সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার বৈষম্য ছিল না। না ছিল শ্রেণি বৈষম্য না ধন বৈষম্য না লিঙ্গ বৈষম্য। সেই ব্যবস্থাকে বলা হত আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা। তারও আগে এই ভারতভূমে যে পরিবার ব্যবস্থা বা যৌথ ব্যবস্থা চোখে পড়ে সেখানে নারী-পুরুষের কিংবা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বাড়তি কোনো স্পর্শকাতরতা ছিল না। ভাইয়ের সাথে বোনের অথবা বর্তমানে কল্পনাই করা যায় না এমন সম্পর্কের মানুষদের মধ্যেও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠতো অনায়াসে। পারস্পরিক আবেদনে সাড়া দেয়া ছিল তখন প্রকৃতিগত অকৃত্রিম ব্যাপার।
কিন্তু আজকের দুনিয়ায় যান্ত্রিকতা, কৃত্রিমতা মানুষকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলেও মায়ের পেটের বোনের সঙ্গে বিয়ে করার কথা কেউ ভাবতেই পারেন না। সেটা না পারাই তো স্বাভাবিক। আদিম যৌথ জীবন থেকে অগ্রসরমানতার পথে প্রয়োজনের তাগিদে ক্রমশই মানুষের মধ্যে ব্যক্তিতান্ত্রিকতা বিস্তার লাভ করে। তার পর ধীরে ধীরে ভারী হয়ে আসে বিভেদ আর বৈষম্যের আকাশ।
তবে কম অংশে হলেও আজও কেউ কেউ অতীতকে আঁকড়ে রাখতে চায়। শিক্ষার হার কম থাকায় এখনো বিশ্বের কোথাও কোথাও চোখে পড়ে যুথবদ্ধ সমাজব্যবস্থা। সেই সমাজে হয়তো এখনো ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে কিংবা শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে বাধাবন্ধহীনভাবে।
আমাদের তথাকথিত আধুনিক সমাজে মায়ের পেটের না হলেও ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ের বিষয়টি প্রায়শই দেখা যায়। কিন্তু এ কেমন বিবাহ ব্যবস্থা! যেখানে খুড়তুতো, পিসতুতো, মাসতুতো, মামাতুতো এ রকম তুতো বোনকেই বিয়ে করেন যুবকরা। অবশ্য বিয়ের আগে অবশ্য এক বছর সংসার করতে হয়। আর তারপর পছন্দ না হলে বোনকে ছেড়েও দেয়া যায়। আর এই একবছর সহবাসের ফলে যদি সন্তানের জন্ম হয়েও যায়, তাহলেও বোনকে ছাড়া যায়। তবে নিয়ম মাফিক ভাইকে করতে হয় প্রায়শ্চিত্ত। এ আজব নিয়ম এখনো ঠিকে আছে টোটো নামে ভারতের এক জনজাতির মধ্যে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো জনজাতি টোটো। তাদের মধ্যেই এই বিয়ের প্রাচীন নিয়ম বর্তমান আজও। তবে টোটোদের জনসংখ্যা কমতে কমতে এখন তলানিতে। বর্তমানে টোটোদের জনসংখ্যা ১,৫৭৪। তার মধ্যে পুরুষ ৮১৯ জন ও মহিলা ৭৫৫ জন।
অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার মাদারিহাট ব্লকের টোটোপাড়ায় এই টোটো জনজাতির বাস। টোটোদের মধ্যে শিক্ষিতের হার কম। সেজন্যই নাকি তাদের মধ্যে প্রাচীন এই প্রথা চলে আসছে আজও। নিয়ম অনুযায়ী, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন মেয়েকেই বিয়ে করতে হয় যুবকদের।
কেমন সেই বিয়ের নিয়ম? কোনও টোটো যুবক রাতের অন্ধকারে তার আত্মীয় অর্থাৎ মামার মেয়ে বা পিসির মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে চলে আসেন নিজের ঘরে। তারপর মেয়েটির অর্থাৎ তুতো বোনের বাড়িতে খবর দেয়া হয়, তাদের মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছেন ওই যুবক। এক বছর মেয়েটির সঙ্গে ঘর করার পর যদি যুবকের মেয়েটিকে পছন্দ না হয় কিংবা এক বছর সংসার করার পর যদি মেয়েটির সন্তান হয়, তাহলেও মেয়েটিকে ছেড়ে দিতে পারেন ওই যুবক। এরপর মেয়েটিকে ফের বাপের বাড়ি চলে যেতে হবে। আর যুবককে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় পশুবলি দিয়ে।
সম্প্রতি সুজন টোটো তার মামাতো বোন গোপী টোটোকে মামারবাড়ি থেকে পালিয়ে নিয়ে চলে এসেছেন। একবছর সংসার করার পর গোপীকে বিয়ে করেছেন সুজন। কিন্তু কেন? অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, টোটোদের মধ্যে শিক্ষিতের হার কম। সেই কারণে প্রাচীন নিয়ম চলে আসছে আজও।
তবে টোটো কল্যাণ সমিতির প্রধান গোকুল টোটো বলেন, ‘ইদানিং ছবিটা বদলাচ্ছে। যারা লেখাপড়া শিখছেন তাদের অনেকেই এখন এ রীতি মানছেন না। ভিন জাতিতে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে।’
সূত্র:banglamail24.com
You must be logged in to post a comment.