ্গাদের অতিরিক্ত চাপের কারণে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। পাশাপাশি উখিয়ায় অতিরিক্ত বাসাভাড়া, অফিস ও গাড়িভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের নির্মম নির্যাতনের ফলে তারা প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

 

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

গত দেড়মাসে ৩টি পাহাড় কেটে সাবাড় : পাহাড়খেকো আহসান উল্লাহ’কে ঠেকাবে কে ?

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও এসবের কোনো কিছুই ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/