মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় “মোরা” মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া-কুতুবদিয়া উপজেলা প্রশাসন। বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিন উপজেলায় দু’লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলায় হেডকোয়ার্টারে কন্ট্রোল রুম খুলেছে। মজুদ রেখেছে শুকনো খাবার। গঠন করা হয়েয়ে মেডিকেল টিম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা টিম, উপকূল থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে সিপিবি’র একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জরুরী সভা করে এসব প্রস্ততির পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় এম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে উপকূলবাসিকে সতর্ক করছে। সোমবার এশার নামাজের পর প্রতিটি মসজিদে ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে উপকূলের মানুষকে।
চকরিয়া-কুতুবদিয়ার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পেকুয়ার সিপিবি কর্মকর্তা মুনির চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দুরে রয়েছে। ওই ঝড়ের ব্যস ৬৪ কিলোমিটার। স্পর্টে বাতাসের গতিবেগ ১১৭ কিলোমিটার বেগে বইছে। মধ্যরাত থেকে সকালের মধ্যে যেকোন সময়ে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। এর আগেই হালকা বাতাস ও বজ্র বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। ১০ নং মহাবিপদ সংকেত ঘোষনার পর চকরিয়ায় ১০৩৫জন, পেকুয়ায় ৭৩৫জন ও কুতুবদিয়ায় ৮২৫জন সিপিবি’র ভোলান্টিয়ার মাঠে নেমেছে। উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে তারা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়া এবং ১০ নং মহাবিপদ সংকেত ঘোষনা করার পর উপকূলের লোকজনকে সাইক্লোন শ্লেল্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও সিপিবি’র কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ১৮ ইউনিয়নের ১৮টি ও স্ট্যান্ডবাই ২টিসহ মোট ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
এদিকে, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাহাবুবউল করিমের সভাপতিত্বে জরুরী প্রস্ততি সভায় জানান, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থানে সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতসহ পতাকা উত্তোলন, মাইকিং করে লোকজনকে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, পেকুয়া সদর, টইটং ও বারবাকিয়ার চেয়ারম্যানদের ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। উপজেলায় ৭২টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনে কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, উপজেলা প্রশাসন উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, সকল প্রকার যানবাহন প্রস্তুত রেখেছে।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুইয়া বলেন, দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়নে পুলিশ টিম পাহারায় রয়েছে। দুর্যোগকালীর সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশের সকল সদস্যকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
ওসি আরো বলেন, অনেক লোক ঘরের মালামাল ফেলে রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেনা। জনপ্রতিনিধি, সিপিবি’র ভোলান্টিয়ারদের নিয়ে পুলিশ ওই লোকদের নানাভাবে বুঝানোর পরও যারা আসছেনা তাদেরকে বাধ্য করে নিয়ে আসা হচ্ছে।
চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো.কাজী মতিউল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে চকরিয়া ও পেকুয়ায় অন্তত পুলিশের ২০টি টিম মাঠে নামানো হয়েছে। থানা ও ফাঁড়িগুলোর পুলিশের সকল সদস্যকে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, রাতে চরণদ্বীপ ও বদরখালী সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, শতশত নারী-পুরুষ হেঁটে হেঁটে আশ্রয়স্থলে যাচ্ছিল। সাথে ছিল গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী এবং ভরণ-পোষনের সল্প কাপড়। তাদের অনেকেই বলেন, ৯১ সালে বিপদ সংকেতকে আমলে না নেয়ায় এবং মালামালের মায়া ছাড়তে না পারায় অনেক আত্মীয়-স্বজন প্রাণ হারিয়েছেন। সে শিক্ষা থেকে আর মালামালের মায়া করছিনা। জীবন বাঁচাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলার সাথে সাথে সাইক্লোন শেল্টারে চলে যাচ্ছি।
অপরদিকে, তিন উপজেলার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রাত ৮টার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ফার্মেসী ও খাবার দোকান খোলা ছিল। চকরিয়া পৌর এলাকার বেশ ক’জন বাসিন্দা বলেন, আমরা দোকানে চিড়া-গুড় পায়নি। জানা যায়, উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগকালীন সময়ে শুকনো খাবার সরবরাহ করতে প্রায় প্রতিটি দোকানের চিড়া-গুড় বুকিং করে রেখেছে।
You must be logged in to post a comment.