ফলোআপ: উপকূলীয় এলাকা গোমাতলীর স্লুইচ গেইট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের দাবী

ফাইল ফটো

এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :

কক্সবাজার সদর উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন পোকখালীর গোমাতলী এলাকার ৬ নং সুইচ গেইট সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি দ্রুততম সময়ে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের জোরদাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। অন্যথায় তাদের প্রিয় এলাকা ছেড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিতে হবে বলেও জানান অনেকে। দীর্ঘ এক বছর পার হলেও কিংবা ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতের পরও সংস্কার না হওয়ায় গত দু-তিনদিনের পূর্ণিমার জোয়ারে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা জোয়ারের পানিতে  তলিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ভেসে গেছে বহু একর মাঠের লবণ ও চিংড়ি চাষ। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইচ গেইটটি দিয়ে জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার ডি, এ ব্লক, রিয়াইজ্যাকাটা ও বারডইল্যা ঘোনায় চলছে জোয়ার ভাটা। যে কারনে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত গোমাতলীর বহু লবণ চাষী চরম দুর্ভোগ আর দূর্গতিতে পোহাচ্ছে বলে সূত্রে প্রকাশ। লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়িঘের, লবণ মাঠ, মাছ ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ প্রতি বর্ষা আসলেই আরো একটি ২৯শে এপ্রিলের ছোবল আতঙ্কে থাকেন। শীঘ্রই অরক্ষিত এ বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানান স্থানীয়রা।

১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বেঁড়িবাধ ও স্লইচ গেইটসমূহ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেকসই কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। প্রতিদিনকার জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীন সড়ক-উপসড়ক সমুহ। জানা যায়, ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং স্লইচ গেইট এলাকা ভাঙ্গনের কারনে ওই পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়াতে চলতি লবণ মৌসুমে শত শত একর জমি লবণ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি পূর্ণিমার ভরা জোয়ারের পানিতে ফের তলিয়ে গেছে লবণ মাঠ। এতে করে এলাকার বিপুল সংখ্যক লবণ চাষী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান এক ইউপি সদস্য। প্রান্তিক লবণ চাষীদের মুখে এখন আশার আলোর পরিবর্তে হতাশার কালো ছায়া দেখা দিয়েছে। রাজঘাট এলাকার এক লবণ চাষীর মতে, গত ১৫-১৬ অর্থ বছরের লবন মৌসুমে উৎপাদিত লবণের দাম ছিল ,আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষীরা খুবই লাভবান হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার প্রান্তিক লবণের মূল্য নির্ধারণ ও বিদেশ থেকে আমদানী বন্ধ করে দেওয়ায় গোমাতলীর লবণ চাষিরা লাভবান হয়েছিল। একই এলাকার অন্য এক ব্যবসায়ীর মতে, গেল রোয়ানুর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জোয়ার ভাটায় চলছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম।

পোকখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজাহের আহমেদ জানান- এ বেড়িবাঁধটি সংস্কার না করার ফলে লবণ ও চিংড়ি চাষে জড়িত হাজার হাজার মানুষজন চরমভাবে বেকায়দায় পড়েছে। পাশাপাশি ঘরবাড়িতে প্লাবিত হয়ে লোকজনের সুখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বর্ষার পূর্বে যদি স্লুইচ গেইট সংলগ্ন ভাঙ্গা বেড়িবাঁধটি সংস্কার না করে তাহলে এলাকাবাসীকে তাদের প্রিয় এলাকা উপকূল ছেড়ে পাহাড়ে বসতি করতে হবে বলে জানান।

অপরদিকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনিও জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার বহু মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন জোয়ারের পানি উলেখিত এলাকার বসতঘর ও শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে।

অন্যদিকে ছাত্রনেতা বেলাল উদ্দিন জানান- গোমাতলীর মানুষজন শান্তির পরিবর্তে অশান্তিতে দিনাতিপাত করছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার করে এলাকাবাসীকে মলিন চেহারায় থেকে হাসি ফোটানোর জোর দাবী। অন্যথায় বর্ষামৌসুমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে মরণ দশায় ভোগতে হবে।

আবার ইউনিয়নের উত্তর গোমাতলী ৭ নং ওয়ার্ড রাজঘাট পাড়া ফুলছড়ি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে রাজঘাট পাড়ার মানুষ দীর্ঘ মাস ধরে নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে মসজিদ কবরস্থান ও রাজঘাট। জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ভাঙ্গনরোধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ ও কামনা করেছেন।