আশ্রয় দিতে পাহাড় ও বন কেটে নির্মিত হয়েছে রোহিঙ্গা বসতি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাদের গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম ধাপে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শিগরিই শুরু হবে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিরাপদে এবং সসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে। সে লক্ষ্যে জয়েন্ট ওয়ারর্কিং গ্রুপ কাজ করছে। এবং প্রত্যাবাসন শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে সরকার।
২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান চুক্তির অধীনে গত বছরের (২০১৬) ৯ অক্টোবর থেকে আগত সকল রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হয়েছে সরকার। এ চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে এবং তারাই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করবে।
সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নির্বাচনে আসার কোনো বিকল্প বিএনপির হাতে নেই। তবে দেশের উন্নয়ণ অব্যাহত রাখতে এবারও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।
এসময় সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কক্সবাজারের এমপি আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপিস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ছয় লাখ ৭২ হাজার মানুষ পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে; যাদের ৯০ শতাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ৪ লাখ ৫০ রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে; যার মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারই নতুন। এসব শিশুর মধ্যে আবার অভিভাবকহীন ৩৬ হাজার ৩৭৩ শিশুও রয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। পালিয়ে আসা শিশু শরণার্থীদের বাইরেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ১০০ নবজাতক।
বর্বর ওই অভিযানে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচার গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জেইদ আল রাদ আল হুসেইন বলেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হয়তো গণহত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত করেছে। এর আগে তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের জ্বলন্ত উদাহারণ (টেক্সটবুক এক্সাম্পল অব এথনিক ক্লিনজিং) বলে বর্ণনা করেছিলেন।
প্যারিসভিত্তিক মানবিক সাহায্য সংস্থা মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানায়, আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিসংতা ছড়িয়ে পড়ার এক মাসেই হত্যার শিকার হয়েছিলেন কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নাগরিক।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণকরেছে। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বয়স ১৮-এর নিচে। সবচেয়ে ছোটজনের বয়স ছিল নয় বছর।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর জানায়, ২৫ অগাস্ট সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর রাখাইনে মোট ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র:আবু আজাদ-priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.