সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / বিবিধ / ফারেনহাইট স্কেলের যত কথা!

ফারেনহাইট স্কেলের যত কথা!


কারো জ্বর হলে চটজলদি থার্মোমিটারটা দিয়ে মেপে নেন তার জ্বর। থার্মোমিটারের ভেতরের কালো দাগটা দেখে সহজেই পরিমাপ করে নেন তার গায়ে জ্বরের পরিমান কেমন। আর এই পরিমানের একক হচ্ছে ফারেনহাইট। এই ফারেনহাইট সাম্পর্কে জানেন কি আপনি? উত্তর যদি না হয় তবে এ লেখা আপনার জন্যই।

ফারেনহাইট হচ্ছে তাপমাত্রা পরিমাপের স্কেল। জার্মান বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েলে ফারেনহাইট এই তাপমাত্রা পরিমাপের স্কেল আবিষ্কার করেন। মূলত তার নামানুসারে এই স্কেলের নামকরন করা হয়।

যেভাবে আবিষ্কার ফারেনহাইট স্কেলেরঃ
বিজ্ঞানী ফারেনহাইট তখন স্কুল, কলেজের পাঠ চুকিয়ে গবেষণার কাজে মনোযোগী হলেন। তিনি স্বদেশের বিভিন্ন গবেষণাগারে গবেষণার পর উন্নততর গবেষণার জন্য ইংল্যান্ড, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ পরিভ্রমণ করেন। সেখানে অনেক খ্যাতিমান বিজ্ঞানীর সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হলেন। তিনি বিদেশে থাকাকালীন সময়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। জীবনের বেশ অনেকটা সময় তিনি তাপমাত্রা পরিমাপ নিয়ে কাজ করেছেন। স্বদেশে এসে থার্মোমিটারের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। সেই সময় পর্যন্ত থার্মোমিটারে পারদ ব্যাবহারের প্রচলন হয়নি। তখন তরল হিসেবে থার্মোমিটারে অ্যালকোহল কে ই ব্যাবহার করা হত। বিজ্ঞানী ফারেনহাইট বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর স্থির করলেন, থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করলেই বেশী ভালো হয়। আর এই উদ্দেশ্যেই তিনি ১৭২৪ খ্রিষ্টাব্দে পারদ থার্মোমিটার ব্যবহারের প্রথা প্রবর্তন করেন। যে স্কেলটির প্রবর্তন করেন সেই স্কেলটির নাম, ‘ফারহেনহাট স্কেল’।

ফারেনহাইট স্কেলের মূল হিসাবঃ
এই স্কেল প্রবর্তনের মূলে তার একটি বদ্ধমূল ধারণা কাজ করে। সেটি হচ্ছে মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৬ ডিগ্রি। এই হিসেবে তিনি বরফের গলনাঙ্ক ৩২ ডিগ্রি নির্নয় করেছিলেন। এই ফারেনহাইট স্কেলে পানির হিমাংক বিবেচনা করা হয় ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং স্ফুটনাঙ্ক বিবেচনা করা হয় ২১২ ডিগ্রি ফারহেনহাইট। আর এই দুই দুইয়ের মধ্যবর্তী অংশকে ১৮০টি ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করা হয়। এই ক্ষুদ্র ভাগ হচ্ছে ১ ডিগ্রি ফারহেনহাইট।

মূল ধারনাঃ
ফারেনহাইটের ১৭২৪ সালে সৃষ্ট নিবন্ধ অনুসারে তাপমাত্রা নিরূপণে তিনি তিনটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুর কথা তুলে ধরেছেন –

• সর্বনিম্ন তাপমাত্রার জন্য বরফ, পানি এবং অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড লবণকে একত্রিত করে মিশ্রণ প্রস্তুত করা হয়। এরপর সাম্যাবস্থার জন্য অপেক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে এ মিশ্রণে থার্মোমিটার রাখা হয় এবং থার্মোমিটারের তরলকে সর্বনিম্ন বিন্দুতে নিয়ে আসা হয়, যা ০° ফারেনহাইট নামে পরিচিত।

• দ্বিতীয় তাপমাত্রার জন্য থার্মোমিটারকে পানিতে রাখা হয়। যখন পানি বরফের আকৃতি ধারণ করে তখন এটি ৩২° ফারেনহাইট নামে পরিচিতি পায়।

• তৃতীয় যোগ্যতা নির্ধারণী বিন্দু হিসেবে থার্মোমিটারকে বাহুর নীচে কিংবা মুখে রাখা হয়। এক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হিসেবে ৯৬° ফারেনহাইট ধরা হয়।

ফারেনহাইট লক্ষ্য করে দেখেছেন যে, ৬০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় পারদ তাপে ফুটে উঠে। অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে একত্রে কাজ করে তিনি দেখেনে যে, পানির স্ফুটনাঙ্ক হিমাঙ্কেরচেয়ে প্রায় ১৮০ ডিগ্রী বেশি। তাই তারা পানির স্ফুটনাঙ্ক এবং হিমাঙ্কের মধ্যবর্তী পার্থক্য পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রী ধরে ১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের সংজ্ঞা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে নতুন সংশোধিত স্কেলে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৯৮.৬° ফারেনহাইট, যা তাঁর প্রকৃত স্কেল ছিল ৯৬ ডিগ্রী।

সেলসিয়াস স্কেল ব্যবহারের পূর্বে ইউরোপের সর্বত্র ফারেনহাইট স্কেল একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করা হতো। এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের প্রাত্যহিক সঙ্গী হিসেবে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্যে এটি ব্যবহার করেন। পাশাপাশি বেলিজ, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায়ও এর প্রচলন রয়েছে।

আমাদের দেশে অবশ্য তাপমাত্রা কে সেলসিয়াসের হিসেবেই হিসেব করা হয়।

জেনে নেওয়া যাক ফারেনহাইট তাপমাত্রার রুপান্তরঃ

ফারেনহাইট থেকে >>>> ফারেনহাইটে
সেলসিয়াস [°C] = ([°F] − ৩২) × ৫/৯ [°F] = [°C] × ৯/৫+ ৩২
কেলভিন [K] = ([°F] + ৪৫৯.৬৭) × ৫/৯ [°F] = [K] × ৯/৫ − ৪৫৯.৬৭
রানকিন [°R] = [°F] + ৪৫৯.৬৭ [°F] = [°R] − ৪৫৯.৬৭
ডেলিসেল [°De] = (২১২ − [°F]) × ৫/৬ [°F] = ২১২ − [°De] × ৬/৫
নিউটন [°N] = ([°F] − ৩২) × ১১/৬০ [°F] = [°N] ×৬০/১১+ ৩২
রিউমার [°Ré] = ([°F] − ৩২) × ৪/৯ [°F] = [°Ré] × ৪/৯+ ৩২
রোমার [°Rø] = ([°F] − ৩২) × ৭/২৪+ ৭.৫ [°F] = ([°Rø] − ৭.৫) × ২৪/৭+ ৩২

দেখলেন তো, মাত্র এক মিনিটে গায়ের জ্বর মেপে নেওয়া গেলেও এই ফারেনহাইট স্কেলের কত শত হিসেব রয়েছে। সত্যি বিজ্ঞান জটিল সব হিসাবকে মিলিয়ে, সহজ আবিষ্কারের মাধ্যমে আমদের জীবন কে অনেক সহজ করে দিয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।wisegeek.org/priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

৩০ মার্চ; ইতিহাসের এইদনে https://coxview.com/sergio-ramos-sports-birth-day/

৩০ মার্চ; ইতিহাসের এইদনে

সার্জিও রামোস গার্সিয়া একজন স্প্যানিশ পেশাদার ফুটবলার যিনি লা লিগা ক্লাব সেভিলার হয়ে সেন্টার-ব্যাক হিসেবে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/