কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তা পাকিস্তান-ব্রিটিশ শাসনামলেও হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
৮ জুলাই, রবিবার ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ, হামলাকারীদের গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
পদযাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
ওই পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) ৩০ জনের বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি ন্যায্য ও জনপ্রিয় আন্দোলন। সরকারও শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু লোক সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হঠাৎ করে হামলা চালাল, যখন তারা কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি তুলছিল। আমাদের দেশে এর আগে এ রকম হামলা কখনোই ঘটেনি। এমনকি পাকিস্তান ও ব্রিটিশ শাসনামলেও হয়নি।
এটি আশ্চর্যজনক ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। একটি স্বাধীন দেশে আমরা এ রকম হামলার কথা চিন্তা করতে পারি না। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। হামলাকারীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনেক সময়েই শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি তাদের সমর্থন জুগিয়েছে। কিন্তু কোটা আন্দোলনে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কোনো সমর্থন দেয়নি। এমনকি তারা আহত ছাত্রদের সাহায্যের চেষ্টাও করেনি।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় পদযাত্রায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক অধ্যাপক আকমল হুসেইন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব।
পদযাত্রায় শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবি পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন। ওই পাঁচটি দাবি হলো সব হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ সরকারের বহন করা, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হয়রানিকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা ও কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনসহ অন্য ছাত্রদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে ব্যবসা অনুষদের সামনে মানববন্ধন করেছেন।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগও ওঠেছে এ ছাত্র সংগঠনটির বিরুদ্ধে। আন্দোলন করে আসা বহু শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্র:হাসান আদিল-priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.