মুকুল কান্তি দাশ, লামা থেকে ফিরে :
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় অন্যতম খনিজ সম্পদ ‘কয়লা খনি’ আবিস্কারের পর ৩৫ বছর অতিবাহিত হতে চললেও ওই খনি প্রশাসনের দৃষ্টি কাড়েনি। ফলে, সরকারী নিয়ন্ত্রণে আসেনি বিশাল খনিটি। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। সরকারের নজরে না পড়ায় সংস্কার হয়নি। এই কয়লা খনিটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এনে সংস্কার করে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাবে। পাশাপাশি এই খনি থেকে আহরিত কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেও ব্যবহার করা সম্ভব হবে। লামার দূর্ঘম পাহাড়ি ছৌলুম ঝিরি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ধান পায় কয়লা খনিটির। পৌরসভা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে কয়লা খনিটির অবস্থান।
সরজমিন ঘুরে ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সন্ধান পাওয়া কয়লা খনিটি অন্তত ১১ হাজার একর পাহাড়ি এলাকার ঝিরি জুড়ে রয়েছে। ওই ঝিরি থেকে পাহাড় চুপসে আসা এবং বৃষ্টির পানির সাথে কয়লা ভাটির দিকে ভেসে আসে। ওই কয়লা সংগ্রহ করে স্থানীয় অনেক পরিবার জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে। আবার কেউ কেউ বস্তায় ভরে বিভিন্ন জনকে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ১৯৮১-৮২ সালের দিকে নিকটবর্তী নারী-পুরুষরা পাহাড় থেকে কাঠ-বাঁশ ও লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পায় কয়লা খনিটি। ছৌলুম ঝিরিতে কয়লা পাওয়ার ঘটনাটি এককান দুকান করে স্থানীয় সকল বাসিন্দাদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন শুনলেও আমলে নেয়নি বিশাল প্রাপ্তিটি। নদী পথ দিয়ে ছৌলুম ঝিরিতে গেলেই দেখা যাবে ঝিরিতে ও আশপাশের পানিতে কয়লা ভাসছে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে এই কয়লা। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কয়লার অস্তিত্বের দেখা মেলে।
রুপসীপাড়া বাজারের প্রবীণ ব্যক্তি মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৬০) বলেন, এই কয়লা খনির পাশেই আমার জমি রয়েছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খনিটি পরিদর্শন করে। ওই পরিদর্শনটিম জানিয়েছিল খনির কয়লার মান অত্যন্ত ভাল ও জাতীয় মানের। শুধুমাত্র অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কয়লা খনিটি সরকারী ব্যবস্থাপনায় বা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রুপসীপাড়া পর্যন্ত পিচঢালা রাস্তা নির্মিত হয়েছে এবং মংপ্রু পাড়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। মংপ্রু পাড়া থেকে খনির দূরত্ব ১ কি.মি.। আর সামান্য সড়ক নির্মাণ হলেই উক্ত খনি থেকে কয়লা আহরণ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারী ব্যবস্থাপনায় নানা খাতে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তাছাড়া পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি এলাকার বেকার শত শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ছৌলুম ঝিরি এলাকার মোঃ শফিকুল আলম (৬৫) জানান, ২০১৩ সালের জুলাই মাসের দিকে তেল গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাপেক্স কর্মকর্তারা খনিটি পরিদর্শন করেন।
বাপেক্স কর্মকর্তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন এলাকাবাসীকে। সংরক্ষিত কয়লার খনিটি সরকারী উদ্যোগে অধিগ্রহণ করে কয়লা আহরণের কাজ শুরু করতে তিনি অনুরোধ করেন। তাছাড়া ভাসমান কয়লা হওয়ায় অন্যান্য খনি থেকে উক্ত খনিতে কয়লা আহরণের খরচ কম হবে বলেও জানান।
রুপসীপাড়ার ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) নাংক্রাত মুরুং বলেন, খনিটি এখনো সুরক্ষিত আছে। তাছাড়া উক্ত জায়গাটি খাস। মৌজা হেডম্যান ও কারবারীদের নিয়ে আমরা খনিটি দেখভাল করছি।
রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, কয়লার খনিটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হলে একদিকে বিপুল অংকের খনিজ সম্পদ আহরণ করে সরকারী কোষাগার চাঙ্গা হবে। অন্যদিকে এলাকার শত শত বেকার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: খালেদ মাহমুদ বলেন, বিস্তারিত আমার জানা নেই। তবে কিছুদিন পূর্বে একটি আদেশপত্র পেয়েছিলাম অনুসন্ধান টিম আসবে তাদের সহায়তা করতে। এই আদেশ পেয়ে প্রশাসনিকভাবে আমরা প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও অনুসন্ধান টিম আসলে সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেছি। এরপরও ওই কয়লা খনির বিস্তারিত জানতে আমি নিজেই কয়েকদিনের মধ্যে সরজমিন ছৌলুম ঝিরিতে যাবো।
You must be logged in to post a comment.