অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই কঠোর হচ্ছে। ফ্রান্সও তার বাইরে নয়। দুই দশক ধরে দেশটিতে অভিবাসীদের রুখতে আইন ও শক্তিপ্রয়োগ করে যাচ্ছে ফ্রান্সের শাসকগোষ্ঠী। সেখানকার সমাজে অভিবাসীবিরোধী বীজ বুনে দেওয়া হচ্ছে, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অথচ ফ্রান্সের যে দলটি রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতেছে, সে দলের কমপক্ষে ১৫ জন খেলোয়াড় আফ্রিকান বংশোদ্ভুত। এদের অনেকে নিজে অথবা তাদের পরিবার আফ্রিকা থেকে অভিবাসী হয়ে ফ্রান্সে এসেছিল। এমনকি এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সেনশন ১৯ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপ্পের পরিবারও আফ্রিকান অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে এসেছে। এমবাপ্পের মা আলজেরিয়ান, বাবা ক্যামেরুনের।
এ ছাড়া স্যামুয়েল উমতিতি ক্যামেরুনে, স্টিভ মান্দানা কঙ্গোতে জন্মগ্রহণ করেছেন। পল পগবার বাবা-মা এসেছেন গিনি থেকে। এনগোলো কন্তের পরিবার এসেছে মালি থেকে। মাতুইদির বাবা-মায়ের জন্ম অ্যাঙ্গোলায়। প্রেসনেল কিমপেবে ও স্টিভেন এনজনজির বাবার জন্ম কঙ্গোতে। কোরেনটিন টলিসোর বাবা এসেছেন টোগো থেকে। এ তালিকা লম্বা হতেই থাকবে।
বলতে গেলে অভিবাসীরাই ফ্রান্সকে বিশ্বকাপটা এনে দিলো। অথচ অভিবাসীদের প্রতি ফ্রান্সের আচরণ খুবই বৈষম্যমূলক।
২০১৫ সালের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্যারিসের বাইরে একটি আবাসন প্রকল্পে দুই কিশোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা শহরাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই দুই কিশোরকে পুলিশ ধাওয়া করার এক পর্যায়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যা করে। চলতি বছরের জুন মাসে প্যারিসের পাশের শহর নান্তেসে পুলিশ গিনি থেকে আসা একজন অভিবাসীকে চেকপোস্টে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
অভিবাসন ও অভিবাসীদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে বিশাল সঙ্কটে ভুগছে। সব জায়গাতেই অভিবাসীদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়েছে, বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়নি, এমনকি তাদের নূন্যতম সামাজিক মর্যাদা থেকেও অনেক সময় বঞ্চিত রাখা হয়েছে।
যে অভিবাসীদের ওপর এত নির্যাতন, তারাই ফ্রান্সের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গৌরবটি এনে দিলো। উপরের কার্টুনটিই যেন সব কথা বলছে। কার্টুনটি কে এঁকেছে, তা জানা যায়নি। তবে এটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা বংশোদ্ভুত মার্কিন কমেডিয়ান ট্রেভর নোয়াহ, যিনি নিজেও অভিবাসন ও বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
সূত্র:মিজানুর রহমান-priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.