সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমবে ও বাড়বে

বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমবে ও বাড়বে

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। এটি দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট, যার পরিমাণ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।

বাজেটে যেসব পণ্যের উপর শুল্ক প্রত্যাহার ও শুল্ক কমানো হয়েছে সেসব পণ্যের দাম কমবে। এছাড়া সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে অনেক পণ্যের দাম বাড়বে।

যেসব পণ্যের দাম কমবে

দেশীয় মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড: আইসিটি খাত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান হিসেবে শুল্ক-কর প্রণোদনা এবং নীতিসহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাডের স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে।

দেশীয় মোটরসাইকেল ও হাইব্রিড গাড়ি: মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ খাতের জন্য শর্তসাপেক্ষে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে বিগত অর্থবছরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। মোটরসাইকেল শিল্পে অগ্রসরমান দেশসমূহে অনুসৃত পদ্ধতি পর্যালোচনা করে ওই প্রজ্ঞাপনটিকে আরো যুগোপযোগী ও বিনিয়োগবান্ধব করে নতুনভাবে জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে অতি দ্রুত মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি। একই সঙ্গে হাইব্রিড যানবাহন বৃদ্ধি করতে শুল্কহার পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে।

দেশীয় ব্যাটারি: দেশে উৎপাদিত ব্যাটারি দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানিও হচ্ছে। ইতোমধ্যে তৈরি পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক এবং কাঁচামালে নিম্ন শুল্কহার রয়েছে। আগামী বাজেটে এই সেক্টরের কাঁচামাল জিংক ক্যালট, আর্সেনিক, এন্টিমনির শুল্কহার হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি যন্ত্রপাতি: কৃষিকাজে আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কম খরচে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা যায় সে লক্ষ্যে বিদ্যমান ১ শতাংশ আমদানি শুল্কের আওতায় আরও কিছু কৃষি উপকরণ যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্য কমতে পারে।

সিরামিক: বর্তমানে দেশে সিরামিক শিল্পের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। বাজেটে এই শিল্পের প্রতিরক্ষণ সুবিধা অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ট্যাল্ক, মাইকা, অ্যালুমিনা লাইনার ইত্যাদি কাঁচামালের শুল্ক আরও হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধসহ অন্যান্য ঔষধ: বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় এই খাতকে আরও বিকাশিত করার জন্য এই শিল্পে ব্যবহৃত বেশ কিছু কাঁচামালে শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধের কাঁচামালও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে পণ্য: কৃষিখাতের আরও উন্নতিতে বিভিন্ন ধরনের চারাগাছের পরিচর্যায় ব্যবহৃত মালচ (Mulch) এবং গ্রিন হাউস প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত শেডিং নেটের ওপর শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষিপণ্যের বেশকিছু পণ্যের দাম কমতে পারে। একই সঙ্গে কৃষির অন্যতম উপখাত মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের খাদ্যসামগ্রী ও নানাবিধ উপকরণ আমদানিতে প্রয়োজনীয় আরও কতিপয় পণ্যে শুল্ক সুবিধা তথা প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

চামড়াজাত শিল্প যন্ত্রপাতি: চামড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি শিল্প এবং এক্ষেত্রে কাঁচামালের সিংহভাগ দেশেই উৎপন্ন হয়। এই খাতে ব্যবহৃত সব রাসায়নিক পণ্যকে অনেক আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্পের প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিদেশি ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্ত অনুযায়ী নিরাপদ কারখানা স্থাপন করতে হচ্ছে। সে কারণে এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় Busbar trunking system এবং Electrical Panel কে মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া আমদানি করা সাবান, শ্যাম্পু, জেল, তেল, টাইলস, টয়লেট সামগ্রী, তাস, রেডিও ক্যাসেট প্লেয়ার, সব ধরনের পার্টিক্যাল বোর্ড, জানালা, ফাইবারযুক্ত পেপার ও পেপার বোর্ড, করোগেডেপ পেপার, পেপার বোর্ডে তৈরি বাক্স, কার্টন, ওরিয়েন্টেড স্ট্রান্ড বোর্ড, ফাইবার বোর্ড, হার্ডবোর্ড, প্লাইউড দরজা, বস্তা, ব্যাগ, ছাপানো পণ্যসামগ্রী ইত্যাদি পণ্যের দাম কমবে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে

সিগারেট, বিড়ি ও তামাকজাত পণ্য: ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি করও বাড়ানো হয়েছে বিড়ি, সিগারেটও ও তামাকজাত পণ্যে। ফলে দাম বাড়তে পারে।

অটোরিকশা: ব্যাটারি চালিত, সিএনজি চালিত অটোরিকশার দাম বাড়তে পারে। এতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

ফাস্টফুড: চিকেন ফ্রাই, বার্গারের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে এ ধরনের ফাস্টফুডের দাম বাড়বে।

মোবাইল ফোন: প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেটের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ১ জুনের পর থেকে মোবাইল কিনতে হলে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।

এমএস রড: রড তৈরির কাঁচামাল লোহার পিণ্ড, স্ক্রাপ, বিলেট আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া এতদিন এসব পণ্যে নির্ধারিত ট্যারিফের ভিত্তি ধরে ভ্যাট আদায় করা হতো, এখন থেকে বাজার মূল্যে ভ্যাট আদায় করা হবে। ফলে রডের দাম বাড়তে পারে।

অন্যান্য নির্মাণ উপকরণ: ইট, পেরেক, টেউটিন, তারা কাটা, লোহার পেরেক, নাট, বোল্টসহ লোহা জাতীয় বিভিন্ন পণ্যের নির্ধারিত মূল্যে (ট্যারিফ ভ্যালু) ভ্যাট আদায় করা হতো। এখন থেকে বাজার মূল্যে শুল্ক আদায় করা হবে। আবার কাঁচামালে বিভিন্ন শুল্ক আরোপ হয়েছে। ফলে এসব পণ্যে দাম বাড়তে পারে।

দেশীয় গুঁড়া দুধ: তরল দুধ থেকে গুঁড়া দুধ উৎপাদন করা হলে তার প্রতিকেজি ১০০ টাকা ট্যারিফ মূল্য ধরে ভ্যাট আদায় করা হতো। এখন থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হবে। এতে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নামি-দামি হোটেল রেস্তোরাঁর খাবার: সাধারণ হোটেলের খাবারে ৪ শতাংশ ভ্যাট হলেও নামি-দামি রেস্তোরাঁর খাবারে ভ্যাট বেড়ে ১৫ শতাংশ হবে। ফলে খাওয়ার খরচ বাড়বে।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের খরচ: বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। ভ্যাট হার একক করায় এখন থেকে এক্ষেত্রেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হবে। ফলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে খরচ বাড়বে।

বিমান ভ্রমণ খরচ: সার্কভুক্ত দেশের বাইরে বিমান ভ্রমণে খরচ বাড়বে। বিমান ভাড়ার ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব ও টিউব লাইট: নতুন ভ্যাট আইনের কারণে এসব পণ্যে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ হবে। এতে দাম বাড়তে পারে।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ: এতদিন গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হতো। এখন থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হবে। ফলে বাড়বে গ্যাস ও বিদ্যুতের খরচ।

এলপি গ্যাস: ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়বে এলপি গ্যাসেরও। এতদিন এই গ্যাসেরও ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হতো। এখন থেকে ১৫ শতাংশ দিতে হবে। বৈদ্যুতিক খুঁটির দামও একই কারণে বাড়তে পারে।

মসলা পণ্য: জিরা, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে এসব মসলা আমদানির সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

ইমিটেশন জুয়েলারি: স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নারীদের প্রিয় ইমিটেশন জুয়েলারির দাম বাড়বে। এ পণ্যটির সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাট হারও বাড়ানো হয়েছে।

ব্যাটারি: বাজেটে লিথিয়াম, লেড এসিড, ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইডসহ সব ধরনের ব্যাটারি সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারিসহ, আইপিএস, ইউপিএসে ব্যবহৃত ব্যাটারির দাম বাড়বে।

কিচেনওয়্যার: রান্না ঘরে ব্যবহৃত টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যারের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে পণ্যটির দাম বাড়বে।

টুথব্রাশ: ডেন্টাল প্লেট ব্রাশসহ সব ধরনের টুথ ব্রাশের শুল্ক ২০ থেকে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এ জাতীয় পণ্যের দাম বাড়বে।

সোলার প্যানেল: দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে সোলার প্যানেলের আমদানি শুল্ক ৫ থেকে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে পণ্যটির দাম বাড়বে।

এছাড়া আরো দাম বাড়তে পারে বিড়ি-সিগারেট, জর্দা-গুল, জানালার পর্দা, জামা-কাপড়, জুতা, সিরামিকের তৈরি ইট, কম্বল, রেজর, ব্লেড, রঙ্গিন টেলিভিশন, টিভি কার্ড, আসবাবপত্র, সেনিটারি টাওয়াল, শ্যাম্পু, প্রসাধন সামগ্রী, ডিওড্রেন্ট ইত্যাদির।

সূত্র:priyo.com,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর সংবাদকর্মী আবু হেনা সাগরের মাতা অসুস্থ : দোয়া কামনা 

  বার্তা পরিবেশক : কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার সংবাদকর্মী এম আবুহেনা সাগরের মাতা অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের ইবনে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/