সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / সাংস্কৃতিক ও বিনোদন / সেলাই ছাড়া সাদা কাপড়ে আইয়ুব বাচ্চু

সেলাই ছাড়া সাদা কাপড়ে আইয়ুব বাচ্চু

আইয়ুব বাচ্চু। বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের এক কিংবদন্তির নাম। ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগ থামিয়ে দিলো তার বর্ণাঢ্য পথচলা। গিটার বাজিয়ে আর কখনোই শ্রোতা হৃদয়ে ঢেউ তুলবেন না। আর কখনোই গাইবেন না ‘দুঃখী আমার মন ভরেছে দুঃখে, সুখের আশাই করলাম শুধু মিছে দুনিয়াতে। আপন আপন করে সবাই, আপন কেউ নাই।’

নিজের গানের মতোই কোটি ভক্তকে পর করে পাড়ি জমালেন পরপারে। হাসি, গান আর কথার মুখরতা ভেঙে নীরবতাকে সঙ্গী চলে গেলেন ব্যান্ড জগতের তুখড় জনপ্রিয় এই শিল্পী।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে মগবাজারের নিজ বাসায় হঠাৎ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যান তিনি। পরে, প্রতিবেশি এক জন ডাক্তার তাকে জানা গেছে সকালের দিকে বাসায় অসুস্থ বোধ করার পর দুই সহকর্মী তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগেও অসুস্থ হলে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

২০০২ সালে তিনি গেয়েছিলেন, ‘সেলাই ছাড়া সাদা কাপড়, হবে সবার একই সাজ। থাকবে না রে রঙিন বোতাম, রঙিন সুতার কারুকাজ।’ আজ সেই সেলাই ছাড়া সাদাকাপড়ে স্কয়ার হসপিটালের বেডে তিনি। তিনি গেয়েছিলেন, ‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাবো দূরে, বহুদূরে…’ রুপালি গিটার এখন কেবলই অপেক্ষায় থাকবে তার আঙুলের ছোঁয়ার।

তার মৃত্যুর খবর পাবার পরপরই তার আত্মীয়স্বজনসহ সঙ্গীতাঙ্গনের শিল্পীরাও ছুটে আসেন স্কয়ার হাসপাতালে।

কান্না-হাসি, সুখ-দুঃখ আর অভিমানের পর্ব এখানেই শেষ। কথা যেখানে পৌঁছুতে পারে না, সুর সেখানেও পৌঁছায়। সেই সুরে শ্রোতামনে কখনো ভর করেছে বিষাদ, কখনো অপূর্ণতা পেয়েছে হৃদয়ের কথা। কখনো বা ভালোবাসায় মন ছুঁয়েছে মন। কোটি ভক্তের হাততালির তিনিই উপলক্ষ, মঞ্চের সামনে থাকা কোটি ভক্তের রাগ আর অনুরাগের তিনিই স্রষ্টা, তিনি রকস্টার, তিনিই আইয়ুব বাচ্চু।

কিংবদন্তী এ শিল্পী ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে পড়াশুনা করা আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীত ক্যারিয়ার শুরু হয় ব্যান্ডদল ফিলিংসের মাধ্যমে, ১৯৭৮ সালে। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তাঁর শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি (AB) নামেও পরিচিত। তাঁর ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।

পরিবারের তেমন কেউ গানের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তার ঝোঁক। আধুনিক-লোকগীতি-ক্ল্যাসিক্যালের পাশাপাশি শুনতেন প্রচুর ওয়েস্টার্ন গান।

গানের প্রতি নিজের এই ভালোবাসা সম্পর্কে তিনি বলেন, গান শুনতাম প্রচুর। নিজেও একসময় গাইতে চেষ্টা করলাম। স্কুলে পড়াকালীন চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। আর তখন থেকেই ওয়েস্টার্ন মিউজিক ভালো লাগতো। শুরু করি গিটার চর্চা। জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুর হয়ে ওঠেন আমার অনুপ্রেরণার উৎস। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে একটা ব্যান্ডদল গড়ি। প্রথমে ব্যান্ডের নাম রাখা হয় ‘গোল্ডেন বয়েজ’, পরে নাম পাল্টিয়ে রাখা হলো ‘আগলি বয়েজ’ বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাট নানা অনুষ্ঠানে আমরা এই ব্যান্ডদল নিয়ে গান করতাম।

তিনি একাধারে গায়ক, লিডগিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। এল আর বি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আছেন উপরের সারিতে।

তাঁর কন্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’ গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি অবশ্য খুব একটা সফলতা পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে।

১৯৯১ সালে বাচ্চু এল আর বি ব্যান্ড গঠন করে। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম এল আর বি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম সুখ ও তবুও বের হয়। সুখ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ উল্লেখযোগ্য গান। ‘চলো বদলে যাই’ বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই।

১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’ এটি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামগুলোর একটি। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’।

একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহরে প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে গাওয়া এটিই তার প্রথম গান।

২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম ‘বলিনি কখনো প্রকাশিত।’ ২০১১ সালে ১০টি গান নিয়ে এল আর বি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫) বাজারে আসে। এই অ্যালবামেও আছে ১০টি গান। গানের কথা লিখেছেন সাজ্জাদ হোসাইন এবং সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজে।

গিটারে তিনি সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুনভাবে অণুপ্রাণিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন।

তিনি ২০১০ সালে ঈদের জন্য নির্মিত ট্রাফিক সিগন্যাল ও হলুদ বাতি শিরোনামের নাটকে অভিনয় করেন।

সূত্র:somoynews.tv;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/10/Entertainment-Mozib.jpg

মুক্তির অপেক্ষায় ‘মুজিব’

  অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/